এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : গত কয়েক বছর ধরে ড্রাগন ফল বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিদেশি এই ফল এখন উৎপাদনও হচ্ছে দেশে। কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ড্রাগন ফলের আলাদা চারটি প্রজাতিও উদ্ভাবন করেছে।
দেশীয় ভাবে উৎপাদন বাড়ার কারণে দামও কমে এসেছে এক সময়ের দামী এই ফলটির। তবে বাজারে চাহিদা বাড়তে থাকায় এর উৎপাদনে ব্যবহার করা হচ্ছে টনিক যা স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
যদিও দীর্ঘ মেয়াদে এই টনিক খুব একটা লাভ দিচ্ছে না। কিন্তু, তাৎক্ষণিক মুনাফার আশায় অনেকেই এই টনিক ব্যবহার করছেন।
এ বিষয়ে নাটোরের ড্রাগন চাষি মুন্না বলেন, এই টনিক সম্ভবত ভারত থেকে আসে। চুয়াডাঙ্গা, কালীগঞ্জের দিকে এই টনিক বেশি ব্যবহার হয়।
কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ফল বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. উবায়দুল্লাহ কায়ছার বলেন, সীমান্ত এলাকার কিছু কৃষক এই টনিক ব্যবহার করছে।
টনিকটা হচ্ছে এক ধরনের হরমোন। এটা গাছে ব্যবহার করলে তার বৃদ্ধি বেশি ও দ্রুত হয়। এই হরমোনটা বাহির থেকে আসছে। এটা আমাদের সরকারিভাবে অনুমোদিত না।
ড্রাগন প্রজাতি উদ্ভাবনের সাথে জড়িত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও জার্মপ্লাজম সেন্টারের পরিচালক ড. মো. মোক্তার হোসেন বলেন, ড্রাগন ফল উৎপাদনের জন্য যে টনিক ব্যবহার করা হচ্ছে তার নাম হচ্ছে জিএ৩ বা জিবারেলিক এসিড থ্রি। এটি মূলত গ্রোথ হরমোন। তবে টনিক হিসেবে যেটি ব্যবহার করা হয় সেটিতে হরমোন ছাড়াও কিছু উপাদান মিশ্রিত করা হয়।
বাংলাদেশে শুধু ড্রাগন ফল নয়, মূলা উৎপাদনেও এই টনিক ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে মূলার উৎপাদনের সময় অন্তত ২০ দিনের মতো এগিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে।
টনিক ব্যবহার করে উৎপাদিত ড্রাগন চেনার উপায়:
টনিক ব্যবহার করে উৎপাদিত ড্রাগন ফল দেখে চেনার কিছু উপায় রয়েছে। এগুলো হচ্ছে-
১. প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত ড্রাগন ফলের ওজন আড়াইশ থেকে সর্বোচ্চ তিনশ গ্রাম। টনিক ব্যবহার করে উৎপাদিত ড্রাগন ফলের ওজন ৩০০ গ্রাম থেকে শুরু করে ৯০০ গ্রাম।
২. টনিক ব্যবহার করে উৎপাদিত ফলের বাহ্যিক আকার উদ্ভট হয়ে যায়।
৩. পুরো ফলটি এক রঙা থাকে না। পার্পেল বা লাল রঙের সাথে সবুজ রঙের মিশ্রণ থাকে। এক পাশে বা অন্তত এক তৃতীয়াংশ সবুজ থাকে। কারণ পুরো এক রঙের হওয়া পর্যন্ত গাছে রাখা হলে সেটি পঁচে যায়। আর এক সাথে চার-পাঁচদিনের মধ্যে বিক্রি না হলে পুরোটাই হলুদ রঙের হয়ে যাবে।
৪. টনিক ব্যবহার করে উৎপাদিত ড্রাগন ফল হবে পানসে। মিষ্টি একেবারেই হবে না। এছাড়া স্বাদেও বেশ ভিন্ন হবে।
স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি আছে কি?
অধ্যাপক ড. মো. মোক্তার হোসেন বলেন, স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার বাইরে কৃত্রিমভাবে উৎপাদিত যেকোনো পণ্যেরই স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকে। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিভিন্ন রাসায়নিক নিরাপদ উপায়ে ব্যবহারের মাত্রা ঠিক করে দেয়। কিন্তু বাংলাদেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটা মানা হয় না। হরমোন ব্যবহারেরই কোন অনুমোদন বাংলাদেশে নেই।
কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ফল বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. উবায়দুল্লাহ কায়ছার বলেন, এই হরমোন মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার করা হলে এর একটা স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে।