রবিবার, ০৫ আগস্ট, ২০১৮, ১২:৫৬:০০

গাছ ও দিঘির কেরামতি, গোসল, গাছের ছাল ভিজিয়ে পানি খেলে রোগ মুক্ত!

গাছ ও দিঘির কেরামতি,  গোসল, গাছের ছাল ভিজিয়ে পানি খেলে রোগ মুক্ত!

পিরোজপুর: এই গাছের ছাল খেলে জটিল অসুখ-বিসুখ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় বলে বিশ্বাস করা হয় -
ইন্দুরকানীতে একটি দিঘি ও দিঘির পাড়ের শতবর্শী একটি রেন্ডি গাছের হঠাৎ কেরামতির গুজবে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত লোক ভিড় জমাচ্ছে। তারা রোগ মুক্তির জন্য দিঘিতে গোসল করছে, পানি পান ও রেন্ডি গাছের ছাল তুলে নিয়ে যাচ্ছে।

এলাকার একটি পক্ষ এই কাজকে শিরক ( বড় গুনাহ) ভেবে এটাকে বন্ধ করতে চাইছে। কিন্তু অপরপক্ষ এতে কোনো ক্ষতি নাই বলে আগত লোকদেরকে সহায়তা করছে। এ নিয়ে এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

পুলিশ প্রশাসন আগত দর্শনার্থীদের ঠেকাতে লাঠিপেটা করলেও দর্শনার্থী আসা কোনোভাবেই কমছে না। বিগত দুই সপ্তাহের বেশি এ অবস্থা চললেও এর কোন সুরাহা না হওয়ায় দিঘির পাড় আলিম মাদরাসায় শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে। মাদরাসা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ফয়সালার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে। এ নিয়ে আজ শনিবার মাদরাসা মাঠে প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে এক জরুরী সভা ডাকা হয়েছে।

দিঘি ও গাছের কেরামতির গুজব যেভাবে শুরু

লোক মুখে শোনা যায়, পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার এক নারী স্বপ্নে দেখেন তার বাক প্রতিবন্ধি ছেলেকে ওই দিঘিতে গোসল করালে এবং দিঘির পাড়ের রেন্ডি গাছের ছাল ভিজিয়ে পানি খাওয়ালে ছেলে ভাল হয়ে যাবে। এরপর তিনি এসে তার ছেলেকে ওই দিঘিতে গোসল করান এবং গাছের ছাল তুলে নিয়ে ভিজিয়ে খাওয়ালে ছেলে কথা বলা শুরু করে। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে লোকজন আসতে থাকে। কিন্ত বাস্তবে ওই মহিলার পরিচয় কেহ দিতে পারেনি।

উপজেলার পাড়েরহাট ইউনিয়নের বাড়ৈখালী গ্রামের দিঘিরপাড় জামেয়া-ই-ইসলামিয়া আলিম মাদরাসা মাঠ সংলগ্ন ছোট একটি পুকুর। আর পুকুরের পাড়ে ঈদগাহ সংলগ্ন একটি বড় শতবর্ষী রেন্ডি গাছ। পুকুরটি আগে আরো বড় ছিল বলে লোকে এটাকে স্থানীয়রা দিঘি বলে আসছে।

এই দিঘীতে গোসল করলে রোগ-ব্যাধি ভাল হয়ে যায় বলে প্রতিদিনই এখানে মানুষ ভিড় করছে
শুক্রবার দেখা যায় যে, দুর-দুরান্ত থেকে আসা বিভিন্ন বয়সের শত শত নারী পুরুষ ওই দিঘির পানিতে গোসল করছে, পানি পান করছে এবং রেন্ডি গাছের ছাল তুলে নিচ্ছে ভিজিয়ে পানি খাবার জন্য।

দিঘীতে গোসল করতে সপরিবারে ভান্ডারিয়া থেকে এসেছেন উপজেলার চরখালী গ্রামের সেলিম। তিনি জানান, এখানে গোসল করে বিভিন্ন লোকের ভাল হবার কথা শুনে আমরাও এসেছি গোসল করতে।

বাড়ৈখালী গ্রামের ভ্যান চালক মনির হোসন জানায়, তিনি এক্সিডেন্টে কাঁধে ব্যাথা পেয়েছিলেন। দিঘিতে গোসল করার পর তার কাঁধের ব্যথা ভাল হয়েছে। উমেদপর গ্রামের লাইলী বেগম এসেছেন তার নাতনি নুরুন্নাহারকে নিয়ে। তারা দু’জনেই ওই দিঘিতে গোসল করেছেন।

টগড়া গ্রামের নাসির উদ্দিন জানান, তার মেরুদন্ডে ব্যথা ছিল সে ওই দিঘিতে গোসল করায় তার মেরুদন্ডের ব্যথা কমেছে।

ওই দিঘিতে গোসল করেছেন পাড়েরহাট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সাহাবউদ্দিন হাওলাদার এবং শাহআলম হাওলাদার।

এলাকার কতিপয় যুবক ও বৃদ্ধরা জানায়, ওই রেন্ডি গাছের কেরামতি আছে। কেহ ভয়ে ওই গাছের ডাল কাটে না। দুই বছর আগে এলাকার একটি খাল কাটার জন্য সাতক্ষীরা থেকে শ্রমিক এসেছিল। তারা ওই গাছ থেকে জ্বালানীর জন্য লাকড়ী কাটতে উঠে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। পড়ে দিঘির পানিতে গোসল করানোর পরে আবার সুস্থ হয়ে যায়। তারা আরো বলেন, ওই গাছের ছোট ডালও বেশ শক্ত। প্রমান স্বরূপ তারা ৩টি ছেলেকে গাছের ছোট ডাল ধরে ঝুলে থাকতে বলে দেখান।

দিঘিরপাড় জামে মসজিদের ইমাম ও ওই মাদরাসার শিক্ষক আব্দুস সালাম জানান, আমি দীর্ঘদিন এখানে আছি। দিঘি এবং গাছের কোন কেরামতির কথা আগে শুনিনি। ১৫ দিন ধরে এখানে লোকজন গোসল করতে আসে।

দিঘিরপাড় জামেয়া-ই-ইসলামিয়া আলিম মাদরাসার সুপার মাওলানা সাইদুল ইসলাম জানান, হঠাৎ দিঘির পানির কেরামতির খবরে প্রতিদিন শত শত নারী পুরুষ এসে গোসল করায় মাদরাসার শিক্ষার পরিবেশ ব্যহত হচ্ছে। বিষয়টি ফয়সালার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

পাড়েরহাট ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম সরোয়ার বাবুল বিষয়টির বিরোধিতা করেন এবং এসব কুসংস্কারের বাঁধা দেন। তিনি জানান, কতিপয় অসৎ প্রকৃতির লোক মাদরাসা ও মসজিদকে অপবিত্র করার জন্য দিঘিকে পুঁজি করে ভূয়া কেরামতি দেখিয়ে এ ব্যবস্থা করেছে। যে কোন মূল্যে এটা বন্ধ করতে হবে।

ইন্দুরকানী থানার ওসি নাসির উদ্দিন জানান, ওই দিঘিতে মানুষ কি পেয়েছে জানিনা। পুলিশ পিটিয়েও মানুষ ফিরাতে পারছে না। এ বিষয়ে শনিবার বিকালে এলাকাবাসীকে নিয়ে বৈঠক করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিব আহমেদ জানান, দিঘির পাড়ে লোকজন জড়ো হবার কথা শুনেছি। বিষয়টি নিরসনের জন্য এলাকাবাসীকে নিয়ে আলোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে