শনিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:৪৮:৪৭

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার ব্যাপারে যা বলছে ইসলাম

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার ব্যাপারে যা বলছে ইসলাম

জহির উদ্দিন বাবর: মানবজীবনে উদারতা একটি মহান শিক্ষা। এর দ্বারা পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সবখানেই বজায় থাকে স্থিতিশীলতা ও শান্তি। উদারতা ও ছাড় দেওয়ার মানসিকতা না থাকলে কোথাও স্বস্তি মেলে না। ইসলাম উদারতার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। সব মত, পথ ও ধর্মের সহাবস্থানের জায়গাটি হলো ইসলাম। বিগত দেড় হাজার বছর ধরে ইসলাম উদারতা, মানবিকতাবোধ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সহিষুষ্ণতার অপূর্ব নজির স্থাপন করে আসছে।

'মদিনা সনদ' উদারতার এক ঐতিহাসিক দলিল। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় ইসলাম যে উদাহরণ স্থাপন করেছে এর কোনো নজির নেই। বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, সহমর্মিতা ও সদ্ব্যবহার ইসলামের অনুপম শিক্ষা। অমুসলিমদের সঙ্গে সদাচরণ ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠা পবিত্র কোরআনের নির্দেশ।

রাসূল (সা.) তার ২৩ বছরের নবুয়তি জীবনে অমুসলিমদের সঙ্গে সহাবস্থানের বাস্তব নমুনা স্থাপন করে গেছেন। উদারতার এক জ্বলন্ত প্রতীক ছিলেন প্রিয়নবী (সা.)। জগদ্বাসীর সামনে তিনি ক্ষমা ও উদারতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। ইসলাম সহিষুষ্ণতা, সম্প্রীতি ও মানবতার ধর্ম। ইসলামবিস্তৃতি লাভ করেছে তার আদর্শের শক্তিতে, তলোয়ারের জোরে নয়। ইসলামের নবী এবং তাঁর সহযোগী সাহাবায়ে কেরামের আদর্শই হলো মূল শক্তি। অল্পদিনে ইসলাম অর্ধেক পৃথিবী জয় করার পেছনে মূল শক্তিটি ছিল আদর্শের, উদারতার। পৃথিবীর আর কোনো ধর্ম বা মতাদর্শ এত উদারতা দেখাতে পারেনি, যা দেখিয়েছেন ইসলাম এবং ইসলামের নবী।

কোরআনে বলা হয়েছে, 'আল্লাহ নিষেধ করেন না ওই লোকদের সঙ্গে সদাচার ও ইনসাফপূর্ণ ব্যবহার করতে, যারা তোমাদের সঙ্গে ধর্মকেন্দ্রিক যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদের আবাসভূমি হতে তোমাদের বের করে দেয়নি। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদের পছন্দ করেন।' (সুরা আল মুমতাহিনা-৮) আল্লাহ বলেন, 'তারা আল্লাহতায়ালার বদলে যাদের ডাকে, তাদের তোমরা কখনও গালি দিও না, নইলে তারাও শত্রুতার কারণে না জেনে আল্লাহতায়ালাকেও গালি দেবে। আমি প্রত্যেক জাতির কাছেই তাদের কার্যকলাপ সুশোভনীয় করে রেখেছি, অতঃপর সবাইকে একদিন তার মালিকের কাছে ফিরে যেতে হবে, তারপর তিনি তাদের বলে দেবেন, তারা দুনিয়ার জীবনে কে কী কাজ করে এসেছে।' (সূরা আনআম :১০৮)।

রাসূল (সা.) বলেন, 'সাবধান! যদি কোনো মুসলিম কোনো অমুসলিম নাগরিকের ওপর নিপীড়ন চালিয়ে তার অধিকার খর্ব করে, তার ক্ষমতার বাইরে কষ্ট দেয় এবং তার কোনো বস্তু জোরপূর্বক নিয়ে যায়, তাহলে কেয়ামতের দিন আমি তার পক্ষে আল্লাহর দরবারে অভিযোগ উত্থাপন করব।' (আবু দাউদ) প্রকৃতির ধর্ম ইসলাম মানুষের ভেতরে তার প্রকৃতিগত গুণ তথা মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটিয়েছে। ইসলামের শিক্ষা হলো, প্রথমে ভালো মানুষ হতে হবে, পরে ভালো মুসলমান। যিনি ভালো মুসলমান তিনি ভালো মানুষও বটে। হাদিসে বলা হয়েছে, 'তোমরা ইমান না আনা পর্যন্ত বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না। আবার পরস্পরকে ভালোবাসতে না পারা পর্যন্ত ইমানদার হতে পারবে না।' প্রকৃত ইমানদার হতে হলে মানবপ্রেম অন্তরে

জাগাতে হবে। মানুষের প্রতি দায়বোধ বাড়াতে হবে। শুধু মানুষই নয় প্রতিটি প্রাণীর প্রতি দয়া প্রদর্শন করতে হবে। মানবকল্যাণে যিনি কাজ করেন তিনিই আল্লাহর প্রিয়।

ইসলামের নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) জীবনভর মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। তার শিক্ষাও হলো মানবতাবোধ ও উদারতার। তিনি শিখিয়েছেন কীভাবে মানুষকে ভালোবাসতে হবে। নিজের জীবনকে কীভাবে পরের জন্য উৎসর্গ করা যায়, এটা তিনি বাস্তবেও দেখিয়েছেন এবং এর প্রতি জোর তাগিদও দিয়েছেন। ইসলাম মানুষকে ত্যাগ ও বিসর্জনের শিক্ষা দেয়। যারা নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারে তারাই ইসলামের দৃষ্টিতে

সেরা মানুষ। পরের জন্য কিছু করার বাসনা জাগিয়ে তোলে ইসলাম।  শুধু মুসলমানই নয়, ভিন্ন ধর্ম ও মতাবলম্বীদের প্রতিও সদাচরণ, উদারতা প্রদর্শন ইসলামের শিক্ষা। আদর্শের শক্তিটুকুই ইসলামের মূল শক্তি। এই শক্তির গুণেই বাহ্যিক উপকরণ না থাকা সত্ত্বেও মুসলমানরা এক সময় বিশ্বকে শাসন করেছে। মুসলমানদের কাছ থেকে আজ সেই শক্তিটুকু হারিয়ে যেতে বসেছে। আদর্শহীনতার চোরাবালিতে আজ হাবুডুবু খাচ্ছে মুসলমানরা। আমরা

আজ ক্রমেই অসহিষুষ্ণ হয়ে উঠছি। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ এই জাতির হারানো গৌরব ফেরাতে হলে অবশ্যই ইসলামের আদর্শের কাছে ফিরে আসতে হবে।-ঢাকা টাইমস
১৯ নভেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে