নিউজ ডেস্ক: গাজীপুরে ভাড়া নিয়ে বিতণ্ডার জেরে এক যাত্রীকে লাথি মেরে নীচে ফেলে বাসের চাকায় পিষে হত্যার ঘটনায় দায়ী বাস চালককে ভারত পালিয়ে যাওয়ার নদীতে ঝাপিয়ে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাকে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া থানা সীমান্ত এলাকার কংস নদী থেকে সোমবার বিকেলে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত ওই চালকের নাম রোকন উদ্দিন (৩৫)। তিনি ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার লতিফপুর গ্রামের কামাল হোসেনের ছেলে।
জয়দেবপুর থানার ওসি আসাদুজ্জামান ও নিহতের স্ত্রী ভাই জামাল উদ্দিন জানান, ঈদের ছুটি শেষে স্ত্রী পারুল আক্তারকে নিয়ে রোববার ময়মনসিংহের শ্বশুর বাড়ী থেকে আলম এশিয়া পরিবহনের একটি বাসে চড়ে গাজীপুরের বাসায় ফিরছিলেন স্থানীয় স্কটেক্স এ্যাপারেলস পোশাক কারখানার সালাহ্ উদ্দিন (৩৫)।
পথে তার সঙ্গে ভাড়া নিয়ে ওই বাসের সহকারী, হেলপার, সুপারভাইজার ও চালকের বাকবিতণ্ডা হয়। নিজেকে গাড়ি চালক পরিচয় দিয়ে সালাহ উদ্দিন মোট বাসভাড়া ৬০০ টাকা থেকে কিছু টাকা কম দিতে চাইলে এ বাকবিতণ্ডা হয়। পরে তিনি ভাড়ার পুরো টাকা পরিশোধ করেন। এসময় বাসের কন্ডাক্টর ও সহকারীরা সালাহ উদ্দিনকে লাঞ্চিত করে এবং হুমকি দেয়।
বাকবিতণ্ডার জেরে বাসের কন্ডাক্টর-হেলপার ও তাদের সহকারীরা সালাউদ্দিনকে মারধর করতে পারে এ আশংকায় সালাউদ্দিন তার ভাই জামাল উদ্দিনকে মোবাইল ফোনে জানিয়ে গাজীপুরের বাঘেরবাজার বাসস্ট্যান্ডে আসতে বলেন। খবর পেয়ে জামাল উদ্দিন ওই বাসস্ট্যান্ডে এসে ভাই ও ভাবীর জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন।
একপর্যায়ে বাসটি বাঘের বাজার এলাকায় পৌছলে বাসের শ্রমিকরা লাথি মেরে সালাহ উদ্দিনকে বাস থেকে নীচে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ফেলে দিয়ে তার স্ত্রীকে না নামিয়ে চালক বাসটি নিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। এসময় সালাহ্ উদ্দিন ও তার ভাই জামাল উদ্দিন গতিরোধের জন্য বাসের সামনে দাঁড়ালে চালক সালাউদ্দিনকে চাপা দিয়ে বাসটি নিয়ে পালিয়ে যায়।
এতে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে সালাউদ্দিন ঘটনাস্থলেই নিহত হন। পরে সালাউদ্দিনের স্ত্রীকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দুরে মহাসড়কের আমতলা এলাকায় বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এঘটনার পর বাসটিকে স্থানীয় হোতাপাড়া এলাকার ফুয়াং কারখানার সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে ফেলে রেখে বাসের চালক, কন্ডাক্টর, হেলপার ও সুপারভাইজারসহ অন্যরা পালিয়ে যায়।
পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বাসটিকে পরিত্যাক্ত অবস্থায় জব্দ করলেও চালক, কন্ডাক্টর ও হেলপারসহ অন্যদের গ্রেফতার করতে পারেনি। এ ঘটনায় রাতে নিহতের ছোট ভাই জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে জয়দেবপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় বাসের চালক, কন্ডাক্টর, হেলপার ও সুপারভাইজারকে আসামী করা হয়। পুলিশ ঘটনার পর থেকেই পলাতক আসামীদের গ্রেফতারের জন্য বিভিন্নস্থানে অভিযান চালায়।
এদিকে জব্দ হওয়া বাসের ভেতর থেকে একটি মামলার রশিদ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই মামলার রশিদে চালকের তথ্য ও মোবাইল নম্বর পাওয়া যায়। পরে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় জয়দেবপুর থানা পুলিশ গাজীপুর ও ময়মনসিংহের বিভিন্নস্থানে অভিযান চালায়। সোমবার বিকেল চারটার দিকে ঘাতক বাস চালক রোকন উদ্দিন তার মাকে নিয়ে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাচ্ছিল।
খবর পেয়ে জয়দেবপুর থানার এসআই আব্দুর রহমাসের নেতৃত্বে পুলিশ ওই এলাকায় অভিযান চালায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে রোকন উদ্দিন পার্শ্ববর্তী কংস নদীতে ঝাপ দেয়। এসময় পুলিশও নদীতে ঝাপিয়ে পড়ে রোকন উদ্দিনকে গ্রেফতার করে। ঘটনার সময় রোকন উদ্দিনের মা কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
জয়দেবপুর থানার ওসি আরো জানান, মামলার অন্য আসামীদেরও শীঘ্রই গ্রেফতার করা হবে। ঘটনার সঙ্গে বাসের মালিক দায়ী থাকলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে। নিহত সালাহ উদ্দিন ঢাকার আলুবাজার এলাকার মৃত শাহাবউদ্দিনের ছেলে। তিনি গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘেরবাজার এলাকার আতাউর রহমানের বাড়িতে স্ত্রীসহ ভাড়া থেকে স্থানীয় একটি পোশাক কারখানার গাড়ি চালাতেন।