নিউজ ডেস্ক : মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকরের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়ে গেছে। এরই মধ্যে কারাগারে পৌঁছেছে জল্লাদরা। তৈরি করা হয়েছে ফাঁসির মঞ্চ। জল্লাদরাও দিয়েছেন চূড়ান্ত মহড়া।
গাজীপুর কাশিমপুর কারাগারে প্রবেশ করেছেন কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন্স) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন। আজ শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে কাশিমপুর কারাগারের ফটক দিয়ে প্রবেশ করতে দেখা যায় তাকে।
শেষ খবর অনুযায়ী গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে তিনটি অ্যাম্বুলেন্স প্রবেশ করেছে। অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে প্রবেশ করেছেন গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন-উর রশীদ।
তিনি সাংবাদিকদের জানান, কারাগার ও এর আশপাশে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে মীর কাসেমের ফাঁসি কার্যকরের সময় নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
ফাঁসি কার্যকরের পর মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের চালা গ্রামে হচ্ছে মীর কাসেম আলীর দাফন।
প্রশাসনের দায়িত্বশীল সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। মীর কাসেমের স্ত্রী খন্দকার আয়েশা খাতুনও শনিবার সন্ধ্যায় কারাগারে মীর কাসেমের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বিষয়টি জানিয়েছেন।
মীর কাসেমের দাফন নির্বিঘ্ন করতে সড়ক পথে নেয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা। মোড়ে মোড়ে বসানো হয়েছে পুলিশের নিরাপত্তা চৌকি। মানিকগঞ্জ শহর থেকে হরিরামপুরের চালা পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার রাস্তার প্রতিটি বাঁকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন।
মানিকগঞ্জে মীর কাসেম আলীর কবর খোঁড়ার কাজ করছেন চালা ইউনিয়নের সাকুচিয়া গ্রামের মৃত. কছিম উদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে সামেজ উদ্দিন বিশ্বাস (৭০)।
মীর কাসেমের নিজ অর্থায়নে নির্মিত মসজিদের উত্তর পাশে লেবু বাগান আর বাঁশ ঝাড়ের কাছেই সমাহিত করা হচ্ছে তাকে। বাঁশ কাটা হচ্ছে, আনা হয়েছে তালাই বাঁশ।
সেখানকার আশপাশের মানুষের আনাগোনা সীমিত করে দেয়া হয়েছে। পুরো এলাকাটি পুলিশ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। বিশেষ কাজ ছাড়া লোকজনের বাড়ির বাইরে যাওয়ার ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, মীর কাসেম আলীর লাশের সঙ্গে তার দুই মেয়ে আসতে পারেন।
হরিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম জানান, মীর কাসেম আলীর লাশ দাফনে যাতে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয় সে জন্য ব্যাপক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর করতে প্রস্তুত জল্লাদ শাহজাহান ভুঁইয়া। তাকে সহায়তা করতে রয়েছেন দ্বীন ইসলাম, রিপন ও শাহীন।
এরই মধ্যে শাহজাহানের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের জল্লাদ টিম মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকরে চূড়ান্ত মহড়া সম্পন্ন করেছে। এসব তথ্য কারা সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, শনিবার দুপুরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর ফাঁসির মঞ্চে ছূড়ান্ত দফায় মহড়া সম্পন্ন করা হয়। মহড়ার সময় কারা কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এক কারা কর্মকর্তা জানান, জল্লাদ শাজাহান অন্যদের চেয়ে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। সুঠাম দেহ ও অধিক মনোবলের কারণে শাহজাহানই প্রথম পছন্দ কারা কর্তৃপক্ষের।
এদিকে আজ দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল ইকবাল করিম কাশিমপুর কারাগারে যান। সেখানে ফাঁসি কার্যকরের প্রস্তুতি বিষয়ে খোঁজ-খবর নেন।
ফাঁসি কার্যকরের পদক্ষেপ হিসেবে কারা বিধি অনুযায়ী স্থানীয় জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সিভিল সার্জনকে অবহিতকরণে চিঠি পাঠিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। একই চিঠি পাঠানো হয়েছে মীর কাসেম আলীর গ্রামের বাড়িতেও।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের আশপাশে নিরাপত্তা বেষ্টনী বসায় কারা কর্তৃপক্ষ ও জেলা পুলিশ। বিকেলে আরো অতিরিক্ত ৪ প্লাটুন বিজিবি কারাগারের চারপাশে মোতায়েন করা হয়েছে।
কারা সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে কাশিমপুরের দুটি কারাগারের ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। শেষবারের মত জল্লাদদের মহড়াও সম্পন্ন করা হয়েছে। যাদের দিয়ে মহড়া সম্পন্ন করা হয়েছে তারা হলেন জল্লাদ দীন ইসলাম, শাহজাহান ও শাহীন।
এ প্রসঙ্গে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক বলেন, সরকারের আদেশ পেলে যেকোনো একটি মঞ্চে মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর করার জন্য প্রস্তুত। এজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
৩ সেপ্টেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম