বুধবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৬:১২:১৬

মানুষ হারিয়ে যায় যে শহরে

মানুষ হারিয়ে যায় যে শহরে

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : এক সময় জাপান কয়লার রাজধানী হিসেবে পরিচিত ছিল। এই শহরের বেশির ভাগ দালানকোঠাই এখন পরিত্যক্ত। জনসংখ্যার গড় বয়সের হিসাবে ইউবারি শহরই জাপানের সবচেয়ে ‘বয়স্ক শহর’। মাত্র ৫০ বছরে জাপানের ইউবারি শহরের জনসংখ্যা কমেছে ৯০ শতাংশ। শহরের অবশিষ্ট বাসিন্দাদের বেশির ভাগই বুড়োবুড়ি। শিশুরা নেই বলে বন্ধ হয়ে গেছে পাঠশালা!

আর পাঁচ-ছয় বছর পরই ইউবারিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে উঠবেন পেনশনভোগীরা। আর তা হলে ইউবারিই হবে বিশ্বের প্রথম এমন শহর! দ্য গার্ডিয়ান অবলম্বনে এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে মানুষ হারানো এই শহরের হালচাল। শহরের পথঘাটে ডর-ভয়হীন চড়ে বেড়ায় বুনো হরিণেরা। দেশটির সবচেয়ে উত্তরের দ্বীপ হোক্কাইডুতে অবস্থিত ইউবারি।

শিল্পোন্নত বিশ্বের খুব কম শিল্প-শহরের সঙ্গেই তুলনা চলে ইউবারির পরিস্থিতির। ১৯৬০ সালের দিকে এই শহরের জনসংখ্যা ছিল ১ লাখ ২০ হাজারের মতো। কয়লার শেষ খনিটাও বন্ধ হয়ে গেল। আর বাইরের খনিশ্রমিকেরাও চলে গেলেন ১৯৯০ সালে। তখনই জনসংখ্যা নেমে আসে ২১ হাজারে। পরবর্তী দুই দশকেই এই সংখ্যা নেমে আসে অর্ধেকে, মাত্র ১০ হাজারের কাছাকাছি।

ইউবারি শহরে ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতির একটি পরিত্যক্ত দোকান। ছবি: রিচার্ড হেন্ডি/দ্য গার্ডিয়ানবয়স্কদের শহর ইউবারি পরিসংখ্যান নিয়ে বসলে অনেক হিসাবেই সবার ওপরে উঠে আসতে পারে এই শহরের নাম। ইউবারিই এখন জাপান এবং হয়তো বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্কদের শহর। ২০১০ সালে এই শহরের বাসিন্দাদের গড় বয়স ছিল ৫৭ বছর। ২০২০ সালের মধ্যে এই গড় চলে যাবে ৬৫ বছরে।

আর তখন ৪০ বছরের চেয়ে কম বয়সীদের তুলনায় ৮০ বছর বয়সীরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে উঠবেন এখানে। এভাবে ইউবারি তখন বিশ্বের একমাত্র পেনশনভোগী সংখ্যাগরিষ্ঠ শহরে পরিণত হয়ে উঠতে পারে। শিশু নেই, তাই নেই পাঠশালাও!

শহরের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা আসার সঙ্গে সঙ্গেই ক্রমাগত বুড়িয়ে যেতে শুরু করে ইউবারি। এখানকার তরুণ-তরুণীরা কাজের খোঁজে পাড়ি জমিয়েছেন দূর-দূরান্তে। আর ছেলেমেয়েরা না থাকলে বাড়িঘর আগলে থাকা বুড়োবুড়িদের সংসারে নাতি-নাতনিরাই বা থাকবে কোথা থেকে? শহরের প্রতি ২০ জনে মাত্র একজনের বয়স এখন ১৫ বছরের নিচে।

একটা শিশু জন্মাতে জন্মাতে অন্তত এক ডজন মানুষ মারা যান ইউবারিতে। জাপানের আর সব শহরের মতোই ইউবারিতেও একসময় অনেক স্কুল-কলেজ ছিল। কিন্তু এখন মাত্র একটা স্কুলেই চলছে শিশু, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম।

কারও বাড়ি ফেরার দৃশ্যই এখন ইউবারি শহরে বিরল। ছবি: রিচার্ড হেন্ডি/দ্য গার্ডিয়ানজাপানের ছোট্ট সংস্করণ
জন্ম ও মৃত্যুহারসহ জনসংখ্যার নানান পরিসংখ্যানে ইউবারি শহরকে পুরো জাপানের একটা ছোট্ট সংস্করণ হিসেবে অভিহিত করা যেতে পারে বলে মনে করেন অনেকেই। দেউলিয়াত্বের শিকার এই শহরের শেষ হাসপাতালটিকে ছোট করে এনে একটা ক্লিনিকে পরিণত করার সময় খ্যাতনামা চিকিত্সক তোমোহিকো মুরাকামিও ঠিক এমনটাই মন্তব্য করেছিলেন।

কয়েক বছর আগে মুরাকামি বলেছিলেন, ‘২০৫০ সালের জাপানের একটা মাইক্রোজম এখনকার ইউবারি।’ পরিসংখ্যান বলছে, ২০৬০ সালের জাপানে প্রতি ১০ জনে চারজন নাগরিকের বয়স হবে ৬৫ বছরের চেয়ে বেশি। ইউবারি প্রায় এক দশক আগেই বয়সের এই গড় অতিক্রম করেছে।

দুনিয়ার বহু মানুষের কাছেই হয়তো—ফিরিয়ে দাও সে অরণ্য, লও এ নগর কেবলই কথার কথা! কিন্তু ইউবারিতে ঠিক যেন এই ঘটনাই ঘটছে। শিল্প-শহরটির কয়লাখনি, কারখানা, বাণিজ্যিক দালানকোঠা আর বসতবাড়ির বেশির ভাগই পরিত্যক্ত। আগে থেকেই প্রকৃতিঘেরা এই শহরকে যেন আবারও দখলে নিয়ে নিতে খুবই সক্রিয় প্রকৃতি।
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই/

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে