সোমবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৫, ১১:৫৭:৩৫

ইসলামের মহান সেবক ও সৈনিক হযরত হামজা (রা.)-এর জীবনী

ইসলামের মহান সেবক ও সৈনিক হযরত হামজা (রা.)-এর জীবনী

ইসলাম ডেস্ক: আবু জাহেল ছিল ইসলাম ও বিশ্বনবী (সা.)'র ঘোর শত্রু। একদিন সে মহানবী (সা.)কে মারাত্মক ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপ করে ও হয়রানি করে। সেদিনি রাসূল (সা.)'র চাচা হযরত হামজা (রা.) ওই ঘটনার কথা শুনতে পান। সাহসিকতার জন্য খ্যাত বীর হামজা এ ঘটনার শাস্তি হিসেবে সবার সামনে আবু জাহেলকে অপদস্ত করেন। বংশগত বা গোত্রীয় দাপট থাকা সত্ত্বেও আবু জাহেল এ ব্যাপারে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাতে সক্ষম হয়নি। হযরত হামজা তখন পর্যন্ত ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেননি। অবশ্য তিনি সব সময়ই ভাতিজার প্রচারিত ধর্ম নিয়ে ভাবতেন। এ ঘটনার পর তিনি মহানবী (সা.)'র কাছে যান ও ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। সেই থেকে জীবনের শেষ পর্যন্ত তথা ওহুদ যুদ্ধে শাহাদত লাভের আগ পর্যন্ত হযরত হামজা (রা.) ছিলেন ‌ইসলামের এক মহান ও অক্লান্ত সেবক এবং সৈনিক। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই নাজিল হয়েছিল সুরা আনআমের ১২২ নম্বর আয়াত। এ আয়াতে এমন এক ব্যক্তির দিকে ইশারা করা হয়েছে যার অন্তর ঈমানের আলোতে প্রোজ্জ্বোল। আর তাঁর বিপরীত বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হিসেবে আবুজাহলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে যে কুফর ও বিভ্রান্তির অতল-অন্ধকারে ডুবে আছে। এই আয়াতে বলা হয়েছে: "আর যে মৃত ছিল এরপর আমি তাকে জীবিত করেছি এবং তাকে এমন একটি আলো দিয়েছি, যা নিয়ে সে মানুষের মধ্যে চলাফেরা করে। সে কি ঐ ব্যক্তির সমতুল্য হতে পারে, যে অন্ধকারে রয়েছে-সেখান থেকে বের হতে পারছে না? এমনিভাবে কাফেরদের দৃষ্টিতে তাদের নোংরা কাজকর্মকে সুশোভিত করে দেয়া হয়েছে।" কুরআন কুফরকে মৃত্যু এবং সত্য ও ঈমানকে জীবনের সঙ্গে তুলনা করেছে। এর অর্থ যে ঈমান আনে সে আসলে আল্লাহর অনুগ্রহে মৃত অবস্থা থেকে জীবিত হল। অন্য কথায় কুরআনের দৃষ্টিতে ঈমান কেবলই শুস্ক ও অগভীর কোনো বিশ্বাস নয়, বরং আত্মা বা জীবনের মত কোনো বিষয় যা ঈমানহীন কোনো ব্যক্তির মধ্যে ফুঁকে দেয়া হলে সেই ব্যক্তি প্রকৃত জীবনের অধিকারী হয়। সুরা আনআমের বিশেষ আয়াত সৃষ্টিকূলের মধ্যে মহান আল্লাহর হেকমাত ও প্রাজ্ঞতা তুলে ধরে। এ ধরনের আয়াত কখনও মহান আল্লাহর বিশেষ কিছু গুণের কথা বলে এবং নানা বিষয় বা সৃষ্টি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর নজিরবিহীন ক্ষমতার কথাও তুলে ধরে। এর সুরার ৫৯ নম্বর আয়াতে মহান প্রভু বলছেন, "কেবল তাঁর কাছেই অদৃশ্য জগতের চাবি রয়েছে। এগুলো তিনি ছাড়া কেউ জানে না। স্থলে ও পানিতে যা আছে, তিনিই জানেন। তাঁর অজান্তে গাছের কোন পাতাও ঝরে না। কোন শস্য কণা মৃত্তিকার অন্ধকার অংশে পড়ে না এবং এমন কোন আর্দ্র ও শুকনো জিনিসের অস্তিত্ব নেই যার সবই তাঁর প্রকাশ্য গ্রন্থে বা জ্ঞানের আওতায় রেকর্ড হয়নি।" এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা যায় মহান আল্লাহ শত-সহস্র কোটি জীবনের নড়াচড়া, সমস্ত গাছের পাতার কাঁপন, ফুলে কলি ফুটে ওঠার সময়, মরুতে, সমতলে ও পাহাড়ে বায়ু প্রবাহের বিষয়ে এবং প্রত্যেক মানুষের কোষের সংখ্যা ও রক্তে গ্লুকোজের মাত্রার নিখুঁত তথ্য জানেন। শরতের দমকা হাওয়ায় কখন গাছের কয়টি পাতা ঝরে পড়বে তাও তিনি জানেন। মহান আল্লাহর অশেষ ও পরিপূর্ণ জ্ঞানের এ এক অতি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। পবিত্র কুরআনে সুরা আনআমের ৯৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন: "নিশ্চয় আল্লাহই বীজ ও আঁটি থেকে অঙ্কুর সৃষ্টিকারী; তিনি জীবিতকে মৃত থেকে বের করেন ও মৃতকে জীবিত থেকে বের করেন। তিনিই বা এই হলেন তোমাদের প্রভু বা আল্লাহ, তবুও তোমরা সত্য থেকে কিভাবে বিভ্রান্ত হচ্ছ?" বীজ থেকে উদ্ভিদের উন্মেষ মহান আল্লাহর একত্বের নিদর্শন। সাগরে, মরুতে ও সমতল প্রান্তরে তিনিই সৃষ্টি করেন নানা ধরনের জীবকে নিষ্প্রাণ বস্তু থেকে। আবার তিনিই শক্তিশালী নানা সৃষ্টিকে নিষ্প্রাণ করে দেন। উদ্ভিদ ও জন্তুর প্রাণ এক অনন্ত বিস্ময় যে প্রাণের বিস্তারিত ব্যাখ্যা আজো দিতে পারেনি বিজ্ঞান। কিভাবে বীজের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে উদ্ভিদ? আকাশ, ভূমি ও তারকারাজি নিয়ে চিন্তাশীলদের ভাবতে বলে কুরআন। এই বিশ্বজগত ও সৃষ্টিকূলকে বিনা উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করা হয়েছে- এটা কি করে হতে পারে? তাই মহান আল্লাহর সৃষ্টি হিসেবে মানুষের উচিত কথাবার্তায় ও আচার-আচরণে সতর্ক হওয়া। ইব্রাহিম ও মুসা (আ.)'র মত মহান নবীগণও নমরূদ ও ফেরাউনের মত প্রবল পরাক্রমশালী জালিমদের কাছে জীবন ও সৃষ্টিকূলের অস্তিত্বকে সর্বশক্তিমান এবং কৌশলী আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ হিসেবে যুক্তি দেখিয়েছিলেন। একবার হযরত মুসা (আ.) আল্লাহর কাছে নিবেদন করেন, হে আল্লাহ! আমাকে তোমার ধনাগার বা ধন-সম্পদের গুদাম দেখিয়ে দাও! মুসাকে জানিয়ে দেয়া হলো যে, "হে মুসা! আমার ধনাগার হলো এটা যে, যে জিনিসকে বলবো হয়ে যাও, তা তৎক্ষণাৎই হয়ে যায়।" মহানবী (সা.) বলেছেন, " যখন তোমরা কেউ দেখ যে, কেউ অন্যায়, অবিচার ও পাপাচার করে চলেছে অথচ আল্লাহ তাকে অঢেল নিয়ামত দান করেছেন, তখন বুঝে নিও যে আল্লাহ তার রশিটা বেশি লম্বা বা দীর্ঘ করে দিয়েছেন, আর আল্লাহ এক টানেই এদের গুটিয়ে ফেলবেন।" সূত্র: রেডিও তেহরান ১৯ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/রাসেল/মাহমুদ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে