গাজীপুর থেকে : টঙ্গীর তুরাগতীরে লাখো মানুষের জমায়েত। বিশাল মাঠজুড়ে তৈরি শামিয়ানার ভেতরে-বাইরে মুসল্লিদের চলাফেরা। কখনো ঘন কুয়াশা, কখনো কনকনে শীত, কখনোবা শেষ পৌষের ঠান্ডা বাতাস। এর মাঝেই চলছে বয়ান, জিকির-আসকার, ইবাদত, খাওয়া-দাওয়া ও আনুষঙ্গিক কাজ। এভাবে চলছে টঙ্গীর তুরাগতীরে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিন। এদিকে ইজতেমায় যোগ দিতে আসা ছয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
গতকাল শুক্রবার বাদ ফজর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। এ পর্বে অংশ নিয়েছেন মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা। সকালের কনকনে শীত, ঘন কুয়াশা আর পৌষের শেষ দিকের ঠান্ডা বাতাসসহ নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে ইজতেমার দ্বিতীয় দিন অতিবাহিত করছেন সমবেত লাখো মুসল্লি। আগামীকাল রোববার আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমা।
শনিবার বাদ ফজর পাকিস্তানের মাওলানা আবদুর রহমানের আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দ্বিতীয় দিনের ইজতেমা। সকালে ইজতেমার মাঠ ও আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা যায়, চারদিকে প্রচুর মানুষের সমাগম। সড়ক-মহাসড়কে লাইন ধরে হাঁটছেন মুসল্লিরা। কারও মাথায়, কারও কাঁধে আবার কারও হাতে একাধিক ব্যাগ, শুকনা খাবার। এর মধ্যে অনেকে ইজতেমা ময়দানে জায়গা না পেয়ে বা দলছুট হয়ে ঘোরাঘুরি করছেন এদিক-সেদিক। অনেকে রাত যাপন করেছেন রাস্তার পাশে, গাছের নিচে। তবে সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে শুনছিলেন মাইকে ভেসে আসা মুরুব্বিদের বয়ান।
সকাল আটটার দিকে রাজধানী ঢাকার উত্তরার রানাবোলা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সড়কের পাশে তাঁবু টানিয়ে অবস্থান করছেন ইজতেমায় আসা মুসল্লিরা। তাঁদের কেউ গাছের নিচে, কেউবা সড়কের পাশের ঢালু জায়গায় অবস্থান করছেন। কথা হলো নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে আসা তাবলিগ জামাতের সাথি নুরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, শুক্রবার ইজতেমায় যোগ দিতে এসে রাত হয়ে গেছে। এ কারণে আর মাঠের ভেতরে ঢুকতে পারেননি। পরে চট বিছিয়ে রাত যাপন করেছেন সড়কের ঢালুতে। রাতে ভেতরে যাননি। এখন ভেতরে গেয়ে সাথিদের খুঁজবেন।
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থেকে আসা মুহাম্মদ আরিফ হোসেন বলেন, ‘ভেতরে নিজেদের জামাতের লোকজনেরই জায়গা হয় না। পরে বাধ্য হয়ে বাইরে চলে আসছি। তবে আল্লাহ ও রাসুলের কথা শুনতে এসে এসব কষ্ট কোনো কষ্ট মনে হয় না। সকাল থেকেই মুরুব্বিরা বয়ান করছেন।’
এদিকে, ইজতেমায় যোগ দিতে আসা ছয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তারা হলেন গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া এলাকার মো. ইয়াকুব আলী (৭৫), চট্টগ্রামের মোহাম্মদ আলী (৭০), সিরাজগঞ্জের খোকা মিয়া (৬০), নওগাঁর শহিদুল ইসলাম (৫৫), কুমিল্লার তমিজ উদ্দিন এবং রাজশাহীর আব্দুর রাজ্জাক (৬৭)।