শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০৯:১৯:৪০

কাপাসিয়ায় নৌকাডুবি, মৃতের সংখ্যা নারীসহ ৫

কাপাসিয়ায় নৌকাডুবি, মৃতের সংখ্যা নারীসহ ৫

কাপাসিয়া (গাজীপুর) থেকে এফ এম কামাল হোসেন: নদীর ওপাড়ে মেলায় বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে পক্ষকালব্যাপী মেলা ও সংগীতানুষ্ঠান শুরু হয়ে যায় সন্ধ্যার পর পরই। এপাড় থেকে বিভিন্ন গ্রামের শ শ শিশুসহ নারী-পুরুষ ওই অনুষ্ঠানে যেতে খেয়াঘাটে ভিড় করে। মাঝিদেরও ছিল পোয়াবারো অবস্থা, তারা ওই সুযোগে ভাড়া ভাড়িয়ে ঠাসাঠাসি করে যাত্রী নিয়ে ওপারে পৌঁছে দিচ্ছিলো। হাঁকাহাঁকির হুজোগে প্রায় অর্ধশত যাত্রী তুলে ফেলে এক মাঝি। নৌকাঠাসা যাত্রী নিয়ে ওপারে পৌঁছেও যাচ্ছিলো। পাড়ের কাছাকাছি পৌঁছার পরই আচমকা নৌকাটি যাত্রীসহ ডুবে যায়। তাৎক্ষণিক অন্তত ৪০জন সাঁতরে পাড়ে ওঠলেও তলিয়ে যান অন্যরা।
গত শুক্রবার রাতে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার তারাগঞ্জ এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীতে নৌকাডুবির মর্মন্তুদ ওই ঘটনাটি ঘটে। রাত আড়াইটার দিকে ঢাকা থেকে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের একটি ডুবুরিদল ও নৌ-বাহিনীর একটি ডুবুরিদল ঘটনাস্থল পৌঁছে আরো ২জনের মরদেহ উদ্ধার করে। নিহত ওই ২জন হলেন নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার লাখপুর গ্রামের হাছেন আলীর ছেলে আসু মিয়া (৪৫) ও পাশের পাড়াতলা গ্রামের তারা মিয়ার ছেলে আবদুল কাইয়ুম (১৭)। নিহত আবদুল কাইয়ুম এবার পাশের তারাগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। এর আগে নারীসহ আরো ৩জনের মরদেহ উদ্ধার করেছিল স্থানীয়রা। নৌকাডুবির ঘটনায় মৃতের সংখ্যা নারীসহ ৫জনে দাঁড়িয়েছে।

স্থানীয়রা জানায়, কাপাসিয়ার তারাগঞ্জ তাজউদ্দীন ও ময়েজউদ্দিন স্মৃতি সংসদ তারাগঞ্জ স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে গত ১৬ ডিসেম্বর থেকে পক্ষকালব্যাপী বিজয় মেলার আয়োজন করেছিল। গত শুক্রবার ছিল মেলার সমাপনী দিন। ওইদিন রাতে সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন ছিল মেলায়।

তারাগঞ্জ গ্রামের কলেজছাত্র মাসুদ রানা জানান, মেলার সংগীতানুষ্ঠানে যেতে নদীর পূর্বপাড়ে নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার পাড়াতলা খেয়াঘাটে ভিড় করে বিভিন্ন গ্রামের কয়েক শ শিশুসহ নারী-পুরুষ।

পাড়াতলা গ্রামের কৃষক মানিক মিয়া জানান, খেয়াঘাটে মাত্র ৩টি ইঞ্জিনচালিত নৌকা ছিল। তা দিয়েই ওই বিপুল পরিমাণ যাত্রী পার করছিল মাঝিরা। ওই সুযোগে ভাড়া ভাড়িয়ে নৌকায় প্রতিযোগিতা করে যাত্রী তোলে মাঝিরা।

প্রত্যক্ষদর্শী পাড়াতলা গ্রামের কৃষক আবদুল লতিফ জানান, ঝিলন নামে তরুণ মাঝি তার নৌকায় ঠাসাঠাসি করে যাত্রী তোলে। কেউ কেউ অতিরিক্ত যাত্রী তুলতে নিষেধ করলেও ঝিলন চেঁচিয়ে বলে, ‘আপনার ডর লাগলে ওইঠেন না।’ এরপর প্রায় ৫০জন যাত্রী নিয়ে নৌকাটি পাড়ের কাছাকাছি যেতেই হঠাৎ ডুবে যায়।


প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, তাৎক্ষণিক অন্তত ৪০জন যাত্রী সাঁতরে পাড়ে ওঠলেও অন্যরা তলিয়ে যান। ঘটনার পরই স্থানীয়রা দুই শিশু ও এক নারীকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। তারা আশঙ্কামুক্ত বলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

পরে তারাগঞ্জ ও পাড়াতলা গ্রামের প্রায় শতাধিক মানুষজন উদ্ধার তৎপরতায় নামে। তারা নদীতে জাল ফেলে তলিয়ে যাওয়া যাত্রীদের উদ্ধারের চেষ্টা চালায়। খবর পেয়ে পুলিশও উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নেয়।

কাপাসিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) দুলাল মিয়া জানান, রাত ১২টা পর্যন্ত পুলিশের সহযোগিতায় স্থানীয়রা নারীসহ ৩জনের মরদেহ উদ্ধার করে। রাত ১২টায় ঢাকা থেকে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ৬ সদস্যের একটি ডুবুরিদল ঘটনাস্থল পৌঁছে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। ওই ডুবুরিদল রাত আড়াইটার দিকে আরো ২জনের মরদেহ উদ্ধার করে।

এসআই দুলাল মিয়া আরো জানান, নৌকাডুবির ঘটনায় আরো কেউ নিখোঁজ রয়েছে বলে স্বজনদের কোনো দাবি পাওয়া যায়নি। এরপরও নদীর ওই এলাকাসহ আশপাশে গতকাল দিনভর ব্যাপক তৎপরতা চালায় ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স ও নৌবাহিনীর পৃথক দুটি ডুবুরিদল।

কাপাসিয়া থানার পরিদর্শক (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক জানান, স্বজনরা আবেদন করায় মানবিক কারণে ময়নাতদন্ত ছাড়াই গতকাল সকালে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে অতিরিক্ত যাত্রী তোলায় নৌকার মাঝির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে। ওসি আবু বকর সিদ্দিক আরো জানান, ঘটনার পর থেকে মাঝি পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আনিছুর রহমান বলেন, ‘ঘটনা তদন্তের জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।’
৩১ ডিসেম্বর,২০১৬/এমটি নিউজ২৪ ডটকম/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে