বৃহস্পতিবার, ১৯ মে, ২০১৬, ০১:৫১:৫৩

পাশবিক নির্যাতনের পর রিনাকে হত্যা

পাশবিক নির্যাতনের পর রিনাকে হত্যা

নিউজ ডেস্ক: টঙ্গীতে পাশবিক নির্যাতনের পর ছয় তলার ছাদ থেকে ফেলে রিনা হত্যা ঘটনায় মামলা নিতে গড়িমসি করছে পুলিশ। গতকাল(বুধবার) দুপুরে নিহত রিনা বেগমের মা, বাবা ও ভাই হত্যাকাণ্ডের আলামতসহ প্রতিবেশীদের নিয়ে থানায় মামলা করার জন্য ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে। রিনার মা আনোয়ারা বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে লাশ নিয়ে ফেরার পর মঙ্গলবার টঙ্গী থানায় অভিযোগ নিয়ে গেলে তাকে পাগল বলে থানা থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। এরপর প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় আবারও থানায় অভিযোগ নিয়ে গেলে বলা হয় রাইটার (মামলা লেখক) ছুটিতে।

বিকালে থানায় যোগাযোগ করতে বলা হয়। বিকালে গেলে রাত ৮টায় পর্যন্ত তাদের থানায় বসিয়ে রাখা হয়। এ সময় থানার ডিউটি অফিসার এসআই বেলাল বলেন, মামলা হবে, লেখা চলছে। নিহত রিনার বড় ভাই রফিকুল মুন্সি জানান, জাকিরের ছয় তলার ছাদ থেকে বিকল্প কোনো পদ্ধতিতে নিচে নামার ব্যবস্থা নেই। ভবনের ওয়াল বেয়ে রিনার নিচে নামার চেষ্টা অবান্তর। বরং রিনাকে পাশবিক নির্যাতনের পর ছয় তলার ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করা হয়েছে। আর এ ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতেই রিনা ছয় তলার ছাদ থেকে পড়ে নিহত হয়েছে বলে গুজব ছড়ানো হয়েছে। ঘটনার আগে শুক্রবার বিকালে রিনা মোবাইল ফোনে তার ভাইকে উদ্ধারের আকুতি জানায়, বলে তাকে নির্যাতনের জন্য মরিচের গুঁড়া আনা হয়েছে।

এরপর জাকিরের আস্তানা থেকে রিনাকে উদ্ধারের জন্য তার মা আনোয়ারাকে সেখানে পাঠানো হয়। রিনার ভাই সেখানে গেলে তাকেও মিথ্যা অভিযোগে হয়রানি করতে পারে এই ভয়ে সে জাকিরের আস্তানায় যায়নি। রিনার মা আনোয়ারা বলেন, শুক্রবার বিকালে মেয়েকে উদ্ধারের জন্য জাকিরের ছয় তলার ছাদে যেতে চাইলে ছাদের দরজা বন্ধ পাই। এ সময় জাকিরকে বহু আকুতি জানাই রিনাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য। জাকির কোনো কর্ণপাতই করেনি। এরপর রাত ১২টা পর্যন্ত সেখানে অপেক্ষা করে বাসায় চলে আসি। একবার মনে করি থানায় গিয়ে পুলিশ নিয়ে যাব। কিন্তু ‘থানা জাকিরের কিনা’ একথা ভেবে থানায় যাইনি। ঘটনার রাতে ৪টার দিকে জাকির বস্তির নেত্রী ময়নাকে সঙ্গে নিয়ে আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে এবং জানায় আমার মেয়ে ছাদ থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় নিচে পড়ে আহত হয়েছে। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সেখানে যাওয়ার জন্য সে আমাকে এক হাজার টাকা সাধে। কিন্তু আমি টাকা না নিয়ে তাকে বলি, হাসপাতালে যাব না। আমার মেয়েকে যেভাবে সুস্থ অবস্থায় নিয়েছো ঠিক সেভাবে সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে দেবে। এরপর জাকির চলে যায়। পরদিন ছেলে রফিককে হাসপাতালে পাঠাই। রফিক হাসপাতালে রিনাকে মুমূর্ষু অবস্থায় দেখতে পায়। সোমবার রাতে রিনার মৃত্যুর পর জাকিরের সহযোগীরা ময়নাতদন্ত ছাড়াই কৌশলে হাসপাতাল থেকে লাশ নিয়ে আসতে চাইলে শাহবাগ থানা পুলিশ বাধা দেয়।

এ ব্যাপারে শাহবাগ থানা পুলিশ একটি জিডি (নং-১০১৪) করে। উক্ত জিডির সূত্রে শাহবাগ থানার এসআই কৃষ্ণ চন্দ্র দাসের প্রস্তুতকৃত সুরতহাল প্রতিবেদনে নিহত রিনার প্রস্রাবের রাস্তাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের আলামত উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া রিনার বাম পায়ের উরু থেকে হাঁটু পর্যন্ত রডসহ ব্যান্ডেজ পরানো ছিল। এদিকে জাকিরের ভবনের পাশের কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ঘটনার রাতে জাকিরের আস্তানায় তারা আরো ২-৩ জন মেয়েকে দেখেছেন। উল্লেখ্য, মাদক বহনের কাজে অপারগতা প্রকাশ করেছিলেন টঙ্গীর ব্যাংকের মাঠ বস্তির দরিদ্র ঘরের সন্তান ও স্বামী পরিত্যক্তা রিনা বেগম (২৫)। এতে তাকে মিথ্যা চুরির অপবাদে গত শুক্রবার বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায় টঙ্গীর এক পাইকারি মাদক ব্যবসায়ী জাকির হোসেন।

এরপর রিনাকে টঙ্গী থানার পেছনে জাকিরের ছয় তলার ছাদের আস্তানায় নিয়ে পাশবিক নির্যাতনের পর ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত মাদক ব্যবসায়ী জাকির হাজী ওরফে লন্ডা জাকির গা-ঢাকা দিয়েছেন।-এমজমিন

১৯ মে, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে