এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে পাকিস্তানে কুষ্ঠরোগের বিরুদ্ধে লড়ছেন রুট ফাও৷ বৃদ্ধ এই যাজিকা তথা চিকিৎসক ১৯৬০ সালে করাচি শহরে কুষ্ঠরোগীদের দুরবস্থা দেখে সেবার ব্রত নিয়ে সেখানেই থেকে যান৷
পাকিস্তানে তাকে ডাকা হয় ‘‘করাচির দেবদূত'' কিংবা ‘‘পাকিস্তানের মাদার তেরেসা''। সে দেশের সরকারও দিয়েছে তাকে রাষ্ট্রীয় অনেক মর্যাদা। এমনকি রাষ্ট্রমন্ত্রীর মর্যাদাধারী সরকারি উপদেষ্টার পর্যায়ে তাকে উন্নীত করা হয়েছে ১৯৭৯ সালে।
তারও ৩৫ বছর পরে রুট ফাও এখনো নিয়মিত রোগী দেখছেন; কুষ্ঠ, যক্ষ্মা ও দৃষ্টিহীনতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন প্রতিদিন। আগামী মঙ্গলবার, ৯ সেপ্টেম্বর জীবনের ৮৫ বছর পূর্ণ করবেন তিনি।
রুট ফাও প্রথমে করাচিতে এসেছিলেন ভারতে যাবার ভিসা করানোর জন্য। কুষ্ঠরোগের সেই প্রথম অভিজ্ঞতা তিনি তার একটি বইয়ে বর্ণনা করেছেন ঠিক এভাবে, ‘‘চিকিৎসা নেই, ওষুধপত্র নেই৷ শেষ অবধি পঙ্গু, অঙ্গহীন, বীভৎস অবস্থায় কোনো বড় শহরের পথে ভিক্ষা করে, কুষ্ঠরোগীদের বস্তিতে অবর্ণনীয় পরিস্থিতিতে বাস করা৷''
এই দুর্ভাগা মানুষদের কল্যাণে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন রুট ফাও, যার সম্পর্কে কাপ আনামুর ত্রাণ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা রুপ্যার্ট নয়ডেক বলেছেন, ‘‘বাস্তবে উনি আমার আদর্শ৷ ওর চেয়ে বড় কেউ নেই৷''
রুট ফাও-এর জন্ম ১৯২৯ সালে, জার্মানির লাইপসিগ শহরে৷ ডাক্তারি পড়ার সময়েই তিনি একটি খ্রিষ্টীয় মঠে ‘নান' হিসেবে যোগদান করেন৷ তার ৮৫তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে জার্মান সংবাদ সংস্থা ডিপিএ তাকে টেলিফোন করলে পর রুট বলেছেন, ধর্মবিশ্বাসই তাকে সব হতাশার হাত থেকে বাঁচিয়ে রেখেছে: ‘‘সেই কারণেই আমি আজও বেঁচে রয়েছি৷''
করাচিতে গোড়ায় বস্তির একটি টিনের ঘরেই রোগী দেখতেন রুট৷ পরে ইউরোপ থেকে অর্থসাহায্য আসতে শুরু করলে পর কুষ্ঠরোগীদের জন্য একটি হাসপাতাল তৈরি করেন৷ সেই হাসপাতালই পাকিস্তানে কুষ্ঠ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির প্রাণ ও প্রেরণা হয়ে দাঁড়ায়৷ আনন্দের কথা: ১৯৯৬ সাল যাবৎ এই বিভীষণ রোগের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে৷
দেশে-বিদেশে বহু সম্মানে ভূষিত হয়েছেন রুট৷ পাকিস্তান তাকে সাম্মানিক নাগরিকত্ব দিয়েছে, জার্মানি দিয়েছে সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান৷ সম্প্রতি ‘দেশে' ফিরে রুট ফাও-কে বলতে শোনা গেছে: ‘‘যা প্রয়োজন ছিল, আমি শুধু তা-ই করেছি৷'' ৮৫তম জন্মদিনে তাঁর কোনো বিশেষ ইচ্ছা কিংবা অভিলাষ আছে কি?
‘‘আমার যতজন রোগী, ঠিক ত-তগুলো ইচ্ছে,'' বলেছেন রুট৷
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই/