এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : আগের মত আর বড় নেই এই পৃথিবী। ছোট হচ্ছে, আয়তনের দিক থেকে না হলেও তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে। হাজার মাইল দূরত্ব সত্ত্বেও মুহূর্তের ব্যবধানে প্রিয়মুখ দেখা আর তার সঙ্গে কথা বলার ব্যবস্থা হয়েছে। প্রয়োজনীয় তথ্যগুলোতে চাইলেই চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাচ্ছে। এমন আরো কত না সুবিধা। এসব ক্ষেত্রে কল্যাণীয়ার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে ইন্টারনেট নামক যোগাযোগ প্রযুক্তি। কিন্তু এটা কেবল একটা দিক। বিপরীতের কালো দিকটিও আছে। এ ইন্টারনেটের ছত্রচ্ছায়াতেই বড় হচ্ছে রাহুর গ্রাস।
সেটা হয়তো একসময় পুরো মানজাতিকেই গিলে ফেলবে। অগ্রসর প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ন্যানোটেকনোলজি ও জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের ভবিষ্যৎ জীবনকে কিভাবে কতটা প্রভাবিত করবে, সেটা নিয়ে গবেষণা করছেন যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব কেমব্রিজের বিজ্ঞানীরা। সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব এক্সিসটেনশিয়াল রিস্ক (সিএসইআর) প্রকল্পের অধীনে চলছে এ গবেষণা। এখানে ভূরাজনীতি, অর্থনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান প্রভাব পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে সরকার পতন আন্দোলন জাগিয়ে তোলা, সাইবার আক্রমণের মাধ্যমে পুরো একটা কার্যকর ব্যবস্থা ধসিয়ে ফেলা, বৃহত্তর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো সাইবার আক্রমণের মাধ্যমে জিম্মি করে ফেলা- ইন্টারনেটের বহুল ব্যবহারের একেকটি দিক। এসব কার্যক্রম বিশ্ব অর্থনীতিকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। প্রভাবিত করতে পারে মানুষের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা আর দৈনন্দিন জীবনযাত্রা। এমনকি অনলাইনভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো মানুষের আচরণ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। অথচ আইন দিয়েও সব সময় সেটা করা যায় না।
দেখা গেছে, সাইবার জগতের মাত্র ২০ শতাংশ জনগণের সামনে উন্মোচিত। বাকি ৮০ শতাংশ আসলে অন্ধকারাচ্ছন্ন। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ইন্টারনেট ব্যবহার করে চলছে এ অন্ধকার কার্যক্রম। এই অন্ধকার দিকটি ব্যবহার করে রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল অঞ্চলের মানুষরা তাদের জীবনে পরিবর্তন আনতে পারে। আবার চাইলে ত্রাসের রাজত্বও তৈরি করা সম্ভব। ভূরাজনীতিতে ইন্টারনেটের ব্যবহার যেভাবে বাড়ছে তাতে সাইবার সন্ত্রাসই হয়ে উঠতে পারে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মূল হোতা। এমন আশঙ্কাও তীব্র হচ্ছে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে।
পৃথিবীতে মারাত্মক কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা মহাজাগতিক বস্তুকণার আঘাতে আমরা ধ্বংস হয়ে যেতে পারি। একই সঙ্গে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নে ফাঁদে পড়ে আমরা নিজেরাই নিজেদের ধ্বংসের কারণ হতে পারি। তেমন আশঙ্কাও কম নয়। হতে পারে সেটা পারমাণবিক যুদ্ধ ও যুদ্ধোত্তর পরিবেশ বিপর্যয়। আবার গুটিকয়েক ভয়ংকর মানুষের হাতে সবচেয়ে অগ্রসর প্রযুক্তি কুক্ষিগত হওয়ার ফলেও সেই ধ্বংস অনিবার্য হয়ে উঠতে পারে। ইন্টারনেট হতে পারে এর মূল মাধ্যম। তাই সাইবার বিপর্যয় ঠেকাতে এখনই প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করা জরুরি বলে মনে করেন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানীরা। এই সময়ের অন্যতম তাত্ত্বিক পদার্থবিদ স্টিফেন হকিং ও এলোন ম্যুস্কের মতো খ্যাতিমান প্রকৌশলীও রয়েছেন তাদের মধ্যে। -ডেইলি মেইল
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি