বাঘের চেয়ে বড় শিকারি বিড়াল
এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : বাঘের খালা বিড়াল। শিকারে বাঘের চেয়ে বিড়াল সেরা। কিন্তু বিড়ালকে তো কেউ বাঘের মতো ভয় পায় না! কেন ভয় পাবে? খালাদের তো একটু কাণ্ডজ্ঞান থাকে। এরা বাঘের মতো এতটা নির্দয় নয়। মানুষ বা বড় ধরনের প্রাণী শিকার করে না।
তবে বাঘের চেয়ে বিড়ালের ক্ষমতা বেশি কিভাবে হলো?
এখানে ক্ষমতা বলতে তাদের কৌশল এবং ক্ষিপ্রতার কথা বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ একটা বাঘ শিকার করতে যতটা চৌকষ তার চেয়ে অনেক বেশি চৌকষ বিড়াল।
বাঘের শিকার বড় বড় প্রাণী। আর বিড়ালের শিকার সাধারণত ইদুর, এই তো। এখানে প্রতিযোগিতাটা হলো, যার যার শিকার কে কতটা দ্রুত ও সুকৌশলে ছুঁ মারতে পারে।
বিড়াল কিভাবে ইঁদুরকে ছুঁ মারে চিত্রটা একবার চোখের সামনে তুলে আনুন তো-
একটা ঈঁদুরকে তাইরে নাইরে ছুটে যেতে দেখলেই সজাগ হয়ে যায় বিড়াল। সেটা পোষা বিড়ালই হোক আর ঘুরে বেড়ানো বিড়ালই হোক। প্রথমে ইুঁদুরের গতিবিধি লক্ষ্য করবে বিড়াল। এর পর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যাবে। সব প্রস্তুতিই নেবে নিঃশব্দে।
পরের দৃশ্যটা লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, কানদুটো হঠাৎই শক্ত করে ফেলেছে বিড়াল। সামনের দিকে শক্ত হয়ে বেঁকে একেবারে তীরের মতো হয়ে উঠেছে। এই কানতীরের টার্গেট শিকার।
এরপর চোখের ভঙ্গি হয় দেখার মতো। দুই চোখের তারা মেলে দিয়ে শিকারের দিকে এমনভাবে তাকায়, যেনো চোখ দুটো কোটর থেকে বের করে ছুঁড়ে মারবে।
একটু পর বেড়ালটাই ঝাঁপিয়ে পড়ে শিকারের ওপর। তার আগে আরো দু’টো কাজ করে নেয়। শরীরের পেছনের অংশটায় একটা কম্পন তোলা। পেশিগুলোকে মৃদ্যু ঝাঁকুনি দিয়ে একটু ঝালিয়ে নেয়া।
এর পরই আসল কাজ। অর্থাৎ এক লাফে শিকারকে ছুঁ মারে বিড়াল।
শিকারের এ সাধারণ দৃশ্যটা দেখানো হয়েছিলো একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে। ১০০ বিড়ালের ওপর গবেষণা চালিয়ে গবেষকরা এ অনুষ্ঠানে নিজেদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। তারা সোজাসোজি বলেছেন, বিড়াল বাঘের চেয়েও শিকারে পটু।
অবশ্য বাঘও বিড়াল জাতীয় প্রাণীই, জ্ঞাতি ভাই। তাই অনুষ্ঠানে বাঘকে তারা বড় বিড়াল বলে ডেকেছেন।
গবেষকরা বলেছেন, ছোটো বিড়ালগুলোর বড় বিড়াল অর্থাৎ বাঘের মতোই ক্ষমতা রয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাঘের চেয়েও বেশি। আবার এদের শিকার ধরার ভঙ্গি বাঘ ও সিংহের চেয়ে অনেক সাবলিল, অনেক চঞ্চল।
অনুষ্ঠানে একটি ফুটেজ দেখানো হয়, সেখানে বাঘ ও বিড়ালদের শিকারের ভঙ্গি তুলে ধরা হয়। গবেষকরা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বিশ্লেষণও করেন।
তারা বলেন, বিড়ালের নখগুলো বাঘের চেয়ে সুবিধাজনকভাবে থাকে। বাঘের নখ থাবার ভেতর লুকিয়ে থাকে। এরা শিকারকে কামড়ে ধরার আগে নখ বসাতে পারে না। অন্য দিকে শিকার ধরার জন্য দৌড়ানোর সময়ই বিড়ালের ধারালো নখগুলো বেরিয়ে যায়। এ কারণে বিড়ালরা সহজেই শিকার ধরতে পারে।
যারা বিড়াল পোষেন এমন অনেকের সাথে কথাও বলেছেন গবেষকরা। বিড়াল মালিকরা জানিয়েছেন, তাদের পোষা আদুরে বিড়ালগুলোর চোখ সবসময়ই শিকারপ্রবণ। এরা কোলের ওপর, বা তুলতুলে বিছানায় শুয়ে থাকলেও শিকার দেখলে চঞ্চল হয়ে উঠে।
অনুষ্ঠানে ড. লিজ বোনিন বিড়াল নিয়ে দীর্ঘ বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেন। তিনি জানান, তারা বিড়ালের আচরণ সম্পর্কে জানতে প্রত্যন্ত গ্রামের বিভিন্ন যায়গায়ও ক্যামেরা রেখে দিয়েছিলেন।
এতে অবশ্য বাঘের সাথে বিড়ালের পার্থ্যক্যর পাশাপাশি শহুরে আর গ্রামের ঘুরে বেড়ানো বিড়ালের পার্থক্যও উঠে এসেছে।
তারা দেখেছেন, পোষা বিড়ালগুলো শিকার পেলে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠিক। তবে খাওয়ার জন্য ওদের তেমন তাড়া থাকে না। কারণ, ওরা তো ঘরে থাকে। মালিকের দেয়া কাঁটা ঝোটা ছাড়াও ভাগ্যে ভালো ভালো খাবার জোটে। তাই এদের এতো পেটের দায় নেই। তবে জাতিতে যে বিড়াল, তাই শিকার পেলে হাতছাড়া করে না। আবার শিকারকে আয়ত্বে এনে সরাসরি মেরেও ফেলে না। কিছুক্ষণ এর সাথে খেলে, ভয় দেখায়, মজা নেয়।
অন্য দিকে ঘুরে বেড়ানো অভিবাবকহীন বিড়ালগুলো শিকার ধরে থাবায় চিঁড়ে চ্যপ্টা করতে মাত্র দুই সেকেন্ড সময় নেয়। এরপর এটা দিয়েই সারে ভোজ পর্ব।
গবেষকরা বিড়ালের শিকারের ভঙ্গি নিয়েও জানিয়েছেন, এরা যখন শিকারের জন্য ঘুর ঘুর করতে থাকে, তখন এদের পা দুটো থাকে বাঁকানো। অর্থাৎ সদাপ্রস্তুত টাইপের। আর সবসময় এদের শরীরে একটা শিকারি শিকারি ভাব থাকে। যখন দ্রুত গতিতে দৌড়ায়, তখনো ভাবসাব পাকা শিকারির মতোই।
বিড়ালরা বাঘের চেয়েও বেশি দৌড়াতে পারে। এদের দৌড়ের ভঙ্গিটা থাকে সাবলিল। এক লাফে চলে যেতে পারে অনেক দূর। অনেক উঁচু থেকে নিচে পড়ে গেলেও বিড়ালদের কিছু হয় না। অনেকে অবাক হন, বিড়ালদের কি হাড়গোড় বলতে কিছু নেই?
এ প্রশ্নের জবাবও দিয়েছেন, গবেষকরা। তারা লাফ দেয়ার সময় একটি বিড়ালের এক্সরে ধারণ করেছেন। এতে দেখা গেছে, লাফ দেয়ার সময় বিড়ালের হাড়গোড়গুলো তরলের মতো হয়ে যায়।
তরলের মতো বলতে তরল নয়, হাড়ের আকার ঠিকই থাকে। তবে যেটা যেখানে ছিলো, সেখান থেকে বিড়ালের সুবিধামতো বিভিন্ন দিকে সহজভাবে নড়াচড়া করতে পারে। যেদিকে খুশি সেদিকে দেহ বাঁকাতে পারে বিড়াল। তাই লাফ দেয়ার সময় মনে হতে পারে, বিড়ালের শরীরে বুঝি হাড়গোড় নেই। সূত্র: ডেইলি মেইল
২৩ সেপ্টেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/আল-আমিন/এএস