গাজীপুর প্রতিনিধি: গাজীপুরে জোড়া খুনের ঘটনায় হুফ্ফাজুল কোরআন মাদ্রাসার পরিচালক ইব্রাহিম খলিলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। খলিল ভাড়াটে খুনি দিয়ে স্ত্রী মাহমুদা আক্তার ও স্ত্রীর বোনের ছেলে মাদ্রাসাছাত্র মামুনকে হত্যা করেছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোক্তার হোসেন এই তথ্য জানিয়েছেন।
এদিকে গাজীপুরে জোড়া খুনের ঘটনায় বুধবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাতে গাজীপুর মেট্রোপলিটনের বাসন থানায় মামলা হয়েছে। নিহত মাহমুদার বাবা হানিফ গাজী এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় মাহমুদার স্বামী ও মাদ্রাসার পরিচালক ইব্রাহীম খলিলকে অভিযুক্ত করা হয়। এছাড়াও অজ্ঞাত আরও কমপক্ষে চারজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। পুলিশ এই মামলায় ইব্রাহিম খলিলকে গ্রেফতার করেছে।
বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোক্তার হোসেন বলেন, ‘মামলার বাদী হানিফ গাজীর অভিযোগের সঙ্গে নিহত মামুনের বাবার অভিযোগে কোনও পার্থক্য নেই। ফলে একটি মামলা রুজু হয়েছে।’
ওসি বলেন, ‘প্রায় দুই বছর ধরে ইব্রাহিম ওই মাদ্রাসা পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছেন। মাদ্রাসার একটি কক্ষেই সপরিবারে বাস করেন তিনি। তিনি নিজেও ছাত্রদের কোরআন শিক্ষা দেন। এছাড়া ইব্রাহিম মাদ্রাসার পাশে কৃষি পল্লী জামে মসজিদের ইমামতি করেন। ’
ওসি আরও বলেন, ‘খলিলকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে পুলিশকে জানায়, খুনিদের ভাড়া করে সে মাহমুদাকে হত্যা করে। মঙ্গলবার ভোরে ফজরের নামাজের সময় হলে তিনি মাদ্রাসার সব ছাত্রদের ডেকে তুলে নামাজ পড়ার জন্য মাদ্রাসার বাইরে অবস্থিত মসজিদে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু মামুন ঘুম থেকে উঠে মাদ্রাসার টয়লেটে যাওয়ায় তার যেতে দেরি হয়। সবাই চলে গেছে ভেবে খুনিরা মাহমুদাকে কুপিয়ে হত্যা করে। এ সময় মামুন টয়লেট থেকে বের হয়ে খুনের ঘটনা দেখে ফেলায় তাকেও কুপিয়ে হত্যা করা হয়।’
তবে কী কারণে ইব্রাহীম স্ত্রী মাহমুদাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছেন তা জানা যায়নি।
মঙ্গলবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ভোরে গাজীপুর মহানগরের চান্দনায় হুফ্ফাজুল কোরআন মাদ্রাসায় পরিচালক ইব্রাহীম খলিল তালুকদারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার (২৫) ও তার বোনের ছেলে ওই মাদ্রাসার নূরানী বিভাগের শিক্ষার্থী মামুনের (৭) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত মামুন ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার ফয়ালী রসুলপুর এলাকার মোহাম্মদ আবু সাঈদের ছেলে।
মাদ্রাসার ছাত্র সাব্বিরের বরাত দিয়ে বাসন থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আল আমিন জানান, সোমবার রাতে হুজুরকে (ইব্রাহিমকে) উদ্ধার হওয়া দা ধার দিতে দেখে সাব্বির। মঙ্গলবার ভোরে ফজরের নামাজে যাওয়ার আগে সাব্বিরকে দিয়ে মামুনকে হুজুরের কক্ষে ডেকে পাঠানো হয়।
মাহমুদার বাবা হানিফ গাজী জানান, তার বাড়ি চাঁদপুর সদরে। ৬ বছর আগে ইব্রাহিমের সঙ্গে মাহমুদার বিয়ে হয়। এটি যে ইব্রাহিমের দ্বিতীয় বিয়ে তা তারা জানতেন না। ৬/৭ মাস আগে তার আগের বিয়ের খবর জানতে পারেন। ২০১০ সালে প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয় ইব্রাহিমের। কয়েক মাস আগে প্রথম স্ত্রী ইব্রাহিমকে দেখে নেওয়ার হুমকিও দিয়েছিল। মাহমুদার সঙ্গে ইব্রাহিমের দাম্পত্য সম্পর্ক খারাপ ছিল না।
মামুনের মা আসমা জানান, তিনি গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুরে ভাড়া বাসায় থেকে বাংলাবাজার এলাকার একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। প্রায় এক বছর ধরে মামুন ওই মাদ্রাসায় লেখাপড়া করছে। শনিবার মামুন মাদ্রাসার বেতন ও হোস্টেলের খরচের টাকার জন্য রাজেন্দ্রপুরে তার কাছে আসছিল। পরে তিনি রবিবার বিকালে টাকাসহ মামুনকে মাদ্রাসায় দিয়ে আসেন। ঘটনার দিন রাত ৯টার সময় মামুনের সঙ্গে তার সর্বশেষ কথা হয়। তখনও এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে, এমন কোনও আলামত বুঝতে পারেননি তিনি।
বাবা শাহিদ জানান, মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে হুজুরের মোবাইল থেকে তাকে কল করা হয় এবং তাকে দ্রুত মাদ্রাসায় আসতে বলে কল কেটে দেওয়া হয়। তবে কণ্ঠটি হুজুরের মনে হয়নি।-বাংলা ট্রিবিউন