নিউজ ডেস্ক: ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় ভয়াবহ তাণ্ডবের পর এখনো স্বাভাবিক হয়নি সেখানকার পরিস্থিতি। গ্রেফতার আতঙ্কে বিভিন্ন গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। এ পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে ৭৯ জনকে।
গত ৫ এপ্রিল ভয়াবহ তাণ্ডবের পর থেকেই সালথা উপজেলাসহ সংলগ্ন বিভিন্ন হাট-বাজারগুলো এখনো বন্ধ রয়েছে। দিনের বেলা কিছু লোকজন এলাকায় দেখা গেলেও সন্ধ্যার পর থেকে গ্রামে কারো দেখা মেলে না।
গ্রেফতার আতঙ্কে রাতের বেলা অনেকেই বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে থাকছেন। সহিংসতার পর সালথা উপজেলার সালথা, সোনাপুর, রামকান্তপুর, গট্রি, ভাওয়াল, মাঝারদিয়াসহ কয়েকটি ইউনিয়নের কমপক্ষে ২০টি গ্রামের মানুষ এলাকা ছাড়া রয়েছে। এলাকার বিভিন্ন গ্রামে কোনো পুরুষ মানুষের দেখা মিলছে না। নারীরা বাড়িতে থাকলেও তারা ভয়ে মুখ খুলছেন না। এলাকা পুরুষশূন্য থাকায় মাঠের ফসল নষ্ট হওয়ার পথে। এলাকাজুড়ে পুলিশ, ডিবির টহল রয়েছে। অচেনা কাউকে দেখলেই ভয়ে দৌড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন মানুষজন।
সালথায় তাণ্ডবের ঘটনায় এ পর্যন্ত মামলা হয়েছে ৫টি। এই সব মামলায় ২৬১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ৩ থেকে ৪ হাজারজনকে। স্থানীয় অনেকেই মামলার আসামি করা নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে জানান।
নতুন যে চারটি মামলা হয়েছে তার একটি করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বাচ্চু মাতুব্বর। সালথা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে হামলার ঘটনায় তিনি এ মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় ২৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং অজ্ঞাত আরও ৭০০ থেকে ৮০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আরেকটি মামলা করেছেন সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা (ইউএনও) মোহাম্মাদ হাসিব সরকারের গাড়িচালক মো. হাসমত আলী। এই মামলায় ৫৮ জনের নাম উল্লেখ এবং ৩ থেকে ৪ হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
অপর মামলাটি করেছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের নিরাপত্তারক্ষী সমীর বিশ্বাস। এ মামলায় ৪৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং ৩ থেকে ৪ হাজার ব্যক্তিকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
আরেকটি মামলা করেছেন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) মারুফা সুলতানার গাড়িচালক মো. সাগর সিকদার। এ মামলায় ৪২ জনের নাম উল্লেখ করে তিন থেকে চার হাজার ব্যক্তিকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
এর আগে বুধবার সালথা থানার এসআই (উপ-পরিদর্শক) মিজানুর রহমান বাদী হয়ে ৮৮ জনের নাম উল্লেখ করে এবং প্রায় চার হাজার ব্যক্তিকে অজ্ঞাত আসামি দেখিয়ে থানায় হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে প্রথম মামলাটি করেন।
সালথা উপজেলার এসিল্যান্ড মারুফা সুলতানার সাথে স্থানীয় যে বাজারে ব্যবসায়ীদের বাদানুবাদ হয় সেই ফুকরা বাজার এলাকার করিমন বেগম (৫৫) বলেন, সব সময় ভয়ে রয়েছি। পুলিশ দেখতে দেখতে সারাদিন কেটে যাচ্ছে। বাড়িতে কোনো পুরুষ সদস্য নেই। সবাই পালিয়ে রয়েছে বলে জানান তিনি।
নূরজাহান (৪৮) নামে আরেক নারী বলেন, ওই দিন অন্য এলাকা থেকে লোকজন এসে হামলা করেছে। আমাদের গ্রামের কোনো লোক ছিল না। তিনি বলেন, শুনেছি ফুকরা বাজারে এসিল্যান্ডের সাথে থাকা সদস্যদের সাথে বাজারের লোকজনের গণ্ডগোলকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা ঘটেছে।
গট্রি ইউনিয়নের মনির নামে এক ব্যক্তি জানান, বালিয়া গট্রি এলাকা ও উপজেলা কেন্দ্রীক এলাকার বাড়িগুলোতে কোনো পুরুষ সদস্য নেই। ঘটনার পর থেকে ওই সব এলাকার লোকজন পলাতক অবস্থায় রয়েছে বলেও তিনি জানান। তবে তিনি আশা করেন, কোনো নিরীহ লোক হয়রানির শিকার হবেন না।
সালথা উপজেলা আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা পরিষদে হামলার ঘটনায় যাদের আসামি করা হচ্ছে তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের জড়ানো হচ্ছে। এটি একটি মহলের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন তারা।
সালথা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বলেন, হামলার সাথে জড়িতরা বিএনপি-জামায়াতের অনুসারী। কিন্তু মামলায় অনেক আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীর নাম দেখা যাচ্ছে। এটা দুঃখজনক।
সালথার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, আওয়ামী লীগের বেশকিছু নেতার নামে মামলা দেওয়া হয়েছে এবং অনেকের নাম দেওয়া হবে বলে শোনা যাচ্ছে। যাদের নাম বলা হচ্ছে তারা এই ন্যাক্কারজনক হামলার সাথে জড়িত নন। অহেতুক কাউকে হয়রানি যাতে না করা হয় সেজন্য তিনি প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান বলেন, সালথা উপজেলায় তাণ্ডবের পর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মামলার আসামিদের ধরতে পুলিশ দিনরাত জোরদার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। বেশিরভাগ এলাকা পুলিশি অভিযানের কারণে পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে কোনো রকমের ছাড় দেয়া হবে না। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ৭৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।