এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : এবার অন্ধ মাগুর মাছের সন্ধান মিলেছে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গুহায় থাকে মাছগুলো। গুহাটির নাম আইগামাস কেভ (Aigamas Cave). আফ্রিকার নামিবিয়ায় ড্রাগন’স ব্রেথ কেভ (Dragon’s Breath Cave) নামের গুহাটির তলদেশে লুকিয়ে আছে চমৎকার কিছু রহস্য।
একটি সরু ফাটল দিয়ে ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩৩০ ফুট নিচে নামলে গুহাটির নিচে আরেকটি বড় ও গভীর গুহার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। আইগামাস কেভ (Aigamas Cave) নামের এই গুহাটিতে কয়েকশ’ বা কয়েক হাজার বছর আগের পানি আটকে রয়েছে। এটা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভূ-গর্ভস্থ লেক।
এই লেকটি ৪.৯ একর জায়গার বিশাল এলাকা নিয়ে বিস্তৃত। তবে এর পানির গভীরতা সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা এখনও নিশ্চিত হতে পারেননি। আলো প্রবেশ করতে পারে না বলে লেকটি সব সময় কালো অন্ধকারে ঢাকা।

বিজ্ঞানীদের ধারণা, লেকটির পানি ৩০ মিটার থেকে ৫২ মিটার পর্যন্ত গভীর হতে পারে। কালো অন্ধকার লেকের পানিতে বাস করে লালচে সোনালি রঙের এক বিশেষ প্রজাতির মাগুর মাছ। মাছটির নাম সোনালি গুহা মাগুর (Golden Cave Catfish)। আর বৈজ্ঞানিক নাম Clarias cavernicola. চোখে দেখে না মাছটি! চোখগুলো অনেক ছোট ছোট। চামড়া দিয়ে ঢাকা থাকে চোখ। চোখ থাকলেও চোখে দেখতে পায় না।
পৃথিবীর আর কোথাও এ প্রজাতির মাগুর মাছের সন্ধান মেলেনি। মাছটি কিভাবে এ অন্ধকার লেকের পানিতে এলো তাও এক অজানা রহস্য।
বিজ্ঞানীরা সোনালি গুহা মাগুরকে লেকটির বাইরে বংশবিস্তারের কয়েকবার চেষ্টা করেছেন কিন্তু সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে।
চলাফেরা ও শিকার ধরতে এদের সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করে মুখের দু’পাশে চারটি করে মোট আটটি শুড়। শরীরের অন্যান্য অংশের স্পর্শের অনুভূতিকেও কাজে লাগায় তারা।
লেকটির পানিতে এ জাতীয় মাছ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণী বাস করে না। তবে খাদ্যের জন্য নির্ভর করতে হয় গুহার মুখে বসে থাকা পাখির মুখ থেকে পড়ে যাওয়া খাবার। বাদুরের খাবারের উচ্ছিষ্ট আর পানিতে পড়ে যাওয়া পোকা-মাকড়ের উপর নির্ভর করতে হয়।
বিজ্ঞানীদের মতে, এই লেকে মাত্র ১৫০ থেকে ৩০০টি মাগুর রয়েছে। এদের প্রজনন ও বংশবিস্তার সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা এখনও জানাতে পারেননি। বিজ্ঞানীরা এই প্রজাতির মাছকে বিপন্ন প্রাণী হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
এই প্রজাতিটিকে বাঁচাতে আফ্রিকার বিজ্ঞানী ও পরিবেশবাদীরা লেকটির উপর নজরদারি এবং প্রয়োজনীয় আইন তৈরির দাবি করে আসছে বেশ কয়েক বছর ধরে আন্দোলন করে আসছেন। এরই মধ্যে লেকটি থেকে মাগুর ধরার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
কিন্তু মরুভূমি এলাকায় তীব্র পানির সংকট। পানির জন্য হাহাকার। নামিবিয়ার মরুবাসীদের কাছে ভূগর্ভস্থ লেকটি সোনার খনির মত। লেকটি থেকে মটরের সাহায্যে পানি উত্তোলন করে আশপাশের লোকজন গত কয়েক দশক ধরে নিজেদের পানির চাহিদা মিটিয়ে আসছে। এতে করে লেকটির পানির উচ্চতা আগের চেয়ে ৩০ মিটার কমে এসেছে।
সোনালি গুহা মাগুর বংশবিস্তারের লক্ষ্যে আফ্রিকার বিজ্ঞানীরা অনত্র চাষ করতে নিরলস গবেষণা করে যাচ্ছেন।