কাপাসিয়া (গাজীপুর) থেকে এফ এম কামাল হোসেন: বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আলহাজ্ব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ ) আ স ম হান্নান শাহ্ কে আট দফা জানাজার পর ঘাগটিয়া গ্রামে তাঁর মা-বাবার কবরের পাশে সমাহিত করা হয়েছে।
আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টায় গাজীপুরে কাপাসিয়ার পারিবারিক গোরস্থানে অন্তিম শয্যায় শায়িত হলেন।
আজ সকাল ৯টা ২০ মিনিটে গাজীপুর শহরের ভাওয়াল রাজবাড়ী মাঠে, সকাল সাড়ে ১১টায় কাপাসিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে, বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে ঘাগটিয়া চালা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ও বিকেল সাড়ে ৪টায় ঘাগটিয়া গ্রামের বাড়ি সংলগ্ন জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে সর্বশেষ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। চার দফা জানাজায় লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। আশপাশের রাস্তায় দাঁড়িয়েও অনেকে জানাজায় শরিক হন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার মহাখালী ডিওএইচএস জামে মসজিদ, সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্রাঙ্গণ, নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণ ও মহাখালীর গাউসুল আজম জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে চারদফা জানা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
বর্ষিয়ান এ নেতাকে শেষবারের মতো দেখতে গতকাল সকাল থেকে পার্শ্ববর্তী কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকার বিএনপি দলীয় নেতাকর্মীরা কাপাসিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জড়ো হতে থাকেন। সকাল সোয়া ১০টা নাগাদ বিদ্যালয় মাঠ ছাপিয়ে আশ-পাশের রাস্তাও লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়।
বাড়ির ছাদে ওঠেও প্রিয় নেতার কফিন দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। ওই সময় নেতাকর্মীদের সবার চোখই ছিল অশ্রুসিক্ত। অনেককেই কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা গেছে। কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এফ এম কামাল হোসেন বলেন, ‘হান্নান শাহকে হারিয়ে আমরা একজন অভিভাবক হারিয়েছি। র্দীঘ ২৫ বছরেরও অধিক সময়ে কাপাসিয়ার বিএনপির নেতা-কর্মীরা তাকে নেতা বলে জানত। শুধু কাপাসিয়া নয়, গোটা গাজীপুরে হান্নান শাহের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।’
এর আগে হান্নান শাহের মরদেহ সিএমএইচ থেকে সকাল সাড়ে ৮টায় গাজীপুরের রাজবাড়ী মাঠে পৌঁছায়। সেখানে কালো কাপড়ে তৈরি অস্থায়ী মঞ্চে তাঁর মরদেহ রাখা হয়। এ সময় মাঠে বিএনপি নেতাকর্মী ও সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে। বিএনপির চেয়ারপার্সনের প্রতিনিধি হয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সবগুলো জানাজায় বক্তব্য রাখেন এবং দাফন তদারকি করেন। তিনি হান্নান শাহ্র পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা এবং নেতা-কর্মীদের শান্তনা দেন। রাজবাড়ী মাঠে অনুষ্ঠিত জানাজায় হান্নান শাহের দুই ছেলে শাহ্ রেজাউল হান্নান ও শাহ্ রিয়াজুল হান্নান ছাড়াও ভাইস চেয়ারম্যান এম এ জেড জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা হাসান উদ্দিন সরকার, জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, গাজীপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ ইজাদুর রহমান মিলন, কালিয়াকৈর পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমানসহ জেলা, মহানগর, বিভিন্ন উপজেলার বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মী শরিক হন।
পরে সকাল সাড়ে ১১টায় কাপাসিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় শরিক হন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন মেহেদি, কাপাসিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আমানত হোসেন খানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অসংখ্য নেতাকর্মী, নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ও বিএনপির নেতাকর্মীরা। এর আগে হান্নান শাহের বড় ছেলে শাহ্ রেজাউল হান্নান বক্তব্যকালে অসংখ্য নেতাকর্মী কান্নায় ভেঙে পড়েন।
বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে হান্নান শাহের নিজের গ্রাম ঘাগটিয়াচালা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজা হয়। বিকেল সাড়ে ৪টায় ঘাগটিয়া জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে অষ্টমদফা জানাজার পর বিকেল সাড়ে ৫টায় মা-বাবার কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয় ।
দাফনের আগে তাঁর পরিবারের সদস্যরা একে একে শেষবারের মতো মরদেহ দেখেন। ওই সময় স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়লে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
দাফনের পর ১০ সদস্যের একটি চৌকস সেনাদল সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে মরণোত্তর সম্মান প্রদর্শন করেন। এরপর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ড. মঈন খান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, নাজিম উদ্দিন আলম, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি এ কে এম ফজলুল হক মিলন, সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুলসহ নেতারা চেয়ারপারসন ও বিএনপির পক্ষ থেকে কবরে পুস্পস্তবক দেন। পরে একে একে জেলা ও উপজেলা বিএনপিসহ অঙ্গ সংগঠনের পক্ষ থেকে নেতাকর্মীরা কবরে পুষ্পস্তবক দেন।
৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস