মঙ্গলবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৮:৩৯:১৫

পৃথিবীর সবচেয়ে শীতল গ্রাম, আঁতকে উঠা জীবন যাপন !

পৃথিবীর সবচেয়ে শীতল গ্রাম, আঁতকে উঠা জীবন যাপন !

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক:আমাদের দেশে শীত মানে ব্যতিক্রমী আমেজ, চারদিকে পিঠা খাওয়ার ধুম । কিন্তু কোন কোন সময় যদি বেশী  মাত্রার শীত পড়ে তাতেই অনেকে কাবু হয়ে পড়েন। কিন্তু একবার ভাবুন তো! যদি এই শীতটা আরও অনেক হাড় কাঁপানো হতো? আর থাকত এক, দুই বা তিনটা মাস নয় বরং বছরজুড়ে? ভাবতেই গায়ে খানিকটা কাঁপুনি দিয়ে গেল তো আপনার? তাহলে চিন্তা করুন ওইমিয়াকন গ্রামের মানুষদের কথা। ওইমিয়াকন! পৃথিবীর সবচেয়ে ঠাণ্ডা গ্রামের নাম। রাশিয়ার এই শীতল গ্রামের নাম অনেকে না জানলেও এই গ্রামের প্রতিটি মানুষ হাড়ে হাড়ে জানে ঠাণ্ডা কী জিনিস। ঠাণ্ডা মেরু নামে পরিচিত গ্রামটির জানুয়ারি মাসের গড় তাপমাত্রা মাইনাস ৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যদিও ২০১৩ সালে একবার সেটা নেমে পেঁৗছে গিয়েছিল মাইনাস ৭১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

কেবল জমে যাওয়া ঠাণ্ডা পরিবেশকেই নয়, এখানকার মানুষদের লড়াই করতে হয় আরও অনেক প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে। এই গ্রামের ব্যাটারিগুলো খুব বেশি সময় চলে না। দেখা যায় মোড়ক খোলার খানিক বাদেই নষ্ট হয়ে যায় সেগুলো। এখানকার গাড়িগুলোকে সবসময়ই চালিয়ে রাখতে হয়। তা না হলে রেখে দিতে হয় গরম কোনো জায়গায়। না হলে খুব দ্রুতই নষ্ট হয়ে যায় গাড়িগুলো। তবে সবচেয়ে ঝামেলায় পড়তে হয় এখানকার কম দৃষ্টিসম্পন্ন মানুষদের। চশমার কাচ খানিক বাদেই ঝাপসা হয়ে যায় তাদের। এমনকি বরফ পর্যন্ত জমে যায় কাচে। আর এ সবকিছুই হয় গ্রামটির অত্যধিক ঠাণ্ডার কারণে। হয়তো এসব অসুবিধা থাকা সত্ত্বেও আপনার ইচ্ছা হতে পারে গ্রামটিতে একবার ঘুরে আসার। সে তো আপনি যখন-তখনই বেড়িয়ে আসতে পারেন রাশিয়ার প্রত্যন্ত এই গ্রামটি থেকে। তবে যাওয়ার আগে ভালো করে পরিচিতদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিন। কারণ ওইমিয়াকনে এতটাই ঠাণ্ডা যে, মোবাইলের ব্যাটারিও সেখানে কাজ করে না।
প্রচণ্ড ঠাণ্ডা থাকায় এখানে খুব একটা শস্য উৎপাদন হয় না। ফলে শাকসবজি আর ফলমূলের কোনো রকম উপস্থিতি ছাড়াই নিজেদের খাবারের ব্যবস্থা করতে হয় এখানকার মানুষদের। ওইমিয়াকনবাসীর প্রধান খাবার হচ্ছে মাংস, মাছ ও দুধ। তাদের ফার্ম হাউসগুলো থেকেই এসব খাবার আসে সবসময়। তবে এত কম পরিমাণে ফল বা সবজি খেলেও এখানে অপুষ্টির উপদ্রব একদমই নেই। মাংস নিকটস্থ ফার্ম থেকে এলেও এখানকার স্থানীয় মানুষকে মাছ ধরতে হয় প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করেই। বরফের আস্তরণ ভেদ করে তারপর সেখান থেকে মাছ ধরেন মৎস্য শিকারিরা।
ওইমিয়াকনের বাড়িঘর বেশ অদ্ভুত রকমের দেখতে। এখানকার বাড়িগুলোতে সবসময়ই কাঠ পুড়তে থাকে। আর শৌচাগারগুলো বানানো হয় ঘরের বাইরে। বর্তমানে মোট ৫০০টি ঘর রয়েছে এই গ্রামটিতে। আর এই গোটা গ্রামের মানুষদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য রয়েছে মাত্র একটি দোকান ও একটি পেট্রোল স্টেশন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এখানে মদ্যপানের জন্য একটি বারও রয়েছে। তবে গ্রামটির এই একমাত্র বারটিকে পৃথিবীর সবচেয়ে একা আর নিঃসঙ্গ বার বলে মনে করা হয়। ঠাণ্ডা থেকে বাঁচার জন্য এখানকার মানুষ পোশাক হিসেবে ব্যবহার করে ফার। আর সঙ্গে থাকে শক্ত বুট জুতা।
তবে এমনিতে সবচেয়ে শীতল হলেও গরমকাল এলে খানিকটা কমে যায় এখানকার শীতলতা। আর তখন যে রূপটি এই গ্রামটি ধারণ করে সেটা যে কোনো মানুষের মনকে ভরিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই/

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে