মুসলিম উম্মাহর জন্য গুরুত্বপূর্ণ হেদায়েতি নসিহতে যা বললেন তাবলিগের মুরুব্বি মাওলানা মুরসালিন

ইসলাম ডেস্ক : শেষ হলো বিশ্ব ইজতেমা ২০১৭ সালের আয়োজন। গত শুক্রবার টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শেষ হয়েছে। বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের দ্বিতীয় দিন জোহরের নামাজের পর তাবলিগ জামাতের সাবেক আমির দিল্লি নিজামুদ্দিন মারকাযের মুরুব্বি মাওলানা জোবায়েরুল হাসান রহমাতুল্লাহি আলাইহি-এর ছেলে মাওলানা মুরসালিন আম বয়ান পেশ করেন।

মাওলানা মুরসালানি তাঁর বয়ানে মুসলিম উম্মাহর জন্য গুরুত্বপূর্ণ নসিহত পেশ করেন। গুরুত্বপূর্ণ এ বয়ানের সার সংক্ষেপ তুলে ধরা হলো-

মাওলানা মুরসালিন তাঁর বয়ানের শুরুতেই আল্লাহ তাআলার প্রশংসা ও বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরূদ পাঠের পর প্রথমেই বলেন, আমাদের সব কাজই হবে আল্লাহ তাআলাকে রাজি এবং খুশি করার জন্য। দ্বীন কায়েমের জন্য আল্লাহ তাআলার হুকুম-আহকাম জীবনভর পালন করতে হবে এবং মানুষের মাঝে দ্বীনের কাজকে ছড়িয়ে দিতে হবে।

আল্লাহ তাআলা অত্যাচারী শাসক ফেরাউনের কাছেও দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দিতে হজতর মুসা আলাইহিস সালামকে পাঠিয়েছেন। নিজ পরিবার ও দুনিয়ার মানুষের কাছে দ্বীনের দাওয়াত পৌছে দিতে যুগে যুগে অসংখ্য নবি রাসুল পাঠিয়েছেন।

সর্বশেষ দ্বীন কায়েমের জন্য বিশ্বনবি হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। দাওয়াতে দ্বীনের এ জিম্মাদারি এখন তাঁর উম্মতের ওপর। শেষ নবির উম্মত হিসেবে দাওয়াতে দ্বীনের এ জিম্মাদারির দায়িত্ব আমাদেরকেই পালন করতে হবে।

দুনিয়াতে দ্বীন যতদিন কায়েম থাকবে; ততদিন দুনিয়াও টিকে থাকবে। আর দ্বীন টিকে থাকবে দাওয়াতি কাজের মাধ্যমে। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা যুগে যুগে অসংখ্য নবি-রাসুল পাঠিয়েছেন। তাঁরা দ্বীন কায়েম লক্ষ্যে দাওয়াতি কাজ করে গেছেন।

দ্বীনের দাওয়াতের মেহনত থেকে বিরত থাকার কোনো সুযোগ নেই। বর্তমানে মুসলিম উম্মাহর মাঝে দাওয়াতে দ্বীনের কাজ কমে গেছে। এ কারণেই মুসলমান পদে পদে লাঞ্ছিত ও অপমানিত হচ্ছে।

মাওলানা মুরসালিন তার বয়ানে মৃত্যুর কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা মানুষকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। আর যে ব্যক্তি দুনিয়াতে আসবে তাকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতেই হবে। মানুষকে দুনিয়াতে পাঠানো এবং মৃত্যুর কোনো সিদ্ধান্তই পরিবর্তন হবে না।

আল্লাহ তাঁর এ সিদ্ধান্তের কথাও কুরআনে পাকে ঘোষণা করেছেন, ‘পৃথিবীতে যা কিছু আছে; সব কিছুই একদিন নিঃশেষ হয়ে যাবে। শুধুমাত্র আল্লাহর স্বত্ত্বাই চিরস্থায়ী; যার কোনো শুরু নেই এবং শেষও নেই। আল্লাহ আগে ছিলেন; যারে আগে কোনো কিছু ছিল না এবং তিনি সব কিছুর পরে স্থায়ী থাকবেন; যার পরে কোনো কিছুই থাকবে না।

সৃষ্টিকূলের শুরু আছে কিন্তু সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর কোনো শুরু নেই। প্রকাশ্যে যা কিছু হয় তা তিনি দেখেন, আর যা গোপনে হয় তাও তিনি দেখতে পান। আল্লাহর দৃষ্টি সীমার বাইরে কিছুই নেই, এমনকি একটি অনুও নেই। সবকিছুই তার দৃষ্টিসীমার অন্তর্ভূক্ত।

মাওলানা মুরসালিন আরো বলেন, ‘আল্লাহ সর্বশক্তিমান।  তিনি সব কিছু জানেন। এমন কোনো জিনিস নেই যা তার জ্ঞানের বহির্ভূত। এমন সময়ও ছিল, যখন পৃথিবীর কোনো বস্তু সম্পর্কে কারো কোনো খবর ছিলো না, মানুষ ছিল না, মানুষ সম্পর্কে কোনো আলোচনাও ছিল না; তখনও আল্লাহ তাআলা ছিলেন।

তিনি উপমা পেশ করে বলেন, ‘আল্লাহ ছাড়া এমন কেউ নেই যে, তিনি খেজুর গাছ হতে খেজুর বের করতে পারেন। আল্লাহ ছাড়া এমন কেউ নেই, যিনি বিভিন্ন ধরনের ফল উৎপাদন করতে পারেন। আল্লাহ ছাড়া এমন কেউ নেই, যিনি মানুষের জীবন দান করতে পারেন।

পরিশেষে...
মাওলানা মুরসালিন মানুষকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘এ দুনিয়া ধোঁকার ঘর, এ দুনিয়া হলো ধোঁকার জীবন। সুতরাং মানুষকে এ ধোঁকার জীবন থেকে বেঁচে চলতে হবে। কেননা আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘তুমি (দুনিয়ার ধোঁকা ও রঙ-তামাশা) এসব কিছু হতে আমার দিকে ফিরে আসো, আমার নৈকট্য অর্জন করতে চেষ্টা করো, তুমি যদি আমাকে (মাওলাকে) পেয়ে যাও; তাহলে জেনে নিবে, তুমি দুনিয়ার সব কিছু অর্জন করতে পেরেছ। আর যদি তুমি আমাকে হারিয়ে ফেলো (নৈকট্য অর্জনে ব্যর্থ হও) তাহলে মনে রাখবে, তুমি পৃথিবীতে সব কিছু হারিয়ে ফেলেছো।’

সুতরাং শুধুমাত্র মহান আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জনই হবে আমাদের জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর দিকে ফিরে আসো। তোমরা (আল্লাহকে ছাড়া) কোথায় পলায়ন করছ? তোমরা কোথায় (কোন কাজে) ব্যস্ত হয়ে পড়ছ। সবাই আল্লাহর দিকে ফিরে এসো।’

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মাওলানা মুরসালিন (দামাতবারকাতুহুম)-এর উপদেশমুলক বক্তব্য অনুযায়ী কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশিত পথে তথা আল্লাহর পথে জীবন-যাপন করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
২৪ জানুয়ারী, ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম