এনামূল হক আকন্দ, শ্রীপুর (গাজীপুর) থেকে : পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকানগুলোয় বিচ্ছিন্ন আলোচনায় প্রসঙ্গ আগামী জাতীয় নির্বাচন। আর সম্ভাব্য প্রার্থীরা স্থানীয় পর্যায়ে উন্নয়ন ও সাংগঠনিক কাজে সম্পৃক্ততা প্রমাণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। গাজীপুর জেলার সর্ববৃহৎ আসন গাজীপুর-৩।
এটি শ্রীপুর উপজেলাসহ ভাওয়ালগড়, পিরুজালী ও মির্জাপুর নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী আসন। ৬ষ্ঠবারের মতো সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আওয়ামী লীগে উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট মো. রহমত আলী। ক্লিন ইমেজের কারণে সাধারণ মানুষের কাছে তার জনপ্রিয়তা ব্যাপক। কিন্তু বার্ধক্যজনিত কারণে বছরখানেক ধরে অসুস্থ তিনি।
গাজীপুর জেলা স্বেচ্চাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন মৃধা জর্জ বলেন, দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে শ্রীপুরকে উন্নয়নের সোপানে পৌঁছে দেয়ার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন বর্তমান এমপি। তিনি শ্রীপুরে অসংখ্য রাস্তাঘাট, পুল-কালভার্ট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণে সহযোগিতা করেছেন।
শ্রীপুরে ভবিষ্যৎ সংসদ সদস্যা হিসেবে তার উত্তরসূরি জামিল হাসান দুর্জয়কে দেখতে চান মানুষ। এমপি রহমত আলীর ছেলে অ্যাডভোকেট মো. জামিল হাসান দুর্জয় ভারতের আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়ে দুই দশক আগে নিজের এলাকায় দলের প্রাথমিক সদস্য পদ নিয়ে রাজনীতিতে সক্রিয় হন। সাংগঠনিক নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রেখেছেন।
দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে নিষ্ক্রিয় হাজারো নেতাকর্মীকে সক্রিয় করে তুলেছেন। বর্তমানে জামিল হাসান দুর্জয়ের নেতৃত্বে শ্রীপুর উপজেলাসহ ভাওয়ালগড়, পিরুজালী ও মির্জাপুরে দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী একাট্টা। উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষকলীগ, শ্রমিকলীগসহ সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা আগামী সংসদ নির্বাচনে জামিল হাসান দুর্জয়কে দলের প্রার্থী হিসেবে চাইছেন।
শ্রীপুর উপজেলা বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক এস. এম. জাহাঙ্গীর আলম সিরাজী বলেন, জামিল হাসান দুর্জয়ের নেতৃত্বে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে ‘কেন্দ্রভিত্তিক’ উন্নয়ন সভা করা হচ্ছে। সেখানে আওয়ামী লীগ সরকারের সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সুফলভোগীরাই তুলে ধরছেন। এতে উপজেলাব্যাপী ব্যাপক সাড়া পড়েছে।’
অপরদিকে এই আসনে দীর্ঘদিনের প্রায় একচ্ছত্র আধিপত্য ভাঙতে মরিয়া গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ। ছাত্রজীবনে গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের ভিপি ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে শ্রীপুর উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন।
সব সময় ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়নের কারণে তৃণমূলের নেতাকর্মীর সঙ্গে তার গভীর সুসম্পর্ক আছে বলে দাবি করেন ইকবাল হোসেন সবুজের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র আলহাজ আনিছুর রহমান। মেয়র জানান, নির্বাচনকে সমানে রেখে শ্রীপুরের তৃণমূল মানুষের সঙ্গে উঠান বৈঠক করছেন ইকবাল হোসেন সবুজ।
দলটির কেন্দ্রীয় পর্যায়ে তার বড় ধরনের গ্রহণযোগ্যতা আছে বলেও তার অনুসারীরা দাবি করেন। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাণ্ডারি হিসেবে শ্রীপুরে তার প্রার্থিতা সবচেয়ে শক্তিশালী হবে এমনটি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা মাহতাব উদ্দিন।
ওদিকে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপিতে স্থবিরতা নেমে এসেছে। এর মধ্যেও আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে ঈদের পর থেকে কর্মতৎপরতা শুরু করেছে দলটির সম্ভাব্য প্রার্থীরা। সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন- গাজীপুর জেলা বিএনপির সদস্য ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব অধ্যক্ষ ইজাদুর রহমান মিলন, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সবুজ, কেন্দ্রীয় ওলামা দলের সাবেক প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাওলানা এসএম রুহুল আমীন।
মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় আছেন ডা. ক্যাপ্টেন (অবসরপ্রাপ্ত) এমএ সালাম আকন্দ। এদিকে আওয়ামী লীগ সরকার আমলে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে এলাকায় জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। তিনিও এলাকায় আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহণের পাশাপাশি নিয়মিত দলীয় কর্মসূচি পালন করেন। তাই আগামী নির্বাচনে ধানের শীষে মনোনয়ন পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
রফিকুল ইসলাম বাচ্চু ইতিমধ্যে দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করেছেন বলে তার সমর্থকদের দাবি। সম্প্রতি রোহিঙ্গা ইস্যুতে উখিয়া ও টেকনাফে মেডিকেল টিম নিয়ে অসহায় রোহিঙ্গাদের সেবা দিয়ে কেন্দ্রের নজর কেড়েছেন বলেও অনেকে জানিয়েছেন। এই আসনে মনোনয়ন প্রাপ্তির দৌড়ে তাকে অনেকেই শক্ত প্রার্থী হিসেবে মনে করছেন।
অপর দিকে সাখাওয়াত হোসেন সবুজ ছাত্রদলের রাজনীতি থেকে উঠে এসে বর্তমানে বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক। আগামী সংসদ নির্বাচনে নিজের প্রার্থিতা নিশ্চিত করতে তিনি শ্রীপুরের তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করেছেন। কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নিজেকে আরো শক্ত অবস্থানে নিতে দৌড়ঝাঁপেও ব্যস্ত সময় পার করছেন।
অপর প্রার্থী মাওলানা এসএম রুহুল আমীন দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বিএনপির অঙ্গসংগঠন ওলামা দলের সাবেক প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তিনিও মাঠে আছেন। কেন্দ্রে তার প্রতিনিয়ত যোগাযোগ ও স্থানীয় পর্যায়ে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে সখ্যের কারণে তার প্রার্থিতার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন বিএনপির এক অংশের নেতারা। অপর প্রার্থী ডা. ক্যাপ্টেন (অবসরপ্রাপ্ত) এমএ সালাম আকন্দ।
স্থানীয় রাজনীতিতে তিনিও সম্পৃক্ততা বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি পৌর বিএনপির উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য। আগামী নির্বাচনে ব্যক্তি ইমেজ, দলীয় কর্মকাণ্ড তৃণমূল রাজনীতিতে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও বিগত দিনে শ্রীপুরের উন্নয়নে ভূমিকা- এগুলোই প্রার্থিতা নিশ্চিতে শক্ত ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। -এমজমিন
এমটিনিউজ/এসবি