গাজীপুর থেকে : ‘বিয়ের কয়েক বছর পর থেকেই সোলায়মান টুম্পাকে নানাভাবে নির্যাতন করে আসছিল। একমাত্র ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে স্বামীর সংসার করছিল মেয়ে। কিন্তু মেয়েটাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে সোলায়মান’।
এভাবে কথাগুলো বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহত নুশরাত জাহান টুম্পার বাবা বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম। একইভাবে নানার কান্নার সঙ্গে কান্নায় ভেঙে পড়ে নিহত টুম্পার একমাত্র ছেলে নির্জন ইসলাম নাফি (৮)।
নির্জনের ভাষ্য, ‘বাবা প্রায় সময়ই মাকে মারধর করতো। আমি মায়ের কাছে গেলে বাবা আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিত। আমি আমার মায়ের হত্যাকারীর শাস্তি চাই।’
গাজীপুর কোনাবাড়ি-কাশিমপুর সড়কে মঙ্গলবার বিকেলে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে নিহতের বাবা নজরুল ইসলাম ও নিহতের ছেলে আবেগাপ্লুত হয়ে টুম্পার হত্যাকারীদের বিচারের দাবি জানান।
গৃহবধূ নুশরাত জাহান টুম্পাকে (৩০) হত্যার প্রতিবাদে এবং অভিযুক্ত স্বামী গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর সোলায়মান মিয়ার বিচারের দাবিতে এক মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। এতে এলাকার শত শত নারী-পুরুষ অংশ নেন।
মানববন্ধনে টুম্বার বাবা কাউন্সিলর সোলায়মানকে অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মুখোমুখি করার দাবি জানান। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর কাছে এ ঘটনার সুষ্ঠু এবং ন্যায়বিচারের দাবি করেন।
উল্লেখ্য, রোববার বিকেলে সোলায়মান, টুম্পা, টুম্পার ভাই সাঈদ ও তার স্ত্রীসহ বসুন্ধরা এলাকায় বেড়াতে যান। সেখান থেকে অন্য জায়গায় বেড়াতে যাওয়ার সময় গাড়িতে স্বামী সোলায়মানের মোবাইলে অন্য একটি মেয়ের ছবি দেখতে পেয়ে তার সঙ্গে টুম্পার ঝগড়া ও কথা কাটাকাটি হয়।
একপর্যায়ে রাতে সোলায়মান ও টুম্পাকে তাদের বাসায় নামিয়ে ভাই সাইদ তার স্ত্রীকে নিয়ে চলে যান। এসময় তাদের সন্তান নাফি (৮) উত্তরাতে তার নানা নজরুল ইসলামের বাসায় ছিল।
পরে রাতের কোনো এক সময় টুম্পাকে নির্যাতন করে হত্যার পর সোলায়মান বাসার বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে পালিয়ে যান। সকালে কাজের বুয়া বাসার দরজা বন্ধ দেখতে পেয়ে টুম্পার মাকে ফোন করেন।
খবর পেয়ে তারা ওই বাসায় এসে জানালা ভেঙে ঘরে ঢুকে খাটের ওপর টুম্পার দেহ পড়ে থাকতে দেখেন। পরে তাকে উদ্ধার করে উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক টুম্পাকে মৃত ঘোষণা করেন।
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি