নিউজ ডেস্ক: স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের ছেলে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমদ সোহেল তাজ। জৌলুসেই বড় হওয়া। বিত্তের মধ্যেই বসবাস। বাবা নেই। তাই মাকেই সামলাতে হয়েছে ছেলেমেয়েদেরকে। সবার ছোট এবং আদুরে হওয়ায় ছেলের বকে যাওয়ার দুশ্চিন্তা অন্য সব মায়ের মত তার মনেও ভর করেছিল।
কিন্তু, তিনি তো অন্য রকম স্ত্রী এবং মা। যিনি স্বামীকে উৎসাহ-অুনপ্রেরণা দিয়েছিলেন দেশকে স্বাধীন করার লড়াইয়ে। ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক ১৬ ডিসেম্বর সেটি সফল হয়েছে। এরপর ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর হারান স্বামী বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদকে। জেলখানায় ঘাতকের বুলেট কেড়ে নেয় জোহরা তাজউদ্দিনের প্রিয়সঙ্গী ও বন্ধুটিকে।
এরপরই সন্তানদের নিয়ে তার জীবনযুদ্ধ শুরু। তাই সন্তানদের কিভাবে আগলে রাখতে হয়, তা ভালোই জানতেন জোহরা তাজউদ্দিন। তারই খণ্ডচিত্র পাওয়া গেল ইংরেজি নববর্ষ ২০১৮ উপলক্ষে ছেলে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমদ সোহেল তাজের মাধ্যমে।
নববর্ষ উপলক্ষ্যে মা জোহরা তাজউদ্দিন সোহেল তাজকে চিঠি লিখতেন। ছোট্ট চিঠি। কিন্তু, তাতে কতশত বার্তা। জীবন গড়ার রসদ। বহু বছর আগে লেখা এমনই একটি স্মৃতিঘন মায়ের চিঠি সোহেল তাজ ২০১৮ সালের শুভেচ্ছাসহ ফেসবুকে দিয়েছেন।
সেখানে তিনি লেখেন, ‘শুভ নববর্ষ ২০১৮! আমার আম্মা বহু বছর আগে এই চিঠি নববর্ষ উপলক্ষ্যে আমাকে লেখেন।’
সেই চিঠিতে জোহরা তাজউদ্দিন লেখেন, ‘প্রিয় সোহেল, নববর্ষের শুভেচ্ছা ভালোবাসা নিও। আবার একটি নুতন বৎসর আমরা উপহার পেলাম। বাবা সোহেল, এই বৎসর তোমার জন্য বয়ে আনুক অনেক সাফল্য, জীবনের দরজা তোমার প্রতিষ্ঠিত হবার পথকে উন্মুক্ত করুক। সময়কে অনেক সাবধানে অনেক মূল্য দিয়ে ব্যবহার করবে।’
বাবার অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করার তাগিদ দিয়ে ছেলেকে তিনি লেখেন, ‘বাবার অনেক আরাধ্য কাজ পড়ে আছে। নিজেকে যোগ্য করে তৈরি হতে হবে। আমি তুমি আমরা সবাই কাজের মধ্যে বেঁচে থাকব, এই আশার বাণী এবং শুভেচ্ছা ভালোবাসা জানালাম।’
‘নতুন বৎসরে তোমার টেলিফোন ও চিঠি, ফ্যাক্সে আমার সাথে কথা বলবে। আবার একটি নতুন বৎসর আমরা উপহার পেলাম। এই উপহারের দাম অমূল্য। এই অমূল্য জিনিসকে যত্ন নিও। সদ্ব্যবহারের মধ্যে যত আনন্দ পাওয়া যায়, পৃথিবীর কোনো কিছুতে এত আনন্দ নেই। একে গ্রহণ কর। প্রাণ ঢেলে সাজিয়ে নাও, তুমি পারবে। দৃঢ় মনোবল তোমাকে সেই শক্তি যোগাবে।’
নববর্ষে মায়ের লেখা পুরনো চিঠি পড়ে ও বাবার কথা স্বরণ করে আপ্লুত হয়ে পড়েন সোহেল তাজ।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর জোহরা তাজউদ্দিন মারা যান। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের সহধর্মিনী জোহরা তাজউদ্দিন আমৃত্যু আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। ১৯৭৮-৮১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে দলকে সুসংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন তিনি।
সোহেল তাজও এখন প্রতিমন্ত্রী বা এমপি নেই। নেই রাজনীতিতেও। কিন্তু, তার ত্যাগ, সততা ও নির্মোহ মূল্যায়ন রয়ে গেছে যেমন দলে, তেমনি দেশের মানুষের কাছে।
আওয়ামী লীগের যেকোনো চ্যালেঞ্জিং কাজে দলীয় নেতাকর্মীদের আলোচনায় উঠে আসে সোহেল তাজের নাম। নববর্ষে তাকে লেখা মায়ের চিঠিটি রাজনীতিতে আগ্রহী তরুণ কর্মীদের পাথেয় হয়ে থাকবে নিশ্চয়।
এমটিনিউজ২৪.কম/এইচএস/কেএস