এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : জার্মানির একমাত্র সুপারমার্কেট যেখানে ইসলামের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ খাদ্যদ্রব্য বিক্রি হয়। ইদানীং ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এই দোকানে কেনাকাটা করতে আগ্রহী হচ্ছেন।
জার্মানির একমাত্র সার্টিফিকেটধারী সুপার মার্কেট। দোকানে ঢুকতেই দেখা যাবে তাজা শাকসবজি ও ফলমূল। তিন সারিতে বিভিন্ন শেলফে রয়েছে চাল, ডাল, সস, মিষ্টি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যদ্রব্য। পেছন দিকে রয়েছে মাংসের কাউন্টার, একটি ফ্রিজার ও রুটির শেলফ।
দোকানের ম্যানেজার নুর্টেন ডেভেসিওলু জানান, জার্মানিতে এখন পর্যন্ত এটি একমাত্র সার্টিফিকেটধারী সুপার মার্কেট, যেখানে শুধু হালাল খাদ্যদ্রব্য পাওয়া যায়। অর্থাৎ মুসলিমদের জন্য যা জায়েজ বা অনুমোদিত৷
২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কোলোনের এয়ারেনফেল্ড অঞ্চলে দোকানটি খোলা হয়। দৈনিক ৩০০ থেকে ৪০০ ক্রেতা আসেন দোকানে।
বিশেষ করে মাংস, পানীয় ও মিষ্টিজাতীয় দ্রব্য কিনতে। এক নারী ক্রেতা জানান, দোকানের তাজা জিনিসগুলো তার পছন্দ৷ এছাড়া এখানকার সার্ভিস বা সেবার মান খুবই ভালো।
দোকানের মালিকের সঙ্গে সহজেই আলাপচারিতা গড়ে ওঠে। চার ভাই-এর সঙ্গে দোকানটি চালাচ্ছেন নুর্টেন। এক ভাই আডেম ডেভেসিওলু জানান, ক্রেতাদের মধ্যে অনিশ্চয়তা দেখা দিলে তারা দ্রব্যটি সম্পর্কে বুঝিয়ে বলেন।
ইদানীং অনেক অমুসলিম জার্মান ক্রেতাও আসছেন, বলেন বোন নুর্টেন। তারা জিজ্ঞেস করেন, হালাল' মানে কী? হালাল শব্দটির ব্যাপারে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
‘হালাল' শব্দটি এসেছে আরবি ভাষা থেকে। অর্থাৎ বিশুদ্ধ। ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী যেসব খাবার জিনিস বা আচার আচরণ অনুমোদিত। এর বিপরীত হলো ‘হারাম' বা নিষিদ্ধ।
জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রের মতো খাবার দাবারের ব্যাপারেও নিয়মকানুন রয়েছে ইসলাম ধর্মে। অ্যালকোহল ও শূকরের মাংস নিষেধ।
খাদ্যদ্রব্যে শুয়োরের চর্বি থাকাও চলবে না। চকলেট লজেন্সের মতো অনেক মিষ্টি জাতীয় খাদ্যে শূকরের জেলাটিন থাকে। এমনকি আলুর চিপসেও গন্ধের জন্য অনেক সময় মেশানো থাকে শুয়োরের চর্বি৷ হালাল সুপার মার্কেটটিতে এসব খুঁটিনাটি দিক লক্ষ্য রেখেই খাদ্যদ্রব্য কেনা হয়।
জার্মান সুপারমার্কেটগুলোতে হালাল খাদ্য কেনা সহজ নয়। প্যাকেটের ওপর সবরকম উপকরণ লেখা থাকে না। নুর্টেনের নিজেরও এই অভিজ্ঞতা হয়েছে। শেলফের সামনে অসহায়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে প্রায়ই।
তিনি জানান, বড় বড় খাদ্যদ্রব্যের প্রতিষ্ঠানগুলো আরব দেশগুলোতে হালাল সার্টিফিকেটযুক্ত ভোজ্য সামগ্রী রপ্তানি করে থাকে, কিন্তু জার্মানির দোকানগুলোতে তা পাঠানো হয় না। ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ডস-এ এই বিষয়টি অনেক খোলামেলা।
প্রায় তিন বছর আগে হালাল সুপার মার্কেট খোলার পরিকল্পনাটা মাথায় আসে নুর্টেনের। প্রস্তুতি নিতে দুই বছর লেগে যায়। অসংখ্য হালাল সার্টিফিকেটযুক্ত খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে কোনগুলো বিশ্বাসযোগ্য, সেটা বের করতে ভাই ও বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে রীতিমত গবেষণা করতে হয়েছে তাকে৷
কোন কসাইখানায় কোন পদ্ধতিতে পশুগুলোকে জবাই করা হয়েছে সেটা জানতে হয়েছে নুর্টেনকে। কেননা ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী পশুপালন ও জবাই-এর বিশেষ নিয়মকানুন রয়েছে।
৩৭ বছর বয়সী নুর্টেন ডেভেসিওলু বলেণ, কোনো খাদ্যদ্রব্যের ব্যাপারে নিশ্চিত না হলে পরীক্ষা করার জন্য ল্যাবরেটরিতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সাধারণত রোজার সময় ‘হালালকাউফে' ব্যবসাটা জমজমাট হয়।
২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই/