সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ০১:২৯:২৪

যা দেখে চমকে গেলেন গবেষকরা, যা মিলেছে!

যা দেখে চমকে গেলেন গবেষকরা, যা মিলেছে!

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : গ্রিসের থেসালি অঞ্চলের মেটেওরায় প্রাচীন থিওপেট্রা গুহায় হাজার বছর আগে মানুষের বসবাস ছিলো বলে এতাদিন মনে করতেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। কিন্তু, সম্প্রতি সে গুহার রেডিয়োকার্বন নমুনা পরীক্ষার ফল দেখে চমকে গেছেন গবেষকরা। সেখানেই মিলেছে মানুষের তৈরি প্রাচীনতম পরিকাঠামো। নমুনায় এক লাখ ৩০ হাজার বছর আগের মানুষের অস্তিত্বের প্রমাণ মিলেছে। প্রত্নতাত্ত্বিকরা জেনেছেন, মধ্য প্রস্তর যুগ থেকে নব্য প্রস্তর যুগ পর্যন্ত টানা এই গুহায় ছিলো মানুষের বাস। থিওপেট্রা গুহা খননের পর সেখান থেকে মিলেছে সমাধি, পাথরের তৈরি অস্ত্র, বাসন, পশুর হাড়।

প্রত্নতাত্ত্বিকদের ধারণা, নিয়ান্ডারথাল (আদিম মানব) প্রজাতির মানুষের বাস ছিলো এই থিওপেট্রা গুহায়। আজকের মানুষের থেকে অনেকটাই অন্যরকম ছিলো তারা। তাদের ভুরুর জায়গা ছিলো অনেকটাই উচু। নাক প্রসারিত। মনে করা হয়, প্রায় চার লাখ ৩০ হাজার বছর আগে পৃথিবীর বুকে তাদের বাস ছিলো।

থিওপেট্রার রেডিয়োকার্বন পরীক্ষার পর গবেষকরা মনে করছেন, এটি মানুষের তৈরি পৃথিবীর প্রাচীনতম গুহা। তবে নিয়ান্ডারথাল প্রজাতির মানুষ পাহাড় কেটে এই গুহা তৈরি করেনি। তারা সম্ভবত ছোট একটি অংশে বসবাস শুরু করে। পরবর্তীকালে আধুনিক মানুষ পাহাড় কেটে কেটে এই গুহার বিস্তৃতি বৃদ্ধি করেছে।

মেটেওরায় চুনাপাথরের তৈরি পাহাড়ের উত্তর-পূর্ব ঢালে রয়েছে এই গুহা। পাহাড়টির উচ্চতা ১০০ মিটার। প্রায় সাড়ে ৬ কোটি বছর আগে তৈরি হয়েছিল পাহাড়টি। এই গুহার প্রবেশপথে দাঁড়িয়ে দেখা যায় লেথাইওস নদী, উপত্যকা, থিওপেট্রা গ্রাম।

প্রায় ৫০০ বর্গমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত আদিম এই গুহা। গুহার প্রবেশপথ বিশাল চওড়া। তাই গুহার ভেতর অনেক দূর পর্যন্ত আলো প্রবেশ করতে পারে। ঠিক সে কারণেই এই গুহায় লাখ বছর আগে বাস করতে শুরু করেছিল মানুষ।

১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দে এই গুহার খননের কাজ শুরু হয়। চলে ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। এর পর এই গুহা থেকে উদ্ধার হয় গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক সামগ্রি। খুলে যায় অতীতের একের পর এক দরজা।

স্থানীয় পশুচারণকারীরা পশুদের অস্থায়ী আশ্রয় হিসাবে এই থিওপেট্রা গুহাকে ব্যবহার করতেন। মাঝেমধ্যেই গুহায় ভেড়া, গরু বেঁধে রেখে বাড়ি চলে যেতেন তাঁরা। সেভাবেই প্রথম প্রত্নতাত্ত্বিকদের নজরে আসে গুহাটি। তার পর শুরু হয় খননকাজ।

খনন করতে গিয়েই ইতিহাসবিদেরা জানতে পারেন, এই গুহায় প্রায় লাখ বছর আগেও বাস করত মানুষ। যুগের পর যুগ এখানেই ঘর-সংসার করেছে তারা। ক্রমে জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে পরিত্যক্ত হয় গুহাটি।

গুহার প্রত্নতাত্ত্বিক স্তর পরীক্ষা করে দেখা গেছে, জলবায়ুর অনেক পরিবর্তন সয়েছে এই গুহা। এক সময় ছিলো প্রবল গরম। তার পর এক সময় ছিল প্রবল ঠান্ডা। এ সব কারণেই গুহার জনসংখ্যা কমেছে। বসের অযোগ্য হয়েছে।

এই গুহা থেকেই মিলেছে মানুষের তৈরি প্রাচীনতম পরিকাঠামো— একটি পাথরের প্রাচীর। গ্রিসে তো বটেই, গোটা পৃথিবীতেও সম্ভবত এটিই প্রাচীনতম। আধুনিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে জানা গেছে, এই প্রাচীর ২৩ হাজার বছর আগে তৈরি হয়েছে।

প্রত্নতাত্ত্বিকেরা মনে করেন, গুহার প্রবেশপথ আড়াল করার জন্যই তৈরি করা হয়েছিল সেই প্রাচীর। সেই প্রাচীরের অনেকটা অংশ ভেঙে গেছে। এই গুহার নরম মাটির মেঝে থেকে তিনটি পায়ের ছাপও উদ্ধার হয়েছে।

প্রত্নতাত্ত্বিকরা জানিয়েছেন, এগুলি নিয়ান্ডারথাল প্রজাতির শিশুদের। এই পায়ের ছাপ যাদের, তাদের বয়স দুই থেকে চার বছরের মধ্যে ছিলো। মধ্য প্রস্তর যুগে এই গুহায় বাস করতো তারা।

২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে এই গুহা দর্শকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল। যদিও এক বছর পর যখন ওই প্রাচীনতম প্রাচীর আবিষ্কার হয়, তখন গুহা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পরে আবার এখানে প্রবেশ করতে পারতেন দর্শকেরা। যদিও ধস নামার আশঙ্কায় তা ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এখন আবার এই গুহায় প্রবেশের অধিকার রয়েছে দর্শকদের। সূত্র: আনন্দবাজার

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে