নিউজ ডেস্ক : প্রিয়ক-এ্যানি দম্পতির একমাত্র সন্তান প্রিয়ংময়ী তামাররা। ১২ মার্চ নেপাল ভ্রমণের উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগ পর্যন্ত পুরো বাড়ি জুড়েই ছিল প্রিয়ংময়ী বিচরণ। ডুপ্লেক্স বাড়িটির নিচ তলা থেকে উপর তলা পর্যন্ত মাতিয়ে রাখতো সে। বাড়িটির মধ্যে অন্য কোনো শিশু সন্তান না থাকায় পুরো বাড়িতেই ছিল প্রিয়ংময়ীর একছত্র আধিপত্য।
পরিবারের সবারই বিশেষ নজর ছিল প্রিয়ংময়ীর দিকে। বিমানে উঠার কথা বলতে বলতে দাদু ফিরোজা বেগমের কাছ থেকে সে বিদায় নিয়েছিল। কিন্তু এই বিদায়ই যে শেষ বিদায় হবে তা বুঝতে পারেনি প্রিয়কের মা। সন্তান আর নাতনি হারানো ফিরোজা বেগম এখন সেসব স্মৃতি মনে ডুকরে ডুকরে কেঁদে ওঠেন।
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার জৈনা বাজার এলাকার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ঘেঁষা দোতলা বাড়িটিতে আজ সাতদিন ধরে এক রকম খাঁ খাঁ পরিবেশ। অথচ কিছুদিন আগেও এ বাড়িটি ছিল প্রাণবন্ত। আজ শোকার্ত স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীরা খুঁজছে বিমান বিধ্বস্তের প্রাণ হারানো ছোট্ট প্রিয়ংময়ীকে। এত শোকার্ত লোকের মধ্যেও তিনবছর বয়সী এই শিশুটিকে ঘিরেই শোকের আবহ তৈরি হয়েছে প্রিয়কের বাড়িতে। অনেকেই প্রিয়ংময়ীর স্মৃতিচারণ করে অনুভব করছেন ছোট্ট প্রিয়ংময়ীকে যে তার বাবাকে সহযাত্রী করে আজ চলে গেছে না ফেরার দেশে।
এই বাড়িটিতে দীর্ঘ সাড়ে চার বছর ধরে গৃহপরিচারিকার কাজ করছেন ছবি বেগম। তার সঙ্গেই প্রিয়ংময়ীর অনেক স্মৃতি রয়েছে। সে জানাল, প্রিয়ংময়ী বিমানে ওঠার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েছিল। ১২ মার্চ (সোমবার) বিমানে ওঠার জন্যই খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠেছিল সে। প্রতিদিন গোসলের সময় কান্নাকাটি করলেও সে দিন আর সে কাঁদেনি। তার দাদু ফিরুজা বেগম নিজ হাতে তাকে গোসল করিয়ে প্রস্তুত করে দিয়েছেন। তাকে ঘিরেই বাড়িটিতে প্রাণের অস্তিত্ব সৃষ্টি হয়েছিল। সে বাবা ও তার দাদু ফিরুজা বেগমের খুব ভক্ত ছিল। ভালোবাসার কারণে ফিরুজা বেগমকে দাদুমনি বলে অভিহিত করতো প্রিয়ংময়ী। মায়ের শাসনের নানা ধরনের অভিযোগ দাদুর কাছেই করতো। দাদু আর নাতনির দুজনের খুনসুটিতে বিশাল বাড়িটিও নানা সময়ে ব্যস্ত হয়ে উঠতো।
সন্তান আর নাতি হারিয়ে শোকে কাতর এখন ফিরুজা বেগম। তিনি গত কয়েকদিন ধরেই সব কিছুর বিনিময়ে হলেও তার ছেলে ফারুক হোসেন প্রিয়ক ও নাতনি প্রিয়ংময়ীকে ফিরিয়ে আনার দাবি জানাচ্ছে। স্বজনেরা এখন ফিরুজা বেগমকে সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা হারিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ১২ মার্চ সোমবার নেপালে বিমান বিধ্বস্তে ফারুক হোসেন প্রিয়ক ও তার শিশু কন্যা প্রিয়ংময়ী নিহত হয়। সোমবার দুপুরে অন্যদের সঙ্গে বাবা ও মেয়ের লাশ দেশে এসেছে।
নিহত প্রিয়কের চাচাতো ভাই লুৎফর রহমান সোমবার মরদেহ দুটি বাড়িতে আনার পর মঙ্গলবার সকাল ৯টায় শ্রীপুরের আব্দুল আউয়াল ডিগ্রি কলেজ মাঠ ও বেলা ১১টায় জৈনা বাজার এলাকার মাদবর বাড়ি মাঠে দু’দফা জানাজা শেষে প্রিয়ক ও প্রিয়ংময়ীর মরদেহ প্রিয়কের নিজ বাড়ির সামনেই দাফন করা হয়।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস