বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই, ২০১৬, ০১:৪২:২৬

তৃতীয়বারের চেষ্টায় রাজি হয়েছিল হিলারি : বিল ক্লিনটন

তৃতীয়বারের চেষ্টায় রাজি হয়েছিল হিলারি : বিল ক্লিনটন

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : প্রত্যাশিতই ছিল কিছুটা ব্যক্তিগত হবে ডেমোক্রেটিক দলের জাতীয় কনভেনশনে বিল ক্লিনটনের বক্তব্য। সাবেক প্রেসিডেন্ট বিলের স্ত্রী হিলারি এবার ডেমোক্রেটিক দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। প্রত্যাশায় জল ঢালেননি তিনি। অনেকটা আলাপচারিতার ঢঙে অনেক ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ করতে দেখা গেল এ রাজনীতিককে।

তার বক্তব্যের শুরুতেই ছিল হিলারির সঙ্গে তার প্রথম দেখা হওয়া, প্রেমে পড়া, চুটিয়ে প্রেম করা আর বিয়ের গল্প। হিলারির অ্যাক্টিভিজম ও রাজনীতিতে জড়ানোর কাহিনীও উঠে এসেছে বিল ক্লিনটনের মুখে। পাঠকদের জন্য উদ্ধৃত করা হলো তার বক্তৃতার ওই অংশটুকু।

‘১৯৭১ সালের বসন্ত। এক মেয়ের দেখা পাই আমি। প্রথমবার তাকে যখন দেখি, তখন আমরা ছিলাম রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকার বিষয়ক একটি ক্লাসে। তার ছিল ঘন বাদামি চুল। বড় বড় সানগ্লাস। কোনো মেকআপ ছিল না মুখে। তার চেহারা থেকে যেন প্রশান্তির দ্যুতি চুয়ে পড়ছিল, যেটাকে আমার সম্মোহনী মনে হতো। ক্লাস শেষে, আমি তাকে অনুসরণ করি। ইচ্ছা ছিল তার সঙ্গে পরিচিত হবো। তার পিঠ ছুঁয়ে ডাকার কাছাকাছি চলে গিয়েছিলাম, কিন্তু পারিনি। কিভাবে যেন আমি জানতাম স্রেফ কাঁধে টোকা দেয়ার আরেকটি ঘটনা হবে না এটি। জানতাম যে, আমি এমন কিছু শুরু করতে যাচ্ছি, যা আমি নিজেও থামাতে পারবো না।

পরের কয়েকদিন আমি তাকে আরো কয়েকবার দেখলাম। কিন্তু তবুও কথা বলিনি। একরাতে ল’ লাইব্রেরিতে এক সহপাঠীর সঙ্গে কথা বলছিলাম। সে চাইছিল যাতে আমি ইয়েল ল’ জার্নালে যোগ দিই। সে বলছিল, যোগ দিলে আমি বড় কোনো ফার্মে চাকরি বা কোনো ফেডারেল বিচারকের ক্লার্কশিপ নিশ্চিতভাবে বাগিয়ে নিতে পারবো। কিন্তু আমি সত্যিই আগ্রহী ছিলাম না। আমি শুধু আরকানসাসের বাড়িতে যেতে চাচ্ছিলাম।

এরপরই আমি মেয়েটাকে দেখি আবার। সেই লম্বা রুমের বিপরীত পাশে দাঁড়িয়ে আছে। অবশেষে, সে এবার আমার দিকে তাকালো! এবার আমি সতর্ক হয়ে তাকালাম। সে তার বই বন্ধ করলো, নিচে রাখলো। এরপর সোজা আমার দিকে হাঁটা শুরু করে দিলো! সে ওই লাইব্রেরির পুরো দূরত্ব হেঁটে আমার কাছে এলো। আর বললো, ‘দেখ, যদি তুমি আমার দিকে তাকিয়েই থাকো, তাহলে আমাদের অন্তত একে অপরের নাম জানা দরকার। আমি হিলারি রডহ্যাম। তুমি কে?’ আমি এতটাই মুগ্ধ ও আশ্চর্য্য হলাম যে, আপনি বিশ্বাস করুন আর না-ই করুন, বাকহারা হয়ে গেলাম কিছুক্ষণের জন্য।

