সোমবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৫, ০১:২৪:৫২

মুসলমানদের সঙ্গে ইহুদি ও মুশরিকদের শত্রুতা সম্পর্কে ইসলাম যা বলছে

মুসলমানদের সঙ্গে ইহুদি ও মুশরিকদের শত্রুতা সম্পর্কে ইসলাম যা বলছে

ইসলাম ডেস্ক: আদম (আ.) হাবিলকে 'ইসমে আজম'ও শিক্ষা দিয়েছিলেন। বাবার সিদ্ধান্তের কথা শুনে কাবিল হিংসায় জ্বলে ওঠে এবং সে নিজেই প্রতিনিধি হওয়ার যোগ্য বলে ঘোষণা করে। এ অবস্থায় আদম (আ.) বিবাদ মেটানোর জন্য বলেন, 'তোমরা দু'জনই আল্লাহর দরবারে মানত পেশ কর। যার মানত কবুল হবে সেই হবে আমার খলিফা।' পশুপালক হাবিল একটি হৃষ্টপুষ্ট ছাগল বা ভেড়া, কিছু দুধ ও মাখন নিয়ে পাহাড়ে রেখে আসেন। আর কৃষিজীবী কাবিল ক্রুদ্ধ অবস্থায় গমের কিছু শুকনো ও খারাপ শিষ রেখে আসে। রীতি অনুযায়ী আকাশ হতে আগুন নেমে আসে এবং হাবিলের মানত ভস্মীভূত হয় যা ছিল তার মানত কবুল হওয়ার নিদর্শন। কিন্তু কাবিলের মানত পড়েই থাকে। এ দৃশ্য দেখে কাবিল হিংসার আগুনে জ্বলতে থাকে ও শয়তানের কুমন্ত্রণায় ভাই হাবিলকে হত্যা করে। তাকে যে দাফন করতে হবে মাটির নীচে সেই শিক্ষা দেয়ার জন্য আল্লাহ একটি কাক পাঠান যে অন্য একটি মৃত কাককে মাটিতে দাফন করেছিল। হাবিলের মৃত্যুর পর আল্লাহ শোকাহত বাবা আদমকে শীষ নামক পুত্র দান করেন। কাবিল আদন নামক স্থানে গিয়ে শয়তানের পরামর্শে আগুন পূজাসহ সব ধরনের পাপে লিপ্ত হয়। ফলে সে কঠোরতম শাস্তি পায় এবং নুহের প্লাবনের সময় তার সমগ্র বংশধর ধ্বংস হয়ে যায়। বিশ্বনবী (সা.)'র নবুওত লাভের কয়েক বছর পর শত্রুদের ব্যাপক নির্যাতনের মুখে একদল মুসলমানকে আবিসিনিয়ায় হিজরত করতে বলা হয়। সে সময় মুসলমানদের সংখ্যা ছিল খুবই কম এবং তারা ছিল খুবই চাপের মুখে। এ অবস্থায় মুসলমানদের একটি নিরাপদ আবাসস্থল বা ঘাঁটি গড়ে তোলা ছিল খুবই জরুরি। এ অবস্থায় বিশ্বনবী (সা.)'র নির্দেশে হযরত জা'ফর ইবনে আবু তালিবসহ একদল মুসলমান মক্কা থেকে আবিসিনিয়ায় হিজরত করেন। মক্কার মুশরিকরা এ ঘটনার কথা জেনে যায় এবং তারা আবিসিনিয়া থেকে মুসলমানদেরকে গ্রেফতার করে মক্কায় ফিরিয়ে আনার জন্য একদল ব্যক্তিকে পাঠায়। তারা বাদশাহ নাজ্জাশির কাছে গিয়ে মুসলমানদের নানা বদনাম করতে থাকে এবং মুসলমানদেরকে তাদের হাতেই তুলে দিতে বলে। নাজ্জাশি ছিলেন খ্রিস্টান। তিনি মুহাজির মুসলমানদের বিষয়ে মক্কার মুশরিকদের অভিযোগগুলোর সত্যতা তদন্ত করার জন্য একটি বৈঠকের আয়োজন করেন। এই বৈঠকে মুসলমান মুহাজির, মক্কার মুশরিক প্রতিনিধিদল, একদল খ্রিস্টান চিন্তাবিদ এবং দরবারের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। নাজ্জাশি জা'ফর ইবনে আবু তালিবকে মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাস বর্ণনা করতে বললে তিনি বলেন: 'আল্লাহ আমাদের কাছে একজন নবী পাঠিয়েছেন যিনি আল্লাহর সঙ্গে সব ধরনের শিরক বা অংশী স্থির করতে নিষেধ করেন। এ ছাড়াও তিনি ব্যভিচার, অন্যায়- অবিচার, নির্যাতন ও জুয়া খেলা ত্যাগ করতে বলেন। তিনি আমাদেরকে নামাজ আদায় করতে ও জাকাত দিতে বলেন এবং ন্যায়বিচার ও দয়া প্রদর্শন করতে বলেন। আত্মীয়-স্বজনদের সাহায্য করতেও বলেন তিনি।' নাজ্জাশি এই বর্ণনা শোনার পর বলেন: ঈসা মাসিহিকেও তো এই একই কারণে নবী হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। তোমাদের নবী সম্পর্কে কোনো আয়াত বা ঐশী বাণী নাজিল হয়েছে? জবাবে রাসূল (সা.)'র চাচাতো ভাই এবং আলী (আ.)'র আপন ভাই হযরত জাফর (আ.) কুরআনের একটি আয়াত তিলাওয়াত করে শোনান। তিনি অত্যন্ত সচেতনতার সঙ্গে কুরআনের সেই হৃদয়স্পর্শী আয়াতটি পড়ে শোনান যেখানে হযরত ঈসা (আ.) ও তাঁর মা মারিয়াম (সালামুল্লাহি আলাইহা) সম্পর্কে প্রশংসা রয়েছে। রাজ- দরবারে উপস্থিত সবার মধ্যে এ আয়াত এতো গভীর ও ব্যাপক প্রভাব ফেলে যে খ্রিস্টান পণ্ডিতদের চোখ বেয়ে ঝরে পড়ে আনন্দের অশ্রু । নাজ্জাশি বলে উঠলেন: 'আল্লাহর শপথ! এ আয়াতে সত্যের চিহ্ন বা নিদর্শনগুলো স্পষ্ট।' এ অবস্থায় কুরাইশদের প্রতিনিধি আমর ইবনে আস নাজ্জাশির কাছে দাবি জানালেন মুসলমানদেরকে তার হাতে তুলে দিতে যাতে তাদেরকে বন্দি করে আবারও মক্কায় ফিরিয়ে নেয়া যায়। কিন্তু নাজ্জাশি এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেন। বরং তিনি হযরত জাফর (আ.) ও তাঁর সঙ্গীদের বললেন: 'আপনারা নিশ্চিন্তে আমার রাজ্যে বসবাস করুন।' ফলে মুসলমানরা সেখানে একটি নিরাপদ কেন্দ্র বা ঘাঁটি গড়ে তোলার সুযোগ পেলেন এবং মুসলমানরা যথেষ্ট শক্তি অর্জন না করা পর্যন্ত নওমুসলিমরা সেখানে গিয়ে থাকতে লাগলেন। নতুন ধর্ম হিসেবে ইসলামের সঙ্গে খ্রিস্টান ও ইহুদিদের আচরণ ছিল ভিন্ন ধরনের। মদিনায় হিজরতের পর ইহুদিরা প্রথমদিকে বিশ্বনবী (সা.)’র সঙ্গে শান্তি-চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু পরে তারা নিজেরাই মুসলমানদের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রে মুশরিকদের সহযোগী হয়ে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের সেই চুক্তি লঙ্ঘন করে। পবিত্র কুরআন এ বিষয়টি উল্লেখ করেছে এবং তাদেরকে মুসলমান ও ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জন্য তিরস্কার করেছে। পবিত্র কুরআনের সুরা নিসার ৮২ থেকে ৮৫ নম্বর আয়াতে ইসলামের সঙ্গে খ্রিস্টান ও ইহুদিদের আচরণ সম্পর্কে বলা হয়েছে: 'আপনি সব মানুষের মধ্যে মুসলমানদের সঙ্গে শত্রুতার ক্ষেত্রে ইহুদি ও মুশরিকদেরকে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় দেখতে পাবেন এবং আর মুসলমানদের সঙ্গে বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে আপনি সবার চেয়ে বেশি কাছে পাবেন তাদেরকে যারা নিজেদের খ্রিষ্টান বলে। এর কারণ এই যে, খ্রিষ্টানদের মধ্যে আলেম রয়েছে, দরবেশ রয়েছে এবং তারা অহংকার করে না। আর তারা রসূলের ওপর যা অবতীর্ণ হয়েছে, তা যখন শুনে, তখন আপনি তাদের চোখ (আনন্দে) অশ্রু সজল দেখতে পাবেন; এ কারণে যে, তারা সত্যকে চিনে নিয়েছে। তারা বলে: হে আমাদের প্রতিপালক, আমরা মুসলমান হয়ে গেলাম। অতএব, আমাদেরকেও মান্যকারীদের এবং সত্যের সাক্ষীদের তালিকাভুক্ত করে নিন।' সুরা মায়িদায় উল্লেখিত ও আলোচিত আরো কয়েকটি বিষয় হল: সত্য ও ন্যায়বিচার বজায় রেখে সাক্ষ্য দেয়া, হালাল ও হারাম খাদ্য বিষয়ক বিধান, ওজু ও পবিত্র হওয়ার বিধান, সামাজিক ন্যায়বিচার করার পরামর্শ, উইল বা ওসিয়তনামা রেখে যাওয়ার বিধান, কাসাস বা রক্তের মূল্য আদায়ের বিধান এবং চুরির শাস্তি সংক্রান্ত বিধান। সূত্র: রেডিও তেহরান ১৯ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/রাসেল/মাহমুদ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে