মুফতি মুহাম্মদ আল আমিন: হাশরের ময়দানে সব মানুষের বিচার হবে। সবার জন্য শেষ ও চূড়ান্ত বিচার হবে সেখানে। সেদিন অবস্থা এতটাই ভয়াবহ হবে যে, সূর্য মানুষের মাথার মাত্র আধা হাত ওপরে আসবে। আর পায়ের নিচের মাটি হবে জ্বলন্ত তামার।
গরমের তীব্রতায় মানুষের মাথার মগজ টগবগ করবে, যেমন চুলায় হাঁড়ির পানি টগবগ করে। এই কঠিন এবং ভয়াবহ অবস্থায় মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় সাত প্রকারের বান্দাকে নিজের আরশের ছায়ায় আশ্রয় দেবেন।
জ্বলন্ত অগ্নিকু-ের মাঝে রহমতের শীতল চাদর বিছিয়ে দেবেন। দাউ দাউ করা দাবানলের গ্রাস থেকে প্রিয় বান্দাদের রক্ষা করবেন। সেই সৌভাগ্যবান সাত শ্রেণির ব্যক্তি সম্পর্কে হাদিসে বর্ণনা এসেছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রসুল (সা.) ঘোষণা করেন, সাত প্রকার মানুষকে আল্লাহতায়ালা তাঁর (আরশের) ছায়ায় স্থান দেবেন, যেদিন তাঁর ছায়া ছাড়া অন্য কোনো ছায়া থাকবে না। ১. ন্যায়পরায়ণ শাসক। অর্থাৎ এমন শাসক যিনি সততা, সত্য ও ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে দেশ পরিচালনা করেছেন। কারও ওপর জুলুম করেননি। নিজে ক্ষমতার ভুল ব্যবহার বা অপব্যবহার করেননি। কারও হক নষ্ট করেননি। আল্লাহর দেওয়া আমানত জনগণের কাছে যথাযথভাবে পৌঁছিয়েছেন। স্বেচ্ছাচারিতা, স্বজনপ্রীতি বা দলপ্রীতি করেননি। ২. ওই যুবক, যার যৌবন কেটেছে আল্লাহর ইবাদতে। ৩. এমন মানুষ যার অন্তর সর্বদা মসজিদের সঙ্গে লেগে থাকে। অর্থাৎ আল্লাহর ইবাদতে এমন মনোযোগী যে, এক ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার পর পরবর্তী ওয়াক্তের জন্য অপেক্ষায় থাকে। আল্লাহকে আবারও সিজদা করার জন্য উদ্্গ্রীব থাকে। ৪. এমন দুই ব্যক্তি যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একে অন্যকে ভালোবাসে। মুহব্বত করে। তাদের সম্পর্কের মাঝে দুনিয়াবি কোনো স্বার্থ থাকে না। আল্লাহর জন্যই পরস্পর ভালোবাসা পোষণ করে এবং এর ভিত্তিতেই তারা একত্রিত হয়। এরই কারণে পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়। ৫. এমন ব্যক্তি যাকে কোনো সুন্দরী ও বংশমর্যাদাপূর্ণ নারী খারাপ কাজ করার জন্য তার প্রতি আহ্বান করে; কিন্তু সে বলে দেয় যে, আমি তো আল্লাহকে ভয় করি। অর্থাৎ সুযোগ থাকা সত্ত্বেও যে পুরুষ একমাত্র আল্লাহর ভয়ে খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকে। ৬. এমন ব্যক্তি যে গোপনে দান করে এমনভাবে যে, তার বাম হাতও জানতে পারে না যে, ডান হাত কী দান করল। অর্থাৎ সম্পূর্ণ গোপনীয়তার সঙ্গে একমাত্র আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য দান-অনুদান দেয়। ৭. যে ব্যক্তি নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে, আর তার চোখ থেকে অশ্রু প্রবাহিত হয় (বুখারি)। প্রিয় পাঠক! এখানে একই ব্যক্তির মাঝে এই সাতটি গুণ থাকতে হবে এমনটি জরুরি নয়। বরং এই সাত প্রকারের কোনো এক প্রকারের মধ্যে যদি আমি-আপনি-আমরা শরিক হতে পারি, শামিল হতে পারি, তাহলেই আমাদের জীবন সফল। আর যদি কারও মাঝে এ সাতটি বিশেষ গুণের সবকটি বা কয়েকটি গুণ একসঙ্গে পাওয়া যায় তাহলে তো সে মহাসৌভাগ্যের মহাযাত্রী। জীবন তার সার্থক। জনম তার চিরসফল। আমরাও যেন আল্লাহর বিশেষ মেহমান হিসেবে সৌভাগ্যবান হই। প্রত্যেক মুমিনের হৃদয়ে এই আশা, আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন যেন জাগ্রত হয়, লালিত হয় চিরদিন। আল্লাহ যেন আমাদের সেই সৌভাগ্য দান করেন। তাঁর মহান সিংহাসন ও আরশের নিচে একটু ছায়া দান করেন।
লেখক : খতিব, সমিতি বাজার মসজিদ, নাখালপাড়া, ঢাকা