১। ফেরেশতারা জান্নাতীকে জান্নাতে ভ্রমণ করাবে
হযরত যহ্হাক রা. বলেন মুমিন লোক জান্নাতে প্রবেশ করার পূর্বে একজন ফেরেশতা প্রবেশ করবে। এই ফেরেশতা তাকে জান্নাতের অলিগলি ভ্রমণ করাবে। তাকে বলা হবে তুমি যত দেখতে পার দেখ। জান্নাতী তখন বলবে অধিকাংশ মহল সোনা -রোপা ও একই রকম দেখতে পাচ্ছি। ফেরেশতারা বলবে এ সব আপনার জন্যই তো। অতঃপর জান্নাতী যখন এ সমস্ত মহলের কাছে যাবে তখন তাকে প্রত্যেক স্থানে এবং প্রতিটি দরজাতেই স্বাগত জানানো হবে। তাঁকে বলা হবে আমরা শুধু আপনার জন্যই। ফেরেশতা বলবে সামনে চলুন । অতঃপর বলা হবে এখন আপনি কি দেখতেছেন ? তখন জান্নাতী বলবেন অধিকাংশ অবকাশ কেন্দ্র তাঁবুর আকৃতিতে দেখতে পাচ্ছি। সবগুলোই একি রকম মনে হচ্ছে। তখন ফেরেশতারা বলবে সব কিছুই আপনার জন্য। জান্নাতী এ গুলোর কাছে গেলে এখানেও তাকে স্বাগত জানানো হবে এবং বলা হবে আমরা শুধু আপনার জন্য।
২। জান্নাতীরা দাড়ি-গোফবিহীন চুল বিহীন সুরমা পরিহিত হবে
হযরত মুয়াজ রা. নবী কারীম সা. কে বলতে শুনেছেন- জান্নাতীরা চুল বিহীন অবস্থায় জান্নাতে যাবেন তাদের দাড়িও থাকবেনা। চোখের মনি ও সুরমা লাগানোর স্থানে সুরমা মিশ্রিত থাকবে। তারা হবে ত্রিশ বছর বয়সের।
উল্লেখ্য, নারী পুরুষের কেবল মাথার চুল থাকবে। শরীরের অন্যান্য স্থানে কোন প্রকার পশম থাকবেনা।
জান্নাতে যাবার অনুমতি পেয়ে ফুর্তিতে জ্ঞান-বুদ্বি লোপ পাবার উপক্রম হবে সবার
হযরত ইবনে আব্বাসের খাদেম হযরত কাসীর ইবনে কাসীর রা. বলেন, প্রত্যেক জান্নাতী লোকদের জন্য একজন ফেরেশতা নির্দিষ্ট করা হবে। জান্নাতীকে যখন সুসংবাদ প্রদান করা হবে এবং বলা হবে আপনার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে গেছে তখন এক ফেরেশতা জান্নাতী লোকের বুকে হাত রাখবেন। এর ফলে খুশিতে জান্নাতীর জ্ঞান বুদ্বি লোপ পাওয়ার উপক্রম হবে।
৩। জান্নাতে প্রবেশের পর ঘোষণা এবং নেয়ামতে বর্ণনা
হযরত আবু সাইদ খুদরী রা. বলেন নবী কারীম সা. এরশাদ করেন, এক আহব্বান কারী আহব্বান করে বলবে যে, ইহা তোমাদের নিমিত্তে সিদ্বান্ত করা হয়েছে যে, তোমরা সুস্থ থাকবে, কখনো অসুস্থ হবেনা। তোমাদের জন্য ইহাও সিদ্ধান্ত হয়েছে যে তোমরা অনন্ত কাল যুবক থাকবে কখনো বৃদ্ধ হবে না। ইহাও সিদ্বান্ত হয়ে গেছে যে, তোমরা সব সময় নেয়ামতের মধ্যে ডুবে থাকবে কখনো অভাব অনটন ভোগ করবেন না। এ ব্যপারে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ ফরমান, জান্নাতীদের কে ডেকে বলা হবে এ জান্নাত তোমাদের দেওয়া হয়েছে তোমাদের আমলের বিনিময়ে । [মুসলিম, তিরমিযি]
হযরত সুয়াইব রা. হতে বর্ণিত নবী কারীম সা. এরশাদ ফরমান যখন জান্নাতীরা জান্নাতে আর জাহান্নার্মীা জাহান্নামে চলে যাবে তখন একজন ঘোষক ঘোষণা করে বলবেন, ওহে জান্নাতীরা আল্লাহ পাকের নিকট তোমাদের জন্য একটি প্রতিশ্রুতি রয়েছে। তারা জিজ্ঞাসা করবে প্রতিশ্রতি কি? আল্লাহ পাক কি আমাদের নেক গুলো ওজন করেননি, আমাদের চেহারা কি নূরান্বিত করেননি। আমাদের কি জান্নাতে প্রবেশ করান নি। আমাদের কি জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেননি। তখন আল্লাহ স্বীয় পর্দা উঠিয়ে দিবেন আর জান্নাতীরা আল্লাহর দিদার লাভ করবেন। আল্লাহর শপথ আল্লাহ পাকের দিদারের চেয়ে জান্নাতীদের নিকট কোনবস্তুই ততপ্রিয়তম হবেনা, যা তাদের কে জান্নাতে দান করা হয়েছে। [মুসলিম]
হযরত আবু তামিমাহ রা. বলেন- হযরত আবু মুসা আশয়ারী রা. বসরার মিম্বরে ভাষণ দেওয়ার সময় বলেছিলেন কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা জান্নাতীদের নিকট একজন ফেরেশতা প্রেরণ করবেন। ফেরেশতারা তাকে জিজ্ঞাস করবেন ওহে জান্নাতীরা আল্লাহ পাক তোমাদের যে ওয়াদা করেছিলেন তাকি পূর্ণ করেছেন? তখন তারা চিন্তা করে অলংকারাদি, পোষাক-পরিচ্ছদ, ঝর্ণাসমূহ, পুত পবিত্র স্ত্রীগণ দেখে বলবে হ্যাঁ আল্লাহ পাক আমাদের সাথে যা কিছু ওয়াদা করেছিলেন তাতো সবই তিনি পূর্ণ করেছেন। সে ফেরেশতা এ ভাবে তিনবার বলবে। জান্নাতীরা পুনরায় ভালো করে দেখে নিবে যে, যে সমস্ত বস্তুর ওয়াদা করা হয়েছিলো তা থেকে কোন জিনিসই কম হয়নি। জান্নাতীরা আবার বলবেন হ্যাঁ আল্লাহ আমাদের কে যে গুলোর ওয়াদা দিয়েছিলেন তা সবই পূর্ণ করেছেন। ফেরেশতারা তখন বলবেন একটি নেয়ামত এখনো অবশিষ্ট রয়ে গেছে।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ ফরমান” যারা সৎকর্ম করেছে তাদের জন্য রয়েছে কল্যাণ এবং তার চেয়েও বেশী। [সুরা ইউনুস:২৬]
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. বলেন নবী কারীম সা.এরশাদ ফরমান, আল্লাহপাক জান্নাতীদের বলবেন ওহে জান্নাতীরা তারা আরয করবে আমরা হাজির ইয়া রব! আল্লাহ তাআলা জিজ্ঞেস করবেন তোমরা কি সন্তুষ্ট হয়েছে? তারা বলবে ইয়া আল্লাহ! আমরা খুবই খুশি হয়েছি। আপনি যেহেতু অতি দয়া করে আমাদের কে যা কিছু দান করলেন তা সৃষ্টিকুলের অন্য কাউকে দান করেন নি। আল্লাহ তাআলা তখন বলবেন, আমি তোমাদের কে তার চেয়েও অধিক উওম নিয়ামত দান করতে চাই। জান্নাতীরা বলবেন তার চেয়েও উত্তম নিয়ামত কি? আল্লাহ তাআলা বলবেন আমি তোমাদের উপর সন্তুষ্টি নাযিল করব। এখন থেকে ক্রোধান্বিত হবো না। [বুখারী শরীফ হাঃ নং-৪৫৪৯]