শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪, ১০:৩১:৩০

পেঁয়াজ ঘরেই সংরক্ষণ করা যাবে ৮ মাস, গবেষণায় সফল

 পেঁয়াজ ঘরেই সংরক্ষণ করা যাবে ৮ মাস, গবেষণায় সফল

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা)-এর উদ্যানতত্ত্ব বিভাগ পেঁয়াজ, রসুন, আলু, আম, কলা, পটল, করল্লাসহ অন্যান্য পঁচনশীল উদ্যানতাত্তিক ফসলে গামা রশ্মি প্রয়োগের মাধ্যম সংরক্ষণকাল বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন গবেষণা করে সাফল্য পেয়েছে। বিনার মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন।

গবেষক দলে ছিলেন- বিনার মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম, উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. রফিকুল ইসলাম ও ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. নাসরীন আখতার।

বিনা’র উদ্যানতত্ত্ব বিভাগ ২০২০ সাল হতে পোস্টহারভেস্ট গবেষণারে বিভিন্ন ডোজ গামা রশ্মি প্রয়োগ করে বিভিন্ন পরীক্ষণ করেছে এবং বিভিন্ন ফসলের সংরক্ষণের জন্য গামা রেডিয়েশন ডোজ নির্দিষ্ট করেছে।

পেঁয়াজের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে, ১০০ গ্রে. ডোজে গামা রশ্মি প্রয়োগের ফলে শতভাগ পেঁয়াজের গাছ গজানো বন্ধ হয়েছে, ফলে পেঁয়াজের ওজনহ্রাস ও পঁচন কম হচ্ছে এবং পেঁয়াজের গুণগতমান বজায় রেখে নিজ ঘরে কক্ষ তাপমাত্রায় ৭-৮ মাস সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে।

পরীক্ষণটি ভালভাবে যাচাই করার জন্য ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে বিভিন্ন জেলায় কৃষকের নিজ ঘরে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি চাষকৃত পেঁয়াজের দুটি জাত তাহেরপুরী ও লালতীর কিং নির্দিষ্ট মাত্রায় (১০০ গ্রে.) গামা রশ্মি প্রয়োগ করে এবং রেডিয়েশন প্রয়োগ ছাড়া পেঁয়াজকে জুলাই ২০২৩ থেকে জানুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত মাঁচায় সংরক্ষণ করা হয়। পরীক্ষণের ফলাফলে দেখা যায় যে, গামা রশ্মি প্রয়োগের ফলে পেঁয়াজের দুটি জাতই গাছ গজানো সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়েছে, পঁচার হার কম হয়েছে এবং ওজন মোটামুটি ঠিক আছে। অন্য দিকে যেসব পেঁয়াজে রেডিয়েশন প্রয়োগ করা হয় নাই সেখানে শতভাগ গাছ গজিয়েছে, ওজনহ্রাস ও পঁচন অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।

পাবনা জেলার সাথিয়া উপজেলায় পেঁয়াজ চাষী আনন্দ সাহা জানান, তারা উক্ত প্রযুক্তি দেখে খুবই আশাবাদী, এমন প্রযুক্তির সুবিধা যদি যদি কৃষক পর্যায়ে পাওয়া তাহলে তারা খুব সহজে দীর্ঘ সময় নিজ ঘরে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারবে, প্রতিবছর হাজার হাজার টাকার পেঁয়াজ পঁচে যাবার লোকসান থেকে রেহাই পাবে এবং কৃষকেরা পেঁয়াজ চাষে আরও উৎসাহিত হবে।

ঈশ্বরদী উপজেলার চাষী মতিউর রহমান জানান, পরীক্ষণ শেষে তারা নিজ ঘরে রান্নার কাজে পেঁয়াজ ব্যবহার করছে এবং পেঁয়াজের স্বাদ, গন্ধ ও ঝাঁঝ অক্ষুন্ম আছে।

বিনা উপকেন্দ্র রংপুর এর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আলী জানান যে, পেঁয়াজ চাষীরা এ প্রযুক্তি পাওয়ার জন্য খুবই আগ্রহী।

কৃষকদের কথা মাথায় রেখে বানজ্যিকভাবে রেডিয়েশন প্রয়োগ করার জন্য বিশ্বব্যাংকের পার্টনার প্রকল্পের আওতায় ১১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বিনা আঞ্চলিক গবেষণা কেন্দ্র, গাজীপুরে গামা সেন্টারে স্থাপন করার কাজ হাতে নেয়া হয়েছে।

এ সেন্টারে গামা ইরাডিয়েটর দিয়ে কম খরচে পেঁয়াজ, রসুন, আদা, আলু, আম, কলা, অন্যান্য সবজী ও মসলাসহ পঁচনশীল উদ্যানতাত্ত্বিক ফসল ও প্রক্রিয়াজাত কৃষি পণ্য যেমন জ্যাম, জেলি, আচার, সস, জুস ইত্যাদিতে রেডিয়েশন প্রয়োগ করে দীর্ঘমেয়াদী সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে