বুধবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১০:৩৭:০২

সৌদি শেখদের অবাক করার মত বিলাসিতা

সৌদি শেখদের অবাক করার মত বিলাসিতা

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক  : গোটা মুসলিম বিশ্বের কাছে পবিত্র ভূমি আরব। কিন্তু গাজায় যখন মুসলমানরা ওষুধ, খাদ্য, চিকিৎসা ও কাজের অভাবে মানবিক বিপর্যয়ে পড়ে আছে, রোহিঙ্গার মুসলমানরা যখন জীবন বাঁচাতে এদেশ থেকে ওদেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছে, আফ্রিকার মুসলমানরা যখন এলবো ভাইরাসে আক্রান্ত, বোকো হারাম, আইএসআইএস, শাবাব, আল-কায়েদা নামে অসংখ্য জঙ্গী গোষ্ঠীর খপ্পরে পড়ে যখন মুসলমান যুবকরা প্রাণ বিসর্জন দিচ্ছে, পুঁজি ও প্রযুক্তির অভাবে যখন মুসলমানরা সম্পদ সৃষ্টির কৌশল আয়ত্বে আনতে পারছে না, লিবিয়া, তিউনিসিয়া, মিসর, সিরিয়া সহ বিভিন্ন আরব দেশে যখন আরব বসন্ত এখনো পথভ্রষ্ট তখন বিলাসিতার জোয়ারে গা ভাসিয়ে দিয়ে স্ফূর্তিতে মেতে ওঠার মত সৌদি শেখ বা তাদের তরুণ তরুণীরা অকাতরে সময় ও অর্থ ব্যয় গোটা মুসলিম বিশ্বকে অবাক করে।

আরবরা বিলাসিতার শীর্ষে এ নিয়ে বিশ্বে কোনো বিতর্ক নেই। কিন্তু তারা তেলের টাকায় কি পরিমাণ বিলাসিতা করে তার একটি নজির দেখা যায় বিদেশ থেকে বিলাসবহুল গাড়ি জাহাজে ফেরত না নিয়ে তা বিমানে করে নেয়ার ভেতর দিয়ে । লন্ডন থেকে বিমানে করে ৩ হাজার মাইল উড়িয়ে আনতে এক একটি গাড়ি প্রতি খরচ পড়েছে কম করে হলেও ২০ হাজার পাউন্ড। কাতার এয়ারলাইন্সের কার্গোতে করে এসব গাড়ি আনতে যে খরচ হয়েছে তা দিয়ে অন্য কোনো বিলাসবহুল গাড়ি কেনা যেত অনায়াসে।

ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে আরব প্লেবয়রা তাদের সুপারকারগুলো লন্ডন থেকে নিয়ে যাচ্ছে কাতার এয়ারবাস এ থ্রি থ্রি জিরো কার্গো জেটে করে। ল্যাবারোঘিনিস, ফেরারি, ম্যাকলারেন্স, মার্সিডিস বেঞ্জ’ এর মত বিলাসবহুল গাড়িগুলো লন্ডন শহরের নাইসব্রিজ এলাকার রাস্তায় দেখে অনেকে ব্রিটিশ হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে। কেউ কেউ ছবি তুলেছে এসব গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে। কেউ বা স্পর্শ করে দেখেছে। কোনো গাড়ি একেবারে পুরোটাই সোনার প্রলেপ দিয়ে তৈরি। শুধু সৌদি আরব নয়, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতারের মত আরব দেশের বিলাসি যুবকরা হচ্ছেন এসব গাড়ির মালিক।

বিশ্বের কোনো দেশের মানুষ মনে হয় বিলাসবহুল গাড়ি কিনে জাহাজে না এনে বিমানের কার্গোতে আনার মত বিলাসিতা সহসা দেখাতে চান না। তবে আরব যুবকদের বিলাসিতা বলে কথা। কয়েক সপ্তাহ তর বা বিলম্ব সয় না তাদের। লন্ডনে কেনাকাটা করতে আরব যুবকরা যেমন প্রাইভেট জেট নিয়ে যান তাদের গাড়িগুলো তেমনি যায় দোহা থেকে হিথরো বিমানবন্দরে। একটি কার্গো বিমানে এমন ৩১টি গাড়ি ফেরত নেয়া হচ্ছে লন্ডন থেকে।

ড্যান কার লজিস্টিকস নামে একটি প্রতিষ্ঠান এধরনের বিলাসবহুল গাড়ি বিমানের কার্গোতে আনা নেয়ার সেবা দিয়ে থাকে। ওই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডানিয়েল হলওয়ার্থ বলেন, আরবরা প্রায়শ এভাবেই তাদের বিলাসবহুল গাড়িগুলো বিমানের কার্গোতে নিয়ে আনা নেয়া করে। কোনো যুবক দুই থেকে তিনটি গাড়ি মাত্র এক মাসের জন্যে বিমান কার্গোতে করে নিয়ে আসে। লন্ডনে নিয়ে আসার পর মাস দুয়েক এসব গাড়ি তারা বৈধভাবে চালাতে পারে।

ডানিয়েল হলওয়ার্থ বলেন, তারা লন্ডনে যখন অবস্থান করেন তখন তাদের এসব বিলাসবহুল গাড়িগুলো মারবেলা এলাকায় থাকে। ম্যানচেষ্টারে ডানিয়েলের অফিস। তিনি জানান, একটা ফেরারি অথবা ম্যাকলারেন গাড়ি বিমান আনতে একবার কমকরে হলেও খরচ পড়ে ৫ হাজার পাউন্ড। বাগাতি ভেইরন গাড়ি বিমানে নিতে খরচ পড়ে ৬ হাজার পাউন্ড। আবার একটু বড় গাড়ি যেমন রোলস-রয়েস ফ্যানটম বিমানে নিতে ৭ থেকে ১২ হাজার পাউন্ড খরচ পড়ে যায়। লন্ডনের দক্ষিণ পশ্চিমে কেনাকাটা করতে আসেন যে সব সৌদি তরুণ তরুণী তারা শেখ পরিবারের সদস্য।

লন্ডনের স্যালোন স্ট্রিটে দেখা গেল একটি নীল রংয়ের ফেরারি গাড়ি যার মূল্য কম করে হলেও ৫০ হাজার পাউন্ড। এর মালিক কাতারের এক শেখ পরিবারের সদস্য। কমলা রংয়ের ম্যাকলারেন দেখা গেল আরেক প্রান্তে তার দাম ১ লাখ ৬৫ হাজার পাউন্ড। রমজান উপলক্ষে শেখ পরিবারের সদস্যরা সেন্ট্রাল লন্ডনে এসে ভীড় জমান কেনাকাটার জন্যে। তখন তাদের এসব বিলাসবহুল গাড়ি দেখতে রাস্তায় নেমে আসেন মডেলরা পর্যন্ত। এসব গাড়ি নিয়ে পুলিশের কৌতুহল কম থাকে না। ভুল রেজিস্ট্রেশন, ইন্সুরেন্স কিংবা ভুল ভাবে পার্কিং করে বসলে পুলিশও রেহাই দেন না গাড়ির মালিকদের।

তবে লন্ডনের নাইটব্রিজ এলাকার কোনো কোনো বাসিন্দা অভিযোগ করেন এসব আরব যুবকরা তাদের গাড়ি এত দ্রুত চালায় যেন রাস্তাগুলো তখন রেসিং ট্রাকে পরিণত হয়। এ নিয়ে অভিযোগ তুললেও তাদের বিরুদ্ধে সহজে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না।
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই/

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে