শনিবার, ২২ জুন, ২০২৪, ১১:১১:৪৫

আহাজারিতে গ্রামজুড়ে বইছে মাতম, কাঁদছে সন্তানরা

আহাজারিতে গ্রামজুড়ে বইছে মাতম, কাঁদছে সন্তানরা

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম স্বামীকে হারিয়ে পাগলপ্রায় রেহেনা বেগম। কান্না থামছে না তার। বাবাকে হারিয়ে কাঁদছে সন্তানরা। এমন মৃত্যুতে কাঁদছে স্বজন-প্রতিবেশীদের চোখেও জল। দিনমজুর আজিজার শেখের মৃত্যু কেউই মেনে নিতে পারছেন না। তাদের আহাজারিতে গ্রামজুড়ে বইছে মাতম।

শনিবার (২২ জুন) বিকেলে সরেজমিনে ফরিদপুর আলফাডাঙ্গা উপজেলার বাড়ইপাড়া গ্রামে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা গেছে। 

 গ্রাম্য দলাদলিকে কেন্দ্র করে আলফাডাঙ্গায় প্রতিপক্ষের হামলায় খুন হয়েছেন আজিজার শেখ। এঘটনায় ওই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। তবে শনিবার (২২ জুন) সকালে এ ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের হলেও এখন পর্যন্ত জড়িত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

দিনমজুর আজিজার শেখ ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা সদর ইউনিয়নের বাড়ইপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি দুই ছেলে ও এক মেয়ের বাবা। 

জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় ইউপি সদস্য ঝুনু মিয়া ও ইকরাম মিয়ার মধ্যে গ্রাম্য দলাদলি চলছে। মাঝে মধ্যেই মারামারির ঘটনা ঘটে। এরই জের ধরে গত বুধবার রাত ৯টার দিকে জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলা সদর ইউনিয়নের বাড়ইপাড়া গ্রামে মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন ঝুনু মিয়ার সমর্থক দিনমজুর আজিজার শেখ ও রিপন শেখ। পূর্বশত্রুতার জের ধরে হঠাৎ করেই দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায় ইকরামসহ তার লোকজন।

আজিজার ও রিপনকে কুপিয়ে জখম করে মৃত ভেবে ফেলে রেখে যায় তারা। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে প্রথমে আলফাডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে পরদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। 

চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার বিকেলে মারা যান আজিজার শেখ। অপর আহত রিপন শেখ বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার অবস্থাও আশঙ্কাজনক।

ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার (২২ জুন) সন্ধ্যা ৬টায় আজিজারের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। তার মরদেহ আসার খবরে শত শত মানুষ ভিড় জমায়। সবার কান্নায় আশপাশের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। মাগরিব বাদ গ্রামের বাড়ির পাশে একটি মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে আজিজারের দাফন সম্পন্ন করা হয়।

আজিজার শেখের হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি স্বজনদের। 

আজিজার শেখের স্ত্রী রেহেনা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী নিরীহ মানুষ। কোনো ঝামেলাই কোনোদিন জড়াননি তিনি। ইকরাম ও তার লোকজন আমার স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। আমি ওদের ফাঁসি চাই। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন আমার স্বামী। আমার সব শেষ হয়ে গেল। সন্তানদের নিয়ে ভেসে গেলাম।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য ঝুনু মিয়া বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে গ্রামে দলাদলি চলছে, কিন্তু তার জন্য একজন নিরীহ মানুষকে কুপিয়ে হত্যা করতে হবে কেন। ওর পরিবারের কী হবে এখন। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ইকরামসহ সবাইকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।’

আলফাডাঙ্গা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শামিনুল হক জানান, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আজিজার শেখের মামাতো ভাই ঝুনু মিয়া বাদী হয়ে ইকরাম মিয়াকে প্রধান আসামি করে ২৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ১০/১২ জনের নামে আলফাডাঙ্গা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

এদিকে হত্যাকাণ্ডে জড়িত ইকরাম মিয়ার বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। তার ঘরটি তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। স্থানীয়রা জানায় ঘটনার পর থেকেই ইকরাম মিয়া ও তার লোকজন পলাতক রয়েছে। একারণে তার ও সমর্থকদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে