ইসলাম ডেস্ক: মাকে খুশি করলে জান্নাত, কষ্ট দিলে জাহান্নাম। এত সম্মান যে মানুষের, সে মানুষের প্রতি আমাদের কত না অবহেলা!অথচ যে বেহেশ্ত মায়ের পায়ের নিচে সেই বেহেশ্ত মাকে খুশি করা ছাড়া পাওয়া একেবারে অসম্বব।
মা মানেই মমতা, মা মানেই নিশ্চয়তা, মা মানেই নিরাপত্তা, মা মানেই অস্তিত্ব, মা মানেই আশ্রয়, মা মানে এক বুক ভালবাসা । মা পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয়, সবচেয়ে আপন। সেই মাকে ভালবেসে আমরা স্মরণ করি একটি বিশেষ দিনকে । তবে মাকে শ্রদ্ধা-ভালবাসা জানানোর কোন নির্দিষ্ট দিনক্ষন নেই ।
মা হচ্ছেন একজন পূর্ণাঙ্গ নারী, যিনি গর্ভধারণ, সন্তানের জন্ম তথা সন্তানকে বড় করে তোলেন। তিনিই অভিভাবকের ভূমিকা পালনে সক্ষম ও মা হিসেবে সর্বত্র পরিচিত। প্রকৃতিগতভাবে একজন নারী বা মহিলাই সন্তানকে জন্ম দেয়ার অধিকারীনি।
ইসলাম মাতা-পিতাকে সর্বোচ্চ অধিকার ও সম্মান দিয়েছে। ইসলামের বিধানমতে, আল্লাহ তাআলার পরেই মাতা-পিতার স্থান।
মহাগ্রন্থ আল কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমার প্রতিপালক আদেশ দিয়েছেন, তিনি ব্যতীত অন্য কারও ইবাদত না করতে এবং মাতা-পিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করতে। তাঁদের একজন অথবা উভয়ে তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাঁদের উফ্ (বিরক্তিও অবজ্ঞামূলক কথা) বলবে না এবং তাঁদের ধমক দেবে না; তাঁদের সঙ্গে সম্মানসূচক কথা বলবে। মমতাবশে তাঁদের প্রতি নম্রতার ডানা প্রসারিত করো এবং বলো, “হে আমার প্রতিপালক! তাঁদের প্রতি দয়া করো, যেভাবে শৈশবে তাঁরা আমাকে প্রতিপালন করেছেন।”’ (সুরা-১৭ ইসরা-বনি ইসরাইল, আয়াত: ২৩-২৪)।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনের অন্যত্র ঘোষণা করেন, ‘আমি তো মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। জননী সন্তানকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেন এবং তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে; সুতরাং আমার (আল্লাহর) প্রতি এবং তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। প্রত্যাবর্তন তো আমারই কাছে।’ (সুরা-৩১ লুকমান, আয়াত: ১৪)।
‘আর আমি (আল্লাহ) মানবজাতিকে নির্দেশ দিয়েছি তারা যেন তাদের পিতা-মাতার সঙ্গে সুন্দর আচরণ করে; তার মা তাকে অতিকষ্টে গর্ভে ধারণ করেছেন ও অতিকষ্টে প্রসব করেছেন এবং লালন-পালন করেছেন।’ (সুরা-৪৬ আহকাফ, আয়াত: ১৫)।
আরও বলা হয়েছে, ‘আর তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক কোরো না এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সুন্দর আচরণ করো।’ (সুরা-৪ নিসা, আয়াত: ৩৬)।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করল, ‘হে আল্লাহর রাসুল! কে আমার উত্তম আচরণ পাওয়ার বেশি হকদার?’ তিনি বললেন ‘তোমার মা’; সে বলল, ‘তারপর কে?’ তিনি বললেন, ‘তোমার মা’; সে আবারও বলল, ‘তারপর কে?’ তিনি বললেন, ‘তোমার মা’। সে পুনরায় বলল, ‘এরপর কে?’ তিনি বললেন, ‘তোমার পিতা’। (বুখারি শরিফ ও মুসলিম শরিফ)।
প্রিয় নবী (সা.) আরও এরশাদ করেন, ‘জান্নাত মায়ের পদতলে’। (মুসলিম)
‘মা কথাটি ছোট্ট অতি
কিন্তু জেনো ভাই
ইহার চেয়ে নাম যে মধুর
ত্রিভূবনে নাই।’
‘মায়ের এক ধার দুধের দাম কাটিয়া গায়ের চাম,
পাপোশ বানাইলেও ঋণের শোধ হবে না
এমন দরদী ভবে কেউ হবেনা আমার মা গো’
‘মা’ শব্দটায় আছে মাত্র একটি অক্ষর, কিন্তু তার ব্যাপকতা পরিমাপ করা অসম্ভব। একজন মানুষের জন্মের আগে থেকে মৃত্যু পর্যন্ত পুরোটা সময়ে তার মায়ের প্রভাব বিরাজমান। পরম শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার সম্পর্কের সেই মায়ের প্রতি বিশেষ সম্মান জানিয়ে বিশ্বজুড়ে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব মা দিবস।
মা দিবসের আয়োজনের উদ্দেশ্য প্রত্যেক সন্তানকে মনে করিয়ে দেয়া, মা কোনো সাধারণ মানুষ, কোনো সাধারণ সম্পর্কের নাম নয়। ‘মা’ একটি ভালোবাসার নাম, এক অত্যাবশ্যক দায়িত্বের নাম, এক স্বর্গের নাম, যাকে এক মুহূর্তের জন্যও অবহেলা করা অসম্মানজনক।
প্রতিটি দিন যেন প্রত্যেক মায়ের প্রতি যথাযথ সম্মান ও মনোযোগ দেয়া হয়, সেই সচেতনতা তৈরির জন্যই মূলত এই মা দিবস।
যুক্তরাষ্ট্রে আনা জার্ভিস ও তার মেয়ে আনা মারিয়া রিভস জার্ভিসের উদ্যোগে মা দিবসের সূচনা হয়। ১৯০৮ সালের ১০ই মে যুক্তরাষ্ট্রের ইস্ট ভার্জিনিয়ার গ্রাফইনের গির্জায় আনুষ্ঠানিকভাবে মা দিবস উদযাপন শুরু হয়। পরে ১৯১৪ সালের ৮ মে থেকে মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে মা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে মার্কিন কংগ্রেস।বিশ্ব মা দিবস
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মা দিবসের তারিখটি ভিন্ন। যেমন, নরওয়েতে ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় রবিবার, আয়ারল্যান্ড, নাইজেরিয়া ও যুক্তরাজ্যে মার্চের চতুর্থ রোববার। আর বাংলাদেশে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার।
এমটিনিউজ২৪.কম/এম/আই