এমটিনিউজ ডেস্ক: সৌদি আরবের পবিত্র মক্কায় ওমরাহ শেষে ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় এক বাংলাদেশি পরিবারের তিনজন নিহত হয়েছেন। সৌদি আরবের আল-কাসিম এলাকায় শনিবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টার দিকে সড়ক দুর্ঘটনায় তারা মারা যান। নিহতরা হলেন- মোবারক হোসেন (৪৮), তার ছেলে তানজিল আব্দুল্লাহ মাহি (১৫) ও মেয়ে মাহিয়া (১৩)। মাহি ওই দেশের নবম শ্রেণিতে ও মাহিয়া সপ্তম শ্রেণিতে পড়ালেখা করত।
আহত হন মোবারক হোসেনের স্ত্রী শিখা আক্তার (৪০) ও বড় মেয়ে মিথিলা ফারজানা মীম (১৯)। উচ্চশিক্ষার জন্য চলতি মাসের ২৩ তারিখ মীমের কানাডা যাওয়ার কথা ছিল। তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
সন্তান, নাতি-নাতনিকে হারিয়ে বাগরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন মোবারকের বৃদ্ধ মা আলেয়া বেগম। শুধু অবাক চোখে চেয়ে রয়েছেন ছেলে, নাতি-নাতনির ছবির দিকে। আর তার দুই চোখ বেয়ে পড়ছে পানি।
সরেজমিন রোববার মোবারক হোসেনের ফরিদপুর শহরের দক্ষিণ ঝিলটুলীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সন্তান, নাতি-নাতনিকে হারিয়ে আলেয়া বেগমের শুধু চোখ বেয়ে পানি ঝরছে। অসুস্থ আলেয়া বেগম কোনো কথাই বলতে পারছেন না। মোবাইল ফোনে ছেলে ও নাতি-নাতনিদের ছবির দিকে চেয়ে আছেন। এছাড়া বড় ভাইকে হারিয়ে ভাই-বোনদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারি হয়ে উঠেছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ফরিদপুর শহরের দক্ষিণ ঝিলটুলীতে ২০০৬ সাল থেকে বসবাস করে আসছেন শেখ মোহাম্মদ আলী। তিনি পাঁচ ছেলে ও তিন মেয়ের জনক। ভাইবোনদের মধ্যে দ্বিতীয় মোবারক হোসেন।
পরিবার সূত্রে আরও জানা যায়, মোবারক হোসেন দরিদ্রতা ঘুচাতে বিশ বছর আগে পাড়ি জমান সৌদি আরবে। এরপর দুই ভাইকে নিয়েছেন সৌদি এবং এক ভাইকে পাঠিয়েছেন দুবাইয়ে। মোবারক হোসেন স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে সৌদি আরবের দাম্মাম শহরে বসবাস করতেন। সেখানে তার গাড়ি মেরামতের দোকান রয়েছে।
মোবারক হোসেনের ছোট ভাই জাহাঙ্গির হোসেন বলেন, ছয় মাস আগে বড়ভাই ও তার স্ত্রী সন্তান দেশে এসে কিছুদিন থেকে পুনরায় সৌদি চলে যান। ভাইয়ের বড় মেয়ে মিথিলা ফারজানা মীমের ২৩ আগস্ট উচ্চশিক্ষার জন্য কানাডায় যাওয়ার কথা ছিল। এ কারণে স্ত্রী, ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে ওমরাহ করতে যান তিনি। ফেরার পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
মোবারক হোসেনের ছোট বোন নাজিয়া আফরোজ রিক্তা বলেন, এক সপ্তাহ আগে ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। ভাই বললেন, আমি ওমরাহ করতে যাচ্ছি আমার জন্য দোয়া করিস। বড় ভাই ছিল আমাদের বটগাছ। সব সময় আমাদের সব আবদার পূরণ করতেন।
মোবারক হোসেনের বাবা শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, আমার মোবারকের জন্যই আজ আমাদের অবস্থার উন্নতি। কী করলে আমরা একটু ভালো থাকব, সব সময় ওর মাথায় এই চিন্তাই থাকত। বলত আব্বা আপনি কোনো চিন্তা করবেন না, যখন যা লাগবে আমাকে জানাবেন। আমার কোনো কিছুই চাওয়া লাগতো না ওর কাছে।
মোহাম্মদ আলী কথা বলছিলেন আর চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরছিল। এক সময় ছেলের কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন। কান্না আর থামছিলই না তার।
তিনি বলেন, সংবাদ পাওয়ার পর আমার ছেলের শ্যালক সৌদি চলে গেছেন। আমার ছেলে, নাতি-নাতনিদের লাশ দেশে আনার কথা বলেছি। ওদের এক নজর শেষ দেখা দেখতে চাই। সরকার যেন আমার ছেলে ও নাতিদের লাশ দেশে আনার ব্যবস্থা করেন।