এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : গাজীপুরের শ্রীপুরে রোপা আমনের ক্ষেতে বিপজ্জনক হারে বেড়েছে বানরের উপদ্রব। জঙ্গলে খাদ্যের সংকট দেখা দেওয়ায় উপজেলার বরমী ইউনিয়নের দরগারচাল ও পোষাইদ গ্রামে বানর পালের উপদ্রবে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। এরই মধ্যে কয়েক হেক্টর জমির ধানের শিষ কেটে ফেলেছে এই সব বন্যপ্রাণী।
আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই পাকা ধান তুলবেন কৃষকরা। তার আগেই বানরের উপদ্রব দেখা দিয়েছে। আর তাই বানর থেকে ধান রক্ষায় দিনরাত লাঠি নিয়ে ক্ষেত পাহাড়া দিচ্ছেন তারা।
স্থানীয় কৃষক ও গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক দিন পরই ঘরে উঠবে পাকা ধান। এখন ধানে শিষ এসেছে। ধানের শিষ খেয়ে ফেলছে বানরে। ঘন বনাঞ্চলের ভেতর থেকে ক্ষেতের ধান খেতেই আসছে বানরের দল। ধান গাছ ভেঙে শিষ খেয়ে ব্যাপক ক্ষতি করছে প্রাণীগুলো।
তারা আরো জানান, গত পাঁচ বছর ধরে এলাকায় বানরের উপদ্রব বেড়ে গেছে। খাদ্য সংকটের কারণে বানরের দল কৃষকের ফল, সবজি ও ক্ষেতের ধান খেয়ে ফেলছে। বোরো আমন দুই মৌসুমেই ধানক্ষেতে বানরের আক্রমণ হচ্ছে। বানরের উপদ্রব থেকে রক্ষা পেতে কৃষকরা পালা করে ধান ক্ষেতে পাহাড়া দিচ্ছেন। পোষাইদ ও দরগারচালা গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, বনের পাশে মাচা করে লাঠি হাতে ক্ষেত পাহাড়া দিচ্ছেন কৃষক।
স্থানীয়রা জানান, দুটি গ্রামে তিনটি বানরের দল রয়েছে। প্রতিটি দলে আছে ৭০ থেকে ১০০টি করে বানর। বুলদে বাইদ (নিচু ধানের জমি), ঠুডা বাইদ, হুয়াইদ বাইদ এলাকায় এদের বিচরণ সবচেয়ে বেশি। দুপুরের দিকে বানর কম আসলেও সকাল ও বিকেল এই দু’বেলাই বেশি আসে। বানরের পাল ক্ষেতের ধানের গাছ পেচিয়ে মোড়া করে বসে। তারপর এক এক করে ধানের শিষ ছিড়ে খায়।’
দরগাচালা গ্রামের কৃষক মফিজ উদ্দিন বলেন, ‘দেড় বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। প্রায়ই বানরের পাল ধান খাইতে আসে। এলাকার কৃষকরাও বানরের উপদ্রবে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তাই নিজেদের জমির ফসল রক্ষার্থে নিজেরাই বাঁশের লাঠি হাতে নিয়ে পাহাড়ায় থাকি। এখনই বানরের উৎপাত থেকে ফসল রক্ষা করতে না পারলে ধানের কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন মিলবে না।’
একই গ্রামের অপর কৃষক আলাউদ্দিন আলী বলেন, ‘দুই বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। বানর তাড়াতে স্ত্রীকে নিয়ে পালা করে ক্ষেত পাহাড়া দিচ্ছি। তারপরও ধান খেয়ে ও নষ্টা করে ফেলেছে প্রাণীগুলো।’
তিনি আরো বলেন, ‘দুই গ্রামের প্রত্যেক কৃষক বানর তাড়াতে ক্ষেতে পাহাড়া দিচ্ছে। লাঠি হাতে দেখলেই বানর দৌঁড়ে বনে লুকায়। সুযোগ পেলেই ক্ষেতে আবার ফিরে আসে।’
সহকারী বন সংরক্ষক ও শ্রীপুরের ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা রানা দেব বলেন, ‘ওই এলাকায় বানরের উপদ্রবের খবর পেয়েছি। খাদ্য সংকট দূর করতে বনের ভেতর ফলের গাছ রোপন করা হয়েছে। বানর রক্ষার পদক্ষেপ নেওয়ার সাথে গ্রামবাসীকেও সচেতন কারা হবে।’
বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক নারগিস সুলতানা বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না। স্থানীয়ভাবে খোঁজখবর নিয়ে বানর সুরক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’