তৈয়বুর রহমান : প্রেমের জয়গান আজও গেয়ে চলছে তাজমহল। নির্মাণের পর থেকেই প্রেমের পতাকা সেই যে উড়িয়েছেন সম্রাট শাহজাহান, তারপর থেকে তা উড়েই চলছে পত পত করে। কবির কবিতায় তাজমহল, লেখকের লেখায় তাজমহল। প্রেমিক-প্রেমিকার স্বপ্নেও তাজমহল। কোথায় নেই।
কত যে গল্প, কত যে কবিতা লেখা হয়েছে, তা হিসেব করা আসলেও কঠিন। তাজমহল নিয়ে সিনেমাও কম তৈরি হয়নি দেশ-বিদেশে এবং সবগুলোতেই কোনো না কোনোভাবে প্রেম আছেই, মূখ্য বিষয় না হলেও।
এটি তৈরি করেন মোগল সম্রাট শাহজাহান প্রিয়তমা পত্নী মমতাজ মহলের স্মৃতিকে স্মরণ করে। এরপর থেকেই একটি অমর সৃষ্টি হয়ে আছে এটি। নির্মাণ কৌশলের দিক দিয়ে তো বটেই, মানুষের মনোজগতেও স্থান করে নিয়েছে।
তাজমহল নির্মাণের সময় সম্রাট শাহজাহান হয়তো এর একটি দিক নিয়ে কখনো ভাবেননি। না ভাবারই কথা, তিনি কেবল ভাবতে পারেন এর মনোরম সৈন্দর্য্য নিয়ে। এটি যে একদিন ভারত সরকারের আয়ের উৎস হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, বিষটি তার মাথায় না থাকারই কথা।
তবে তাজমহল দেখতে পরিব্রাজকদের ভারতে আসার কথা তিনি ভাবতেই পারেন। কিন্তু ভাবেননি ব্যাপক আকারে পর্যটকদের আগমনের কথা। বর্তমানে প্রতিবছর ৮ থেকে ৯ মিলিয়ন পর্যটক ভারতে এসে থাকেন শুধুমাত্র তাজমহল দেখতে।
গত তিন বছরে শুধুমাত্র তাজমহল দেখতে ঢোকার টিকেট ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ পর্যটকদের কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে ৭৫ কোটি রুপি। আর একই সময়ে এর দেখভাল ও সংরক্ষণ বাবদ খরচ হয়েছে ১১ কোটি রুপি। অর্থাৎ তিনি বছরে নীট লাভ হয়েছে ৬৪ কোটি রুপি। বছরে প্রায় ২২ কোটি রুপি।
হোটেল ভাড়া, খাওয়া-দাওয়া, শখের জিনিস কেনা-কাটা, পরিবহন ইত্যাদি খরচ ধরলে তো ভারত সরকারের আয় নিঃসন্দেহে কয়েকগুন বেড়ে যাবে। ইউনেস্কো ১৯৮৩ সালে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে এটিকে ঘোষণা করার পর সরকারের আয় তো কমেইনি বরং বেড়েছে।
লোকসভায় এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় পর্যটন ও সংস্কৃতি মন্ত্রী মহেষ শর্মা বলেন, তাজমহলের সংরক্ষণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিবেশগত উন্নয়নের জন্য গত তিন বছরে খরচ হয় ১১ কোটি রুপী। আর গত তিন বছরে আয় হয়েছে ৭৫ দশমিক ৯০ কোটি রুপী।
প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ কারা যায় যে, যমুনা নদী দূষণের ফলে ৪২ একর এলাকাজুড়ে নির্মিত তাজমহল কমপ্লেক্সটি ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছিল। এ কারণে যমুনার পরিবেশ উন্নয়নে ভারত সরকারকে কয়েকটি প্রকল্প হাতে নিতে হয়।
কর্ণাটকের লোকসভা সদস্য এসপি মুদ্দাহানুমেগোয়েদা জানতে চান যে, স্মৃতিসৌধটির রঙ যে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, সেই বিষয়টি আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার নজরে আনা হয়েছে কি না, এই প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, প্রাকৃতিক কারণেই সাদা মার্বেল পাথরে নির্মিত তাজমহলের নির্দিষ্ট কিছু অংশের রঙ হলুদ হয়ে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, তাজমহলের রঙ দৃশ্যত, নিয়ত পরিবর্তনশীল। সূর্যের আলোয় ভূপৃষ্ঠের উষ্ণতায় কমবেশি সঙ্গতি রেখে তাজমহলের রঙও পাল্টে যায়। ঠিক তেমনি একই ঘটনা ঘটে চন্দ্রালোকেও। -রাইজিংবিডি
১৯ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম