শনিবার, ১৪ মে, ২০১৬, ১১:২৯:১৫

১১ বছর পর বাবা-মাকে খুন করার কথা স্বীকার করলো ৪ ভাই !

১১ বছর পর বাবা-মাকে খুন করার কথা স্বীকার করলো ৪ ভাই !

গাজীপুর : দীর্ঘ ১১ বছর পর নিজের বাবা-মাকে হত্যা করার কথা স্বীকার করলো ৫ ভাই।  হত্যার পর তাদের লাশ বস্তাবন্দি করে তুরাগ নদীতে ভাসিয়ে দেয়ার কথাও স্বীকার করে চার ভাই।  

এমন লোমহর্ষক হত্যা রহস্য গাজীপুরের জয়দেবপুরে উন্মোচন করেছে র‌্যাব-১।

শনিবার সকালে র‌্যাব-১ এর এএসপি মোহাম্মদ নাজমুল হাসান রাজিবের নেতৃত্বে জয়দেবপুর থানার বাসন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চার ভাই মো. রমজান আলী (৫০), মো. বাবুল হোসেন (৩৭), মো. আরফান আলী (৩৫), ও মো. আকরাম আলীকে (৩০) গ্রেফতার করে এবং অন্যভাই আহসান হাবিব (৪৫) পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়

র‌্যাব-১ সূত্র জানায়, গ্রেফতারের পর আসামি পাঁচ ভাই মিলে ১১ বছর আগে বাবা ও সৎ মাকে হত্যা করার বিষয়টি স্বীকার করেছে।

জানা গেছে, গত ২০০৫ সালে হঠাৎ করেই মোহাম্মদ আলী (৬০), তার দ্বিতীয় স্ত্রী চায়না খাতুন (২৫) এবং ৪ চার বছরের পুত্রসন্তান ইমরান আলী নিখোঁজ হয়।

 আত্মীয়-স্বজন, এলাকাবাসী ও পাড়া প্রতিবেশীরা তাদের খোঁজ নিলে মোহাম্মদ আলীর প্রথম ঘরের সন্তানরা জানায়, তাদের বাবা রাগ করে দ্বিতীয় স্ত্রী ও পুত্রকে নিয়ে রংপুর চলে গেছেন।  এর আগেও তিনি রাগ করে রংপুর তার দ্বিতীয় স্ত্রীর বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন।  তাদের এ ধরনের কথা প্রতিবেশীরাও কোনো সন্দেহ করেননি।

এ ঘটনায় তার পুত্ররা কোনো জিডি বা আইনি ব্যবস্থা নেননি।  পরবর্তীতে কন্যা ও নাতির কোনো খবর না পেয়ে চায়না খাতুনের মা গাজীপুর আসলে অনেকেই তাকে বলে যে, তার মেয়েকে মেরে ফেলা হয়েছে।

দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ায় তিনি আইনের আশ্রয় নিতে পারেননি।  মেরে ফেলার হুমকি দেয়ায় তিনি আর ঢাকায় আসেননি।  পরে এলাকায় এসে খোঁজ না পেয়ে জয়দেবপুর থানায় একটি জিডি করেন।  
 
পরবর্তীতে তার কন্যা, জামাই ও নাতির রহস্যময় নিখোঁজের বিষয়টি র‌্যাবকে অবহিত করেন।

তার অভিযোগ পেয়ে র‌্যাব-১ তদন্তে নামে। অভিযোগে পেয়ে এলাকায় খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, ওই তিনজন দীর্ঘদিন ধরে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ রয়েছে।  

রংপুরে মোহাম্মদ আলীর শ্বশুরবাড়িতে খোঁজ নিয়েও তাদের হদিস না মেলায় সন্দেহ আরো ঘনীভূত হয়।  
পরে চার ভাইকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা স্বীকার করেন, ২০০৫ সালে তাদের বাবা ও সৎ মাকে হত্যা করে লাশ বস্তায় ভরে তুরাগ নদীতে ডুবিয়ে দেয়া হয়েছে।  সৎ ভাই ইমরানকে সিলেটের শাহজালাল (র.)-এর মাজারে রেখে আসে।

তারা জানান, দ্বিতীয় বিয়ের পর বাবা এবং তাদের আপন মায়ের সঙ্গে বিভিন্ন সময় ঝগড়াঝাটি লেগে থাকত।  পরে ২০০৫ সালে তাদের বাবা-সৎ মাকে ১০ শতাংশ এবং সৎভাই মো. ইমরানকে ১০ শতাংশ জমি লিখে দেন।  ওই জমি দেয়াকে কেন্দ্র করে বাবার সাথে তাদের প্রায়ই কথা কাটাকাটি হত।  

জমি দেয়ার অনুমান এক সপ্তাহ পর ৫ ভাই মো. রমজান আলী, আহসান হাবিব, মো. বাবুল হোসেন, মো. আরফান আলী এবং মো. আকরাম আলী রাত আনুমানিক ১১ টার দিকে তাদের বাবা এবং সৎ মার সাথে ঝগড়াঝাটির একপর্যায়ে খাটের এক পাশে থাকা বালিশ নিয়ে আকরাম ও আরফান বাবার মুখে চেপে ধরে এবং অপর ভাই আহসান বাবার পা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।

সৎ মা চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করলে মো. বাবুল হোসেন মুখে বালিশ চেপে ধরে এবং তাদের বড়ভাই রমজান আলী পা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।  ঘটনার পর তারা বাবা ও সৎ মায়ের লাশ প্লাস্টিকের বস্তায় মাটি ভরে লাশের কোমড়ে রশি দিয়ে বেঁধে পার্শ্ববর্তী তুরাগ নদীতে ফেলে দেয়।

বাড়িতে এসে ওই রাতেই আনুমানিক রাত ৩ টার দিকে মো. বাবুল ও আহসান তাদের সৎ ভাই ইমরান আলীকে (৪) নিয়ে হযরত শাহজালাল (র.) মাজার সিলে্েট যায় এবং সেখানে ইমরানকে ফেলে রেখে পালিয়ে গাজীপুরে চলে আসে।

শনিবার সকালে তাদের গ্রেফতার করার পর তাদের দেখানো মতে তুরাগ নদীতে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি নামিয়ে ব্যাপক তল্লাশি চালিয়েও লাশের দেহাবশেষ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এদিকে নিখোঁজ ইমরানকে খোঁজার জন্য র‌্যাবের আরেকটি দল সিলেটে শাহজালাল মাজার ও সংশ্লিষ্ট এলাকায় এরই মধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে, কিন্তু এখনো তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

১৪ মে,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে