এমটিনিউজ ডেস্ক: ‘স্পঞ্জের মতো নরম, মুখে দিলেই মিলিয়ে যায়, তাই এর নাম হয়েছে স্পঞ্জ রসগোল্লা’। এই রসগোল্লা চেখে না দেখলে বিশ্বাস করতে কষ্টই হবে, এটা কতোটা সুস্বাদু। ফরিদপুরের ঐতিহ্যবাহী এ স্পঞ্জ রসগোল্লার সুনাম এখন চারিদিকে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ছাড়িয়ে ‘খোকা মিয়ার রসগোল্লা’ এখন যাচ্ছে বিদেশে।
ফরিদপুর শহরের কমলাপুর মহল্লার প্রাণকেন্দ্র হচ্ছে তেঁতুলতলা। এই মোড়েই রয়েছে বিখ্যাত খোকা মিয়ার মিষ্টির দোকান। যদিও এখন এ মোড়ে আরো কয়েকটি রসগোল্লার দোকান হয়েছে। তারপরও আদি ও আসল বলতে খোকা মিয়ার রসগোল্লাই সেরা। বাহারি কোন সাজসজ্জা নেই দোকানটিতে। দু’খানা টেবিল আর কয়েকটি চেয়ার পাতা আছে দোকানটিতে। আর দোকানের মধ্যেই সবার সামনেই তৈরি হচ্ছে সুস্বাদু রসগোল্লা। যারা নিয়মিত মিষ্টি খান তাদের মতে, এই রসগোল্লায় মিষ্টি কম, ছানার স্বাদ ও ঘ্রাণ পাওয়া যায়। আর মুখে দিলেই মিলিয়ে যায়, যা অন্য রসগোল্লায় পাওয়া যায় না। সকাল থেকে রাত অবধি এই দোকানে বিক্রি হয় হাজার হাজার পিস রসগোল্লা। অনেক সময় রসগোল্লা সাপ্লাই দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় দোকানিকে।
১৯৫০ সালে ছোট্ট ছাপড়া ঘরে তৈরি হতো রসগোল্লা। একই সাথে পরোটা-সবজি ও চা বিক্রি হতো। তবে সময়ের সাথে সাথে শুধু রসগোল্লার ব্যাপক চাহিদা থাকায় এ ব্যবসাটিই টিকে রয়েছে। ‘খোকা মিয়া’ নামের আড়ালে যে রসগোল্লাটি এখন বিখ্যাত সেই ব্যক্তির আসল নাম হচ্ছে শেখ জহুরুল হক। ডাক নাম ‘খোকা’। খোকা মিয়া ও তার বাবা শেখ ছবদাক হোসেন দোকানটি শুরু করেন। ১৯৮৮ সালে খোকা মিয়ার মৃত্যু হলে দোকানের হাল ধরেন ছেলে শেখ আজমল হোসেন। আজমল ২০০৪ সালে মারা গেলে ব্যবসার হাল ধরেন খোকা মিয়ার আরেক ছেলে শেখ আমির হোসেন। বর্তমানে তিনিই ব্যবসাটি পরিচালনা করছেন।
ঐতিহ্যবাহী রসগোল্লার বিষয়ে জানতে চাইলে শেখ আমির হোসেন জানান, রসগোল্লার মূল কারিগর ছিলেন দেবেন দাস নামের এক ব্যক্তি। তিনি কমলাপুর কুঠিবাড়ী এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। তার সাথে কাজ করার সুবাদে অন্য কারিগরেরাও রসগোল্লা বানানোর কৌশল শিখে নেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর পরই দেবেন দাস মারা যান। তখন থেকেই অন্য কারিগরেরা রসগোল্লা বানিয়ে যাচ্ছেন।
‘খোকা মিয়ার রসগোল্লা’ কেন জনপ্রিয় জানতে চাইলে আমির হোসেন বলেন, ‘আমাদের দোকানে কোন লুকোচুরি নেই। যা করা হয়, সবই ক্রেতার চোখের সামনে। সকলেই রসগোল্লা প্রস্তুুত করা দেখতে পান। ভেজালের কোন সুযোগ নেই। দুধ জ্বাল দেওয়া থেকে শুরু করে ছানা, রসগোল্লা বানানো সবই করা হয়ে সকলের চোখের সামনে। আমির হোসেন জানান, দেশের এমন কোন স্থান নেই যেখানে ‘খোকা মিয়ার রসগোল্লা’ যায়নি। দেশের বড় বড় গুণী ব্যক্তিরা চেখে দেখেছেন এই রসগোল্লা। শুধু দেশেই নয়, এই রসগোল্লা বিদেশেও যাচ্ছে। অনেকে রসগোল্লা কিনে নিয়ে বিদেশে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের কাছেও পাঠান। অনেক সময় রসগোল্লা দিতে গিয়ে হিশশিম খেতে হয় তাদের। অনেক সময় লাইন দিয়েও রসগোল্লা কিনতে পারেন না ক্রেতারা।’
কয়েক দিন আগে রসগোল্লার দাম ছিল ১০টাকা। কিন্তু এখন দুধ,চিনিসহ প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় রসগোল্লার দাম বাড়ানো হয়েছে। এখন বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ১২টাকা করে। খোকা মিয়ার এই রসগোল্লার সাথে থাকছে ‘নিমকি’। ভোজন রসিকেরা রসগোল্লার সাথে নিমকি ভিজিয়ে খেতে পছন্দ করেন।
এই দোকানে দুই ধরনের রসগোল্লা তৈরি হয়। একটি সাদা রংয়ের অপরটি লাল। তবে তুলনামূলক ভাবে সাদা রসগোল্লাটিই পছন্দ সবার। সাদা রসগোল্লাটি মিষ্টি একেবারেই কম থাকায় ডায়াবেটিক রোগীরা তা খেয়ে থাকেন।
শহরের পূর্বখাবাসপুর মহল্লার শোয়েব হোসেন নামের এক ব্যক্তি জানান, তিনি ঢাকায় একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকুরি করেন। নিজ শহরে এলে প্রতিষ্ঠানের লোকজন বায়না ধরে রসগোল্লার জন্য। তাই যখনই ফরিদপুরে আসি তখনই কয়েকশ রসগোল্লা কিনে নিয়ে যাই।
আলীপুর মহল্লার সুজন সিকদার, বাবুল মোল্যা, রফিকসহ কয়েকজনের সাথে দোকানে বসে কথা হলে তারা জানান, সুযোগ পেলেই তারা রসগোল্লা খেতে আসেন। এখানকার রসগোল্লা সেরা। অনায়াসে যে কেউ ১৫/২০টি রসগোল্লা খেতে পারে।