জাহাঙ্গীর আলম, গাজীপুর প্রতিনিধি: গাজীপুর মহানগরের শালনা কাথোরা এলাকায় সঙ্গবদ্ধ ডাকাতের গুলিতে পরেশ চন্দ্র ঘোষ (৬৫) নামে এক মুক্তিযোদ্ধা নিহত হয়েছেন। এসময় ডাকাতদের ধারালো অস্ত্রের এলোপাতাড়ি কোপে ও মারধরে নিহতের ছেলে, ভাই ও দু’ভাতিজাসহ ৪ জন আহত হয়েছে। ডাকাতরা স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকাসহ বিভিন্ন মালামাল নিয়ে গেছে। রোববার মধ্যরাতে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কাথোরার মৈশানবাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত মুক্তিযোদ্ধার স্থানীয় যোগেশ চন্দ্র ঘোষের ছেলে। আহতরা হলেন- নিহতের ভাই নরেশ চন্দ্র ঘোষ (৫৮), ভাইপো বিধান কৃষ্ণ ঘোষ ও মৃনাল চন্দ্র ঘোষ। আহতদের গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হতাহতদের পরিবার ও এলাকাবাসি জানায়, রবিবার দিবাগত রাত সোয়া একটার দিকে মুখোশ পরা ১৪/১৫ জনের একটি সশস্ত্র একটি ডাকাতদল প্রথমে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কাথোরা মৈশান বাড়ি এলাকার কার্তিক চন্দ্র ঘোষের বাড়িতে হানা দেয়।
ডাকাতরা অস্ত্রের মুখে বাড়ির লোকজনকে জিম্মি করে এবং মারধর করে স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকাসহ বিভিন্ন মালামাল নিয়ে। ডাকাতদল পরে পার্শ্ববর্তী যোগেশ চন্দ্র ঘোষের বাড়ি যায় এবং বাহির থেকে সব ক’টি ঘরের দরজায় তালা আটকিয়ে দেয়। পরে তারা কলাপসিবল গেইটের তালা ভেঙ্গে মৃত যোগেশ চন্দ্র ঘোষের ছেলে স্থানীয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী নরেশ চন্দ্র ঘোষের ঘরে প্রবেশ করে। ডাকাতরা দ্বিতল ওই বাড়ির লোকজনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বিভিন্ন মালামাল লুট করতে থাকে। এসময় বাধা দেওয়ায় ডাকাতদলের সদস্যরা নরেশ চন্দ্র ঘোষ (৫৭) ও তার দু’ছেলে বিধান কৃষ্ণ ঘোষ ওরফে রনিকে (৩০) এবং মৃণাল কান্তি ঘোষ ওরফে জনিকে (২৮) ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপায়। আহতদের চিৎকার শুনে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে আসতে থাকলে ডাকাতরা লুণ্ঠিত মালামাল নিয়ে পালিয়ে যেতে থাকে। ডাকাতদল পালিয়ে যাওয়ার সময় পার্শ্ববর্তী ঘর থেকে নরেশের ভাতিজা গৌতম ঘোষ পলাশ (৩০) তাদের (ডাকাতদের) চিনে ফেলেছি বলে ঘর থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলে ডাকাতরা পলাশকে লক্ষ্য করে গুলি করে। কিন্তু ওই গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে পলাশের কপাল ঘেঁষে গিয়ে পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা পরেশ চন্দ্র ঘোষের (৭০) কপালে বিদ্ধ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই পরেশ নিহত এবং তার ছেলে পলাশ আহত হয়। খবর পেয়ে এলাকাবাসি এগিয়ে যেয়ে আহতদের উদ্ধার করে শহীদ তাজ উদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য একই হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে।
নিহতের জ্যেঠাতো ভাই আশোতোষ ঘোষ জানান, ডাকাতরা তার ঘরে হানা দিয়ে তার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে রাখে এবং তার মায়ের গলা থেকে স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নেয়।
স্থানীয় টেক কাথোরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামসুল হক জানান, নিহত পরেশ সিনেমা হলে চাকুরীর পাশাপাশি স্থানীয় সালনা বাজারে কাপড়ের ব্যবসা করতেন। প্রায় দু’সপ্তাহ আগে নরেশ চন্দ্র ঘোষের ছেলে রনির বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
জয়দেবপুর থানার এসআই পরিমল বিশ্বাস জানান, খুন ও ডাকাতি বলে প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তবে কি পরিমাণ মালামাল লুট হয়েছে তা জানা যায়নি।
৪ এপ্রিল ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/হাবিব/এইচআর