শুক্রবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৫, ০৫:৩১:২৬

মাসাল্লাহ, ৬ বছরের আদিবা ৭ মাসেই হাফেজ

মাসাল্লাহ, ৬ বছরের আদিবা ৭ মাসেই হাফেজ

রোকন রাইয়ান : মঙ্গলবার সকাল। হালকা শীত গায়ে মেখে ছুটলাম। সঙ্গে আবৃত্তি শিল্পী ইয়াসিন হায়দার। গুলিস্তান থেকে যাত্রাবাড়ি। নতুন ফ্লাই ওভার হয়েছে। বিল্ডিংয়ের ছাদ ছুঁই ছুঁই করে ছুটছে গাড়ি। যাত্রাবাড়ি থেকে একটু সামনে গেলেই কাজলা। দশ মিনিটেই পৌঁছে গেলাম। অথচ একটা সময় সায়েদাবাদ যাত্রাবাড়ি পাড় হওয়া ছিল যুদ্ধের মতো। রাস্তা পাড় হলাম। দক্ষিণ পাশ ঘেঁষেই মাদরাসার বিল্ডিং। মারকাজুত তাহফিজ ইন্টারন্যাশনাল মাদরাসা। এখানেই হিফজ পড়ছে আদিবা তাসনিম। প্রথম দেখাতেই আকাশ ছোঁল চোখ। এত্তটুকুন বাচ্চা মেয়ে। ঠিকমতো জামা পড়তেও শেখেনি। হিজাবও পরতে চায় না। পাশ থেকে হুজুর জানালেন, মাঝে মাঝে আমার ঘাড়েও উঠে যায়। অথচ ত্রিশ পাড়ার পুরো কুরআন ওর মুখস্ত। আদিবার বয়স সাড়ে ছয়। পুরো কুরআন হিফজ করতে ওর লেগেছে মাত্র ৭ মাস। যেখানে পূর্ণ বয়সের ছেলেদের সর্বনিš§ ২ বছর লেগে যায়। সাধারণত এরকম বিষয়কে আমরা বলি আল্লাহ প্রদত্ত। ইংরেজিতে গড গিফটেড। এই গড গিফটেড শিশুরা মায়ের কোলে থেকেই অসাধারণ প্রতিভা নিয়ে বের হয়। দুনিয়াতে এসে একে একে প্রকাশ পেতে থাকে তাদের চমকপ্রদ ঘটনাবলি। বড়পীর আবদুল কাদির জিলানী রহ. এর ক্ষেত্রে যেমনটি শুনে থাকি। মায়ের পেট থেকেই তিনি ১৮ পাড়া কুরআনের হিফজ সম্পন্ন করে পৃথিবীতে এসেছিলেন। আদিবার সঙ্গে কথোপকথনে বসলাম। ওর লজ্জারাঙা মুখ। তেমন কিছুই বলতে পারল না। গ্রামের নাম মনে নেই। জেলা বরিশাল। অবশ্য বরিশালে থাকে না ওরা। বাবা মা থাকে ঢাকার সানারপাড়। বাবা হাফেজ নাসিরুদ্দিন একজন ব্যবসায়ী। মা হেলেনা আক্তার গৃহিনী। বাবা হাফেজ হওয়ায় মেয়েকে হাফেজ বানানোর আগ্রহ ছিল আগে থেকেই। মাদানি নগরে এক মক্তবে ভর্তির পর টের পান তার প্রতিভার। ও যা শুনে মুহূর্তেই মুখস্ত করে ফেলতে পারে। নিয়ে এলেন মারকাজুত তাহফিজে। শুরু হলো কুরআনুল কারিম হিফজ পড়া। কথা গুছিয়ে বলতে না পারলেও আদিবার ভেতর ভয় নেই। বরং তার গায়ে একটা চপল ও চঞ্চলতা রয়েছে। যা তাকে অনায়াসে সাহসী করে তুলে অপরিচিত মানুষের কাছেও। তাই বড় বড় প্রোগ্রামগুলোতে হলভর্তি মানুষের সামনে তেলাওয়াত করতে বললেও ও কাঁপে না। ভয়ে শঙ্কিত হয় না কণ্ঠ। আমরা তেলাওয়াত করতে বলায় ও নির্দ্বিধায় শুরু করে দিল। থামতে বলার আগ পর্যন্ত চালিয়েই গেল। আদিবা বলল, কুরআন পড়তে ভালো লাগে। ভবিষ্যতে আরো সুন্দর করে পড়তে চাই। আপাতত এটুকুই তার স্বপ্ন। তবে আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতাগুলোতে তার প্রথম স্থান অধিকার করার আকাক্সক্ষা প্রবল। একই মাদরাসার ছাত্রদের বিদেশে প্রথম হওয়া দেখেই নাকি তার ভেতর প্রেরণা জেগেছে। বিস্ময়কন্যা আদিবা তাসনিমের এই অনন্য কৃতিত্বের জন্য গত ২৫ অক্টোবর ইসলামিক ফাউন্ডেশন সংবর্ধনা দেয়। সেখানে ইফার কর্মকর্তাসহ উপস্থিত ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ। তারা আদিবার তেলাওয়াত শুনে অভিভূত হন। আদিবার বিষয়ে মাদরাসার প্রিন্সিপাল হাফেজ ক্বারী নেছার আহমাদ আন নাছিরী জানালেন, এটি আল্লœাহ পাকের এক বিশেষ দান। কারণ তিনি অঙ্গীকার করেছেন তার কুরআন তিনিই হেফাজত করবেন। এজন্যই তিনি খুব সহজে বচ্চাদের মাথায় কুরআন ঢুকিয়ে দেন। হাফেজ রহমতুল্লাহসহ আরো কয়েকজন শিক্ষিকা আদিবার দেখা শোনা করেন। তাদের সবার স্বপ্ন, আদিবা ভবিষ্যতে অনেক সম্মান বয়ে আনবে দেশের জন্য। ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মারকাজুত তাহফিজ ইন্টারন্যাশনাল মাদরাসা। ঢাকার দনিয়ায় হাফেজ নেছার আহমাদ প্রথমত একটি বিল্ডিং ভাড়া নিয়ে মাদরাসা করেছিলেন। তখন পরিসর স্বল্প হলেও এখন আয়তন অবস্থান সবকিছুই বেড়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সুনাম কুড়িয়েছে মাদরাসাটি। সৌদি আরব, ইরান, দুবাই, জর্ডান, মিশরসহ বিশ্বের আরো বেশ কয়েকটি দেশে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক হিফজ প্রতিযোগিতায় তার ছাত্ররা প্রথম স্থান অর্জন করেছে। এছাড়াও দেশে অনুষ্ঠিত সব ধরনের কুরআন প্রতিযোগিতায় তার ছাত্ররাই শীর্ষে।-আমাদের সময় ২৭ নভেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ/ রাসেল/মাহমুদ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে