এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : বাংলাদেশে কয়েক শ প্রজাতির সাপ আছে। এর মধ্যে কিছু বিষধর আবার কিছু র্নিবিষ। কিছু সাপ খুব ছোট কিছু আবার ইয়া বড়। এখন বলুন তো দেখি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাপ কোনটি? বোধহয় উত্তরটা সবার জানা—অজগর।
অজগর দেখতে যেমন বিশাল, তেমনি মোটা। অজগর নিয়ে অনেক মিথ আছে গ্রামগঞ্জে। অনেকে ঢেঁকিসাপও বলে। এটা পৃথিবীর অন্যতম বড় সাপ।
মানুষের ধারণা, অজগর মানুষ দেখলেই ধরে গিলে ফেলে। আসলে ব্যাপারটা তেমন নয়। অজগরের কিছু ইন্দোনেশিয়ান প্রজাতি ভুল করে মানুষ খেয়ে ফেলে—মাঝে মাঝে এ খবর মিডিয়া আসে বটে। কিন্তু বাংলাদেশে অজগরের মানুষ খাওয়ার ইতিহাস বিরল।
অজগর খুব শান্ত প্রাণী।
বাংলাদেশে দুই ধরনের অজগর আছে। এর একটির নাম ময়াল বা দেশীয় অজগর। একে ভারতীয় অজগরও বলে, ইংরেজি নাম রক পাইথন। অন্যটির নাম গোলবাহার বা বার্মিজ পাইথন। তবে এটা ভারতীয় অজগরের একটি উপপ্রজাতি।
অজগরের দৈর্ঘ্য ১০ থেকে ১৬ ফুট পর্যন্ত হয়। এদের ওজন আকৃতি ভেদে ৫০-১০০ কেজি হতে পারে।
বাংলাদেশের সুন্দরবন, পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং সিলেট অঞ্চলে অজগর বেশি দেখা যায়। বনাঞ্চল, ম্যানগ্রোভ, এবং জলাভূমি এই সাপের জন্য আদর্শ আবাসস্থল। এরা জলে ও স্থলে সমানভাবে বিচরণ করে। এমনকী গাছে চড়তেও এরা সমান পারদর্শী।
এরা সাধারণত ছোট থেকে মাঝারি আকারের স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি, ইঁদুর এবং কখনো কখনো অন্য সরীসৃপ খায়। অজগর শিকারের জন্য সাধারণত লুকিয়ে থাকে এবং হঠাৎ আক্রমণ করে। অজগর শিকারকে তার শক্তিশালী দেওহ পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলে। তারপর সেটাকে আস্ত গিলে খায়। একবার শিকারের পর দীর্ঘদিন এদের আর খাবারের প্রয়োজন হয় না।
প্রজনন মৌসুমে স্ত্রী অজগর ২০ থেকে ১০০টি ডিম পাড়তে পারে। ডিম থেকে বাচ্চা ফোটাতে প্রায় ২ থেকে ৩ মাস সময় লাগে। এই সময়কালে মা অজগর ডিমগুলোর উপর বসে তা দেয়।
অজগর মানুষের জন্য বিপজ্জনক নয়। এরা আক্রমনাত্মকও নয়। খুব বেশি বিপদে না পড়লে, পেটে ক্ষুধা না থাকলে অন্য প্রাণীদের ঘাটায় না। তবে বড় আকারের অজগর মাঝে মাঝে গবাদি পশু শিকার করে। তাই মানুষ অজগর দেখলেই পিটিয়ে মেরে ফেলে। এ প্রবণতা বন্ধ করা উচিত। কারণ, জীববৈচিত্র ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য অজগর টিকিয়ে রাখা আমাদের দায়িত্ব।
বাংলাদেশে অজগর সংরক্ষণে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, কারণ এদের সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। বন উজাড়, আবাসস্থলের সংকট এবং শিকারিদের কারণে অজগর আজ বিপন্ন। বাংলাদেশের বিভিন্ন সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো অজগরের প্রাকৃতিক আবাসস্থল সংরক্ষণ এবং এদের সংখ্যা পুনরুদ্ধারের জন্য কাজ করছে। সূত্র: আইইউসিএন