অবশেষে টুক করে বলে ফেললাম আমার নাম। আমরা আরো কিছুক্ষণ কথা বললাম। অবশেষে সে চলে গেল। হ্যাঁ, আমি ওই ল’ রিভিউতে যোগ দিইনি। কিন্তু লাইব্রেরিও ছাড়িনি। মাথায় তখন সমপূর্ণ ভিন্ন লক্ষ্য। কয়েক দিন পর আমি তাকে আবার দেখলাম। তার পরনে ছিল সাদা ফুলেল একটা স্কার্ট। আমি তার কাছে গেলাম। সে বললো, পরের টার্মের জন্য সে ক্লাসের নিবন্ধন করতে যাচ্ছে। আমি বললাম, আমিও যাবো। আমরা লাইনে দাঁড়ালাম, কথা বললাম।

ওই সময় ক্লাসের নিবন্ধন করতে এটাই করতে হতো। আমি ভাবলাম, আমি বেশ ভালোই করছিলাম। কিন্তু এক পর্যায়ে আমরা একেবারে লাইনের প্রথমদিকে চলে এলাম। নিবন্ধক আমার দিকে তাকালো আর বললো, ‘আরে বিল! তুমি এখানে কী করছো? তুমি না আজ সকালে নিবন্ধন করলে?’ আমি লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম! সে ভীষণ হাসলো। আমি ভাবলাম, যাই হোক। যেহেতু আমার ছদ্মবেশ ফাঁস হয়ে গেছে, আমি এবার তাকে আর্ট মিউজিয়ামে যাওয়ার প্রস্তাব দিলাম। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত আমরা হাঁটছি, কথা বলছি, হাসছি একসঙ্গে।

সেদিনের একসঙ্গে হাঁটাহাঁটি আর প্রথম মাস পার হওয়ার পর, আমি তাকে ইলিনয়ের পার্ক রিজে তার বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে আসলাম। আমি শহরটা ঘুরলাম যেখানে তার বড় হওয়া। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী মধ্যবিত্ত আমেরিকার সবচেয়ে দারুণ উদাহরণ ছিল সেটি। সড়কের পর সড়কজুড়ে সুন্দর বাড়ি, বিশাল স্কুল, ভালো পার্ক, সরকারি সুইমিং পুল। আমি সত্যিই তার পরিবারকে পছন্দ করেছিলাম। তার চাঁচাছোলা রক্ষণশীল পিতা, উচ্ছ্বসিত ভাইয়েরা। কিন্তু তার মা ছিলেন আলাদা। তিনি ছিলেন ছেলেদের চেয়ে উদারপন্থি। তার শৈশব এমন যেটা শুনে আমারটাকে একটুকরো কেক মনে হলো! তিনি আমাকে বারবার একটা পুরনো উক্তির কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন যে, কোনো বইকে তার প্রচ্ছদ দেখে বিচার করো না কখনও। তাকে জানতে পারাটা ছিল হিলারির আমাকে দেয়া সেরা উপহারগুলোর একটি।’

এটুকু বলে বিল ক্লিনটন রোমন্থন করেন হিলারির কর্মকাণ্ড ও আদর্শের ব্যাপারে। কিভাবে স্বেচ্ছাসেবী ও সামাজিক কাজে নিজেকে জড়িয়েছেন হিলারি, যা জাতীয় ক্ষেত্রেও পরিবর্তন এনেছে, তা ব্যাখ্যা করেন বিল। তারপর বলেন, ‘আসুন ফিরে আসা যাক গল্পে। আমাকে বিয়ে করার ব্যাপারে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করছিলাম আমি। বৃটেনে এক সফরে তাকে প্রথম আমি বিয়ের প্রস্তাব দিই। সেটাই ছিল তার প্রথম বিদেশযাত্রা। আমরা ছিলাম লেক এনেরডালে নামে দারুণ এক লেকের তীরে। আমি তাকে আমাকে বিয়ে করতে বললাম।

সে জবাবে বললো, ‘আমি পারবো না।’ এরপর আবারও শিশুদের নিয়ে হিলারির বিভিন্ন কাজের স্মৃতি রোমন্থন করেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪২তম প্রেসিডেন্ট। এর কিছুক্ষণ পর বলেন, ‘তখনও আমি তাকে বিয়ে করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। দ্বিতীয়বার আমি তাকে যখন জিজ্ঞেস করবো, তখন ভিন্ন উপায় অবলম্বন করলাম। আমি বললাম, ‘আমি সত্যিই চাই তুমি আমাকে বিয়ে করো। কিন্তু তোমার আমাকে বিয়ে করা উচিত নয়।’ সে হাসলো। আর আমার দিকে কিছুটা সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকালো। সে হয়তো ভাবছিল, এই ছেলের মতলবটা কী! সে বললো, ‘এটা অসাধারণ সেলস পিচ হলো না।’

আমি বললাম, ‘আমি জানি। কিন্তু এটাই সত্য।’ আমি সত্যি এটাই বুঝিয়েছিলাম। এটাই ছিল সত্য। আমি বললাম, ‘আমি আমাদের বয়সের বেশির ভাগ তরুণ ডেমোক্রেটদের চিনি যারা রাজনীতিতে জড়াতে চায়। তাদের উদ্দেশ্য ভালো। কিন্তু মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার মতো কাজ করার ক্ষেত্রে তাদের কেউই তোমার চেয়ে ভালো নয়।’ তাই আমি তাকে পরামর্শ দিলাম, তুমি ইলিনয়ের বাড়িতে চলে যাও। বা নিউ ইয়র্কে গিয়ে নির্বাচনে দাঁড়ানোর চেষ্টা করো। সে হাসলো। বললো, ‘তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে? কেউ আমাকে জীবনেও ভোট দেবে না।’

তাই আমি তাকে আমার বাড়ি আরকানসাসে বেড়াতে আসতে রাজি করালাম। সে যখন এলো, তখন স্থানীয় ল’ স্কুলে (যেখানে বিল পড়াতেন) মানুষজন এত মুগ্ধ হলো যে, তারা তাকে শিক্ষকতার প্রস্তাব দিলো। সে তখন এ সুযোগ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। সে এক অদ্ভুত জায়গায় এলো। কেননা, আরকানসাসের মানুষ এত বেশি প্রত্যন্ত ও রক্ষণশীল, যা হিলারি কখনও দেখেনি। মানুষ অবাক হয়ে ভাবছিল সে আসলে কেমন! অথবা, তাকে গ্রহণ করা উচিত কিনা। কিন্তু মানুষের বেশিদিন লাগেনি তাকে বুঝে উঠতে।

শিক্ষকতা পছন্দ করতো হিলারি। একদিন আমি তাকে শিকাগোর পথে এয়ারপোর্টে নামিয়ে দিতে যাচ্ছিলাম। এক সময় ছোট একটি ইটের বাড়ি দেখতে পেলাম। পাশেই ঝুলছে বিক্রির নোটিশ। সে আমাকে বললো, ‘এই ছেলে, এটা তো সুন্দর বাড়ি!’ ১১০০ বর্গফুটের বাড়ি ছিল। ছিল একটা ফ্যান। আরকানসাস এমনিতেই বেশ উষ্ণ। বাড়িটায় কোনো এয়ারকন্ডিশনারও ছিল না। হিলারি মন্তব্য করলো, কী অসাধারণ ডিজাইনের আর সুন্দর বাড়িটা!

এবারে আমি সুযোগটা নিলাম। বাড়িটা কিনে নিলাম। মর্টগেজ ছিল আমার মাসে ১৭৫ ডলার। সে যখন শিকাগো থেকে ফিরলো, আমি তাকে বিমানবন্দর থেকে গাড়িতে উঠিয়ে নিলাম। এক পর্যায়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ওই যে একটা বাড়ি তুমি পছন্দ করেছিলে, মনে আছে তোমার? তুমি যখন ছিলে না, আমি বাড়িটা কিনে ফেলেছি। এখন আমাকে তোমার বিয়ে করতে হবে।’

তৃতীয়বারের এ চেষ্টা কাজে দিলো! ওই ছোট্ট ঘরে ১৯৭৫ সালের ১১ই অক্টোবরে আমরা বিয়ে করলাম। আমি আমার সেরা বন্ধুটিকেই বিয়ে করেছিলাম।’ -এমজমিন

২৮ জুলাই ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে