এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : প্রতি বছর বর্ষাকালে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে বৃষ্টি হলেই কৈ মাছ ডাঙায় উঠে আসার দৃশ্য চোখে পড়ে। ঘটনাটি নিয়ে অনেকের রয়েছে কৌতূহল। গ্রামবাংলার লোককথায় এর নানা ব্যাখ্যা থাকলেও বৈজ্ঞানিকভাবে এর পেছনের কারণ কী তা জানা প্রয়োজন।
কৈ মাছ ‘ক্লাইম্বিং পার্চ’ নামেও পরিচিত।
এদের শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য বিশেষ একটি অঙ্গ (ল্যাবিরিন্থ অর্গান) রয়েছে, যা এদের বাতাস থেকে সরাসরি অক্সিজেন গ্রহণ করতে সহযোগিতা করে থাকে। এই বৈশিষ্ট্যের কারণে কৈ মাছ অল্প অক্সিজেনযুক্ত পানিতেও বেঁচে থাকতে পারে। এমনকি পানি ছাড়াও লম্বা সময়ের জন্য ডাঙায় চলাচল করতে সক্ষম। সাধারণত, খাল-বিল, পুকুর এবং নিচু জলাভূমিতে কৈ মাছের বসবাস।
বিশেষজ্ঞরা কৈ মাছের বৃষ্টিতে ডাঙায় উঠে আসার পেছনে কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ উল্লেখ করেছেন এর মধ্যে রয়েছে অক্সিজেনের অভাব, নতুন আবাসস্থলের সন্ধান, প্রজনন, প্রাকৃতিক প্রবণতা ও পরিবেশগত প্রভাব।
বৃষ্টির সময় জলাশয়ের পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যেতে পারে। দীর্ঘ সময়ের জন্য বৃষ্টি হলে এবং পানির উপরিতলে ভাসমান পাতা বা অন্যান্য জৈব পদার্থ থাকে, তাহলে পচন প্রক্রিয়ার কারণে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়। কৈ মাছ যেহেতু বাতাস থেকে অক্সিজেন নিতে পারে, তাই অক্সিজেনের অভাবে তারা ডাঙায় উঠে আসে।
বৃষ্টির কারণে নিচু এলাকা প্লাবিত হয় এবং নতুন নতুন অগভীর জলাশয়ের সৃষ্টি হয়। এই সুযোগে কৈ মাছ নতুন আবাসস্থল এবং খাদ্যের সন্ধানে ডাঙায় এসে এক জলাশয় থেকে অন্য জলাশয়ে চলে যায়। এদের শারীরিক গঠন এবং ল্যাবিরিন্থ অর্গান এই স্থানান্তরে সহায়তা করে।
এ ছাড়া কৈ মাছের প্রজনন ঋতু বর্ষাকাল। বৃষ্টির সময় তারা প্রজননের জন্য উপযুক্ত স্থান খুঁজে বের করতে ডাঙায় উঠে আসে।
নতুন সৃষ্ট অগভীর জলাশয়গুলো ডিম পাড়ার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে। বৃষ্টির পর ডাঙায় কেঁচো, পোকামাকড় এবং অন্যান্য ছোট প্রাণী ভেসে ওঠে। কৈ মাছ এই সহজলভ্য খাদ্যের সন্ধানেও ডাঙায় উঠে আসতে পারে।
বিজ্ঞানীদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করেন, কৈ মাছের ডাঙায় উঠে আসার বিষয়টি তাদের একটি প্রাকৃতিক প্রবণতা, যা তাদের বিবর্তনের অংশ। প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার জন্য তারা এই ক্ষমতা অর্জন করেছে।
এ ছাড়া কৈ মাছের ডাঙায় উঠে আসা পরিবেশের একটি স্বাভাবিক ঘটনা হলেও, এর পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেলে তা পরিবেশগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত হতে পারে। জলাশয়ের দূষণ, অপরিকল্পিত মৎস্য শিকার এবং প্রাকৃতিক আবাসস্থল সঙ্কুচিত হওয়ায় এই ধরনের ঘটনার কারণ হতে পারে।
গ্রামের মানুষ এই সময় ডাঙায় উঠে আসা কৈ মাছ ধরে থাকেন, যা তাদের আমিষের চাহিদা পূরণে সহায়তা করে। তবে, এই প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াকে সম্মান জানানো এবং কৈ মাছের প্রজনন ক্ষেত্রগুলোকে রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। কৈ মাছের এই আচরণ প্রকৃতি ও পরিবেশের সঙ্গে তার গভীর সম্পর্কের এক অনন্য উদাহরণ।