শনিবার, ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১০:৫৩:৩১

মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে ফাঁসির রশিতে ২০ মিনিট মীর কাসেম আলী

মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে ফাঁসির রশিতে ২০ মিনিট মীর কাসেম আলী

নিউজ ডেস্ক : মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।  আজ শনিবার রাত সাড়ে ১০টায় গাজীপুর কাশিমপুর-২ কারাগারে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে তাকে ২০ মিনিট ঝুলিয়ে রাখা হয়।  জেলার নাশির আহমেদ কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।  

মৃত্যুদণ্ড কার্যকর প্রক্রিয়ায় কারাগারে ফাঁসির মঞ্চের পাশে উপস্থিত ছিলেন আইজি (প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন, অতিরিক্ত আইজি (প্রিজন) কর্নেল ইকবাল হাসান,  গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম আলম, পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ,  সিভিল সার্জন ডা. হায়দার আলী খান, কাশিমপুর কারাগার-২ এর সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক, জেলার নাশির আহমেদ প্রমুখ।

নিয়ম অনুযায়ী দণ্ড কার্যকরের পর তারা সাক্ষী হিসেবে নির্দিষ্ট বইয়ে স্বাক্ষর করেন।  

ফাঁসি কার্যকরে দায়িত্বে ছিলেন চার জল্লাদ।  এরা হলেন শাহজাহান, রিপন, দীন ইসলাম ও শাহীন। ফাঁসির আগে জল্লাদ শাহজাহানের নেতৃত্বে মঞ্চ ঘিরে শনিবার সন্ধ্যার পর দুই দফা মহড়া চলে।

পরে মীর কাসেমকে জম টুপি পরিয়ে মঞ্চে তোলেন জল্লাদরা।  এর আগে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন চিকিৎসক ডা. মিজান ও ডা. কাউছার।

ফাঁসি কার্যকরের খবর জানার পর কারাফটকে আনন্দ প্রকাশ করেন মুক্তিযোদ্ধারা।  

এ নিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ছয় শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলো।  তবে কাশিমপুর কারাগারে এ প্রথম কোনো যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলো।  

এর আগে কারাগারে পৌঁছে জল্লাদরা।  তৈরি করা হয় ফাঁসির মঞ্চ।  জল্লাদরা দেন চূড়ান্ত মহড়া।  পড়ানো হয় তওবা।  

নির্ধারণ করা হয় মৃত্যদণ্ড কার্যকরের সময়।  কাশিমপূর কারাগারের একটি সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করে।

শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মীর কাসেমের ফাঁসি কার্যকরের সময় নির্ধারণের জন্য আইজি প্রিজন্স, অতিরিক্ত আইজি প্রিজন্স, সিনিয়র জেল সুপার, জেলার ও ডেপুটি জেলার নিয়ে বৈঠক করেন।  

কাশিমপুর কারাগারের একটি সূত্র জানিয়েছে, কারাগারের ইমামের কাছে তওবা পড়ার সময় মীর কাসেম আলী ছিলেন বেশ শান্ত।

এর আগে রাত ৯ টা ৩৫ মিনিটে গাজীপুর জেলা প্রশাসক এস এম আলম কারাগারে প্রবেশ করেন। পুলিশি টহল গাড়িবেষ্টিত হয়ে তিনি এখানে আসেন। কারা ফটকে নিজ গাড়িবহর নিয়ে প্রবেশ করেন। এসময় তার সাথে ছিলেন গাজীপুরের সিভিল সার্জন আলী হায়দার।  অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে প্রবেশ করেন গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন-উর রশীদ।

শনিবার রাত ৯ টা ৫০ মিনিটে অ্যাম্বুলেন্স তিনটি কারা ফটকে আসে।  তিনটি অ্যাম্বুলেন্সই পুলিশি টহল গাড়িবেষ্টিত হয়ে এখানে আসে।  নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয় কারাগার ঘিরে।

এর আগে শনিবার বিকেল পৌনে ৩টার দিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ফাঁসি কার্যকরে আদেশ কারাগারে পৌঁছে।  আদেশে ফাঁসি কার্যকরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয় এবং কারা কর্তৃপক্ষ আদেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়।

ফাঁসি কার্যকরের পর মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের চালা গ্রামে হচ্ছে মীর কাসেম আলীর দাফন।

প্রশাসনের দায়িত্বশীল সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।  মীর কাসেমের স্ত্রী খন্দকার আয়েশা খাতুনও শনিবার সন্ধ্যায় কারাগারে মীর কাসেমের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বিষয়টি জানিয়েছেন।

মীর কাসেমের দাফন নির্বিঘ্ন করতে সড়ক পথে নেয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা।  মোড়ে মোড়ে বসানো হয়েছে পুলিশের নিরাপত্তা চৌকি।  মানিকগঞ্জ শহর থেকে হরিরামপুরের চালা পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার রাস্তার প্রতিটি বাঁকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন।

মানিকগঞ্জে মীর কাসেম আলীর কবর খোঁড়ার কাজ করছেন চালা ইউনিয়নের সাকুচিয়া গ্রামের মৃত. কছিম উদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে সামেজ উদ্দিন বিশ্বাস (৭০)।

মীর কাসেমের নিজ অর্থায়নে নির্মিত মসজিদের উত্তর পাশে লেবু বাগান আর বাঁশ ঝাড়ের কাছেই সমাহিত করা হচ্ছে তাকে।  বাঁশ কাটা হচ্ছে, আনা হয়েছে তালাই বাঁশ।

সেখানকার আশপাশের মানুষের আনাগোনা সীমিত করে দেয়া হয়েছে।  পুরো এলাকাটি পুলিশ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।  বিশেষ কাজ ছাড়া লোকজনের বাড়ির বাইরে যাওয়ার ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।

পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, মীর কাসেম আলীর লাশের সঙ্গে তার দুই মেয়ে যেতে পারেন।

হরিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম জানান, মীর কাসেম আলীর লাশ দাফনে যাতে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয় সে জন্য ব্যাপক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
৩ সেপ্টেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে