ফরিদপুর: ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার চারটি ইউনিয়নের সাত থেকে আটটি পয়েন্টে অস্থায়ী ইলিশের হাট বসিয়ে মা ইলিশ বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিদিন ওই সকল অস্থায়ী হাটে শতশত ইলিশের ক্রেতা উপস্থিত হন। ছোট ছোট বাজারের ব্যাগে করে ইলিশ কিনে বাড়ি ফিরছেন তারা। নিষেধাজ্ঞা থাকার পরেও ইলিশ ধরছে জেলেরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, পদ্মা নদীতে প্রায় শতাধিক নৌকা নিয়ে জেলেরা ইলিশ ধরছে। ইলিশ ধরার পর তারা নৌকা নিয়ে নদী তীরে ভিড়ছে। নদী তীরের অস্থায়ী হাটে বসে প্রতি কেজি ইলিশ ৩শ থেকে ৪শ টাকা দরে বিক্রি করছেন জেলেরা। ক্রেতারা ১০ কেজি থেকে ২০ কেজি করে মা ইলিশ ক্রয় করে কাশবনের মধ্য দিয়ে বাড়ি ফিরছেন।
সদরপুর উপজেলার আকোটেরচর ইউনিয়নের হাট আকোটেরচর, কালিখোলা বাজারের পেছনে, চরনাছিরপুর ইউনিয়নের নবাবের ঘাট, মোল্যা কান্দি, ঢেউখালী ইউনিয়নের শয়তানখালী, দিয়ারা নারিকেল বাড়িয়া ইউনিয়নের তোতা খার ঘাট, কাড়াল কান্দি ও হাওলাদার কান্দি এলাকায় অস্থায়ী হাটে বিক্রি করা হচ্ছে মা ইলিশ। হাটগুলোতে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অবাধে চলছে ইলিশ বিক্রি। এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী।
মৎস্য অধিফতর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ইলিশের প্রজনন মৌসুম চলছে। এ মৌসুমে মা ইলিশ ডিম ছাড়ার জন্যে নোনা পানি থেকে মিঠা পানিতে আসে। এ সময় পদ্মা ও মেঘনা নদীতে ইলিশের আগমন ঘটে। মা ইলিশ সংরক্ষণের জন্য সরকার গত ৭ থেকে ২৮ অক্টোবর নদীতে সব ধরনের জাল ফেলা নিষিদ্ধ করেছে। নিষেধাজ্ঞার ২২ দিন ইলিশ আহরন, বিপণন, মজুত ও পরিবহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান রয়েছে।
মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান পরিচালনার জন্য জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, মৎস্য অধিদফতর একটি টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করেছে। ওই কমিটি নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। গত ১০ দিনের অভিযানে ১০৯ জন জেলেকে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৯৫ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়া অন্যদের ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রায় ৪ লাখ হাজার মিটার জাল জব্দ করে আগুনে পোড়ানো হয়েছে। প্রায় সাড়ে ৬শ কেজি ইলিশ উদ্ধার করে বিভিন্ন এতিখানায় প্রদান করা হয়েছে। তারপরও প্রশাসনের নজর এড়িয়ে ইলিশ ধরছে অসাধু জেলেরা।
হাওলাদার কান্দি, নবাবের ঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ইলিশ ক্রয় করতে পদ্মা পাড়ে লোকজন অপেক্ষা করছে। কিছুক্ষন পরপর জেলেরা নৌকা নিয়ে তীরে আসছেন। মাছ বিক্রির পর আবার নদীতে মাছ ধরতে ফিরে যাচ্ছেন। মঙ্গলবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুরো নদীতে কোনো অভিযান চালাতে দেখা যায়নি।
নবাবের ঘাটে কথা হয় মুনসুর আলী নামে এক জেলের সঙ্গে। তিনি বলেন, নদীতে অভিযান চলে, ভয়ে ভয়ে মাছ ধরতে হয়। বছরের অন্য সময়ে নানা ধরনের মাছ ধরি। এ বছর প্রায় লক্ষাধিক টাকা খরচ করে জাল ও নৌকা বানিয়েছি। নদীতে যে মাছ পাই তা পাড়ে এসে বিক্রি করে যাই।
আরেক জেলে ওহাব খাঁ বলেন, আজ অভিযান না থাকায় কয়েক খ্যাপ দিয়েছি। এতে প্রায় মণ খানেক মাছ পেয়েছি। সাড়ে তিনশ টাকা দরে বিক্রি করেছি। নদী পাড়ে ক্রেতাদের ভিড় বেশি থাকলে দাম বেশি পাওয়া যায়। ক্রেতা কম থাকলে দামও কম পাওয়া যায়।
ইলিশ কিনতে আসা আরিফ হোসেন জানান, এখানে সস্তায় ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে শুনে কিনতে এসেছি। ১০ কেজি কিনেছি সাড়ে তিনশ টাকা দরে। রাস্তায় ঝামেলা হয় তাই গোপনে কাঁশবনের মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
সদরপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বাপি কুমার দাশ বলেন, পদ্মা নদীর সীমানা অনেক রয়েছে। নদীতে অভিযান শেষ করে আসার পরপরই অসাধু জেলেরা নদীতে নেমে ইলিশ মাছ ধরছে। নদীতে একাধিক অভিযান দল না থাকার কারণে জেলেরা সুযোগ পাচ্ছে। দুইটি অভিযান দল অভিযান চালালে মাছ ধরা বন্ধ করা যেত।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া বলেন, নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, বিক্রয়, মজুদ ও বাজারজাতকরণের ওপর কঠোর দৃষ্টি রাখছে জেলা প্রশাসন। মা ইলিশ সংরক্ষণে এখন পর্যন্ত ১৫৬টি অভিযান থেকে ৩৩টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় ১১১টি মামলার মাধ্যমে ১০৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়াও ২৯ হাজার ৩শ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এ সকল অভিযান থেকে প্রায় চার লাখ মিটার জাল উদ্ধার করে ধ্বংস করা হয় এবং ৬১৯ কেজি মাছ উদ্ধার করে বিভিন্ন এতিমখানা মাদরাসায় প্রদান করা হয়। মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানে প্রশাসনকে সহায়তার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
এমটিনিউজ২৪.কম/হাবিব/এইচআর