শুক্রবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৫, ০৪:৪৬:৫৪

এক ভয়াবহ ভূমিকম্পে জন্ম হয়েছিল আজকের সেন্টমার্টিন দ্বীপ

এক ভয়াবহ ভূমিকম্পে জন্ম হয়েছিল আজকের সেন্টমার্টিন দ্বীপ

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন আজ শান্ত নীল জলরাশি, বালুময় সৈকত আর স্বর্গীয় সৌন্দর্যের জন্য পরিচিত। কিন্তু এই নয়নাভিরাম দ্বীপটির জন্মকথা অনেকটাই নাটকীয় এক ভয়াবহ ভূমিকম্পের মধ্য দিয়ে রাতারাতি জেগে উঠেছিল এটি।

ভূতত্ত্ববিদদের গবেষণায় জানা গেছে, আজকের এই দ্বীপটি রাতারাতি জেগে উঠেছিল আজ থেকে প্রায় ২৬৩ বছর আগে ১৭৬২ সালে। ওই বছরের ২ এপ্রিলের এক ভয়াবহ ভূমিকম্পে সৃষ্টি হয়েছিল সেন্টমার্টিনের।

সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রকাশ পেয়েছে, ১৭৬২ সালের ২ এপ্রিলের সেই প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পই বর্তমান সেন্টমার্টিন দ্বীপের জন্মদাতা। বিজ্ঞান বিষয়ক আন্তর্জাতিক জার্নাল সাইন্স ডাইরেক্ট-এ প্রকাশিত ‘Microatolls document prior earthquakes along the south-east coast of Bangladesh’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়,ভারত ও মিয়ানমার টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে সৃষ্ট এক শক্তিশালী প্লেটচ্যুতির ফলেই দ্বীপটি ভূ-পৃষ্ঠে উঠে আসে।

গবেষকদের মতে, ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে প্রায় ৮.৫ বা তারও বেশি, যা ইতিহাসের অন্যতম শক্তিশালী ভূমিকম্প হিসেবে বিবেচিত। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উপকূলজুড়ে তীব্র কম্পনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল সেই রাতে।

ভূমিকম্পের সময় বঙ্গোপসাগরের তলদেশে থাকা একটি ব্যাপক অঞ্চল আকস্মিকভাবে উপরে উঠে আসে যাকে বিজ্ঞানীরা বলেন co-seismic uplift। এই উত্থানের কারণেই সেন্টমার্টিন ও টেকনাফের একটি বড় অংশ, যা আগে ছিল সমুদ্রের নিচে ডুবো চর, তা স্থায়ী ভূমিতে পরিণত হয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, সেন্টমার্টিন দ্বীপটি সেই রাতে প্রায় ১০ ফুট পর্যন্ত উপরে উঠে আসে। প্রবালের বয়স নির্ণয় ও কার্বন পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া গেছে আজ দ্বীপে দেখা মৃত প্রবালের স্তরগুলো সেই সময়েরই নিদর্শন। জীবিত প্রবাল পানির নিচ থেকে হঠাৎ উঁচু স্থলে উঠে এসে মারা যায়, যা ভূমিকম্পজনিত উত্থানের সরাসরি প্রমাণ।

১৭৬২ সালের ওই ভূমিকম্প শুধু সেন্টমার্টিনকে জাগিয়ে তোলেনি, বদলে দিয়েছিল পুরো দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলের চেহারা। গবেষকদের দাবি, কম্পনের পর সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছিল।

বিজ্ঞানীরা বলছেন,বাংলাদেশ অঞ্চলে বড় ভূমিকম্পের ইতিহাস বোঝার জন্য সেন্টমার্টিন দ্বীপের এই জন্মগাথা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধু অতীতের নয়, ভবিষ্যতে সম্ভাব্য ভূমিকম্প ঝুঁকির কথাও স্মরণ করিয়ে দেয়।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে