ইসলাম ডেস্ক: শবে বরাত শব্দটি ফারসি। শব অর্থ হলো রাত বা রজনী; আর বরাত মানে ভাগ্য। একত্রে শবে বরাতের মানে ভাগ্য রজনী। আবার আরবিতে বলা হয় লাইলাতুল বারাআত। লাইলাতুন অর্থ হলো রাত আর বারাআতুন অর্থ হলো মুক্তি। একত্রে অর্থ হলো মুক্তির রাত।
বর্তমান সময়ে বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে পড়েছে শবে বরাত। কেউ বলেন, শবে বরাত বলতে ইসলামে কিছুই নেই। আবার অনেকে মসজিদে সমবেতভাবে ইবাদত-বন্দেগিতে রাত অতিবাহিত করে থাকে। আবার অনেকে এ রাতে বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান উদযাপন করেন।
অথচ শবে বরাত বলতে ইসলামে শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে বুঝায়। হাদিসে এ রাতকে ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ বলে উল্লেখ হয়েছে।
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ রাতে নিজ গৃহে ইবাদত-বন্দেগিতে রাত কাটিয়েছেন। যদিও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাসগৃহ আর মসজিদে নববি এক সঙ্গেই ছিল। তথাপিও তিনি নিজ গৃহে নফল ইবাদাত-বন্দেগি করেছেন।
তবে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসের আলোকে ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’তথা শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতের ফজিলতকে অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।
শবে বরাত নিয়ে বাড়াবাড়ি করা যেমন ঠিক নয়; তেমনি ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’-এর ব্যাপারে অবহেলাও ঠিক নয়। কারণ হাদিসে এ রাতের ফজিলত সম্পর্কে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দিক নির্দেশনা রয়েছে।
এ রাতে আল্লাহ তাআআ মুশরিক এবং বিদ্বেষী ব্যতিত সব অপরাধীকে ক্ষমা করে দেন। হজরত মুআয ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা অর্ধ শাবানের রাতে (শাবানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে) সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত আর সবাইকে ক্ষমা করে দেন।’ (ইবনে হিব্বান)
শবে বরাতকে উপলক্ষ করে ইবাদত বন্দেগিতে নিজেকে আত্ম-নিয়োগ না করে শুধুমাত্র রুসুম রেওয়াজ, সন্ধ্যা বেলায় গোসল, হালুয়া-রুটি বিতরণ, আলোকসজ্জা ইত্যাদি পালনে ইসলামের কোনো নির্দেশ নেই।
হাদিসের বর্ণনায় এসেছে, ‘লাইলাতুন মিন নিসফি শাবান’ রাত নামাজে অতিবাহিত করা এবং পর দিন রোজা পালন করা।’ সুতরাং রুসুম রেওয়াজ পালন নয়, শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে হাদিসের ওপর আমল করতে নিজ গৃহে নামাজসহ নফল ইবাদত-বন্দেগির পাশাপাশি কিছু সময় ঘুমানো এবং পরদিন রোজা পালন করা উত্তম।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শবে বরাতের রুসুম রেওয়াজে নিজেদেরকে নিয়োজিত না করে নফল ইবাদত-বন্দেগি করার তাওফিক দান করুন। শবে বরাত নিয়ে বাড়াবাড়ি করা থেকে হেফাজত করুন। আবার ইবাদত-বন্দেগি না করে তা ছেড়ে দেয়া থেকেও হেফাজত করুন। আমিন।
এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস