শনিবার, ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৮:২৪:০৩

মীর কাসেমের শেষ দুটি ইচ্ছার কথা জানালেন স্ত্রী আয়েশা

মীর কাসেমের শেষ দুটি ইচ্ছার কথা জানালেন স্ত্রী আয়েশা

নিউজ ডেস্ক : মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসি কার্যকরের অপেক্ষায় থাকা জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর দুটি ইচ্ছা রয়ে গেল বলে জানিয়েছেন তার স্ত্রী খন্দকার আয়েশা খাতুন।

 
শনিবার সন্ধ্যায় মীর কাসেম আলীর সঙ্গে কাশিমপুর কারাগার থেকে দেখা করে বের হয়ে যাওয়ার সময় গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে এ কথা জানান তিনি।
 
খন্দকার আয়েশা খাতুন বলেন, মীর কাসেমের শেষ ইচ্ছা ছিল তার ছেলে ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাসেম আরমানকে দেখা এবং তার সঙ্গে কথা বলা। মৃত্যুর আগে আরমানের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ করার ইচ্ছাও ছিল তার।  তার নামাজে জানাজা পড়ানোর কথা মীর কাসেম বলেছিলেন বলে জানান তিনি।  কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে আরমান নিখোঁজ থাকায় মীর কাশেমের ইচ্ছা পূরণ হচ্ছে না।
 
খন্দকার আয়েশা খাতুন জানান, এ সরকারের আমলে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করে লাভ নেই।  প্রাণভিক্ষা চাইলেও তা পাওয়া যেত না।  এ কারণে তিনি তা চাননি।
 
তিনি বলেন, আমরা উনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এসেছি। উনি মৃত্যু ভয়ে ভীত নন।  তিনি বলেছেন, এ মৃত্যু শহীদী মৃত্যু।  যারা তাকে ফাঁসিতে ঝুলাচ্ছে তাদের পরাজয় হবে।  এদেশে একদিন ইসলাম বিজয়ী হবে।

এর আগে মীর কাসেমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে তার পরিবারের ৪৩ সদস্য কারাগারে যান।  চার দফায় ৩৮ জনকে তার সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেন কারা কর্তৃপক্ষ।

বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ছয়টি মাইক্রোবাসে করে তারা কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর ফটকে পৌঁছেন।  এর পাঁচ মিনিট পর কারা কর্তৃপক্ষ সবাইকে কারাগারের ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেন।

এদিকে মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর করতে প্রস্তুত জল্লাদ শাহজাহান ভুঁইয়া।  তাকে সহায়তা করতে রয়েছেন দ্বীন ইসলাম, রিপন ও শাহীন।
 
এরই মধ্যে শাহজাহানের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের জল্লাদ টিম মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকরে চূড়ান্ত মহড়া সম্পন্ন করেছে।  এসব তথ্য কারা সূত্রে  জানা গেছে।
 
সূত্র জানায়, শনিবার দুপুরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর ফাঁসির মঞ্চে ছূড়ান্ত দফায় মহড়া সম্পন্ন করা হয়।  মহড়ার সময় কারা কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
 
এক কারা কর্মকর্তা জানান, জল্লাদ শাজাহান অন্যদের চেয়ে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন।  সুঠাম দেহ ও অধিক মনোবলের কারণে শাহজাহানই প্রথম পছন্দ কারা কর্তৃপক্ষের।
 
এর আগে জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী, কাদের মোল্লা, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির রায় কার্যকরে জল্লাদের ভূমিকা পালন করেন শাজাহান।

এছাড়া এরশাদ শিকদার এবং বঙ্গবন্ধুর পাঁচ খুনির ফাঁসি ‍কার্যকরেও ভূমিকা রেখেছেন শাহজাহান। কখনো কখনো তিনি ছিলেন প্রধান জল্লাদের ভূমিকায়।
 
জল্লাদ শাজাহান ১৪৩ বছরের সাজাপ্রাপ্ত একজন কয়েদী।  ৩৬ বছর ধরে কারাবাস করছেন তিনি। কারাগার থেকে দ্রুত মুক্তিলাভের জন্যই জল্লাদের তালিকায় নাম লিখিয়েছেন বলেও সূত্র জানায়।  তিনি এ পর্যন্ত প্রায় ৫০টি ফাঁসি কার্যকর করেছেন বলে জানা গেছে।
 
১৯৫০ সালের ২৬ মার্চ নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ইছাখালী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন শাহজাহান ভূঁইয়া। ১৯৭৪ সালে নরসিংদী সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন শাহজাহান।  ব্যক্তিগত জীবনে শাহজাহান অবিবাহিত।

এদিকে আজ দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল ইকবাল করিম কাশিমপুর কারাগারে যান।  সেখানে ফাঁসি কার্যকরের প্রস্তুতি বিষয়ে খোঁজ-খবর নেন।

ফাঁসি কার্যকরের সময়-ক্ষণ এখনো নির্ধারণ হয়নি।  তবে আজই যে ফাঁসি কার্যকর করা হচ্ছে তা অনেকটাই নিশ্চিত।

ফাঁসি কার্যকরের পদক্ষেপ হিসেবে কারা বিধি অনুযায়ী স্থানীয় জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সিভিল সার্জনকে অবহিতকরণে চিঠি পাঠিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।  একই চিঠি পাঠানো হয়েছে মীর কাসেম আলীর গ্রামের বাড়িতেও।

কারাগারে মীর কাসেম আলীর সঙ্গে দেখা করতে বিপুল সংখ্যক স্বজনের উপস্থিতি, ফাঁসির নির্বাহী আদেশ কারাগারে পৌঁছে দেয়া, কড়াকড়ি নিরাপত্তা, পাশাপাশি ফাঁসির মঞ্চে তৃতীয় দফা ও শেষবারের মতো মহড়া সম্পন্ন করা- এসবই জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকরের জানান দেয়।  

মানবতাবিরোধী মামলায় এর আগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ফাঁসি কার্যকর করার এ ধরনের প্রস্তুতির বেশ মিল পাওয়া যাচ্ছে।  

যুদ্ধাপরাধের মামলায় ফাঁসির দণ্ডাদেশ পাওয়া আর কোনো আসামির ক্ষেত্রে শেষ পর্যায়ের সাক্ষাতের সময় এত বিপুল সংখ্যক পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের সাক্ষাৎ করতে দেখা যায়নি।  মীর কাসেম আলীর ক্ষেত্রে তা দেখা গেল।

কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের আশপাশে নিরাপত্তা বেষ্টনী বসায় কারা কর্তৃপক্ষ ও জেলা পুলিশ।  বিকেলে আরো অতিরিক্ত ৪ প্লাটুন বিজিবি কারাগারের চারপাশে মোতায়েন করা হয়েছে।

কারা সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে কাশিমপুরের দুটি কারাগারের ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।  শেষবারের মত জল্লাদদের মহড়াও সম্পন্ন করা হয়েছে।  যাদের দিয়ে মহড়া সম্পন্ন করা হয়েছে তারা হলেন জল্লাদ দীন ইসলাম, শাহজাহান ও শাহীন।

এ প্রসঙ্গে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক বলেন, সরকারের আদেশ পেলে যেকোনো একটি মঞ্চে মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর করার জন্য প্রস্তুত।  এজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
৩ সেপ্টেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে