ইসলাম ডেস্ক: আমাদের জীবনের সকল কর্মকাণ্ড আল্লাহর জন্যই। আমাদের ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, ব্যবসায়ীক জীবন, অর্থনৈতিক জীবন, সাংস্কৃতিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন তথা জীবনের সকল ক্ষেত্রে সকল প্রকার কাজকর্ম সব কিছুই আল্লাহর জন্য। যদি এই নিয়তই মানুষের থাকে তবে সকল কাজ মানুষের সহজ হয়ে যাবে, প্রতি শ্বাস-প্রশ্বাস মানুষের ইবাদতে পরিণত হবে। আল্লাহ বলেন-
ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়ায়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন।
অর্থ : আমার নামাজ, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মরণ সকল কিছুই আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য।
কেননা মানুষ আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় ও শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। আর শয়তান আল্লাহর দুশমন। আল্লাহ কুরআনে দুই ধরনের শয়তানের কথা উল্লেখ করেছেন। এক শ্রেণির শয়তান হচ্ছে মানুষ; আর এক শ্রেণির শয়তান হচ্ছে জ্বীন (সুরা নাস)। তাইতো আমাদের ভালো ও মন্দের জন্য এই দুই শ্রেণির শয়তানই দায়ী। আমরা শয়তানের সকল প্রকার কুমন্ত্রণা ও খারাবি থেকে রক্ষা পেতে আল্লাহর সাহায্য প্রত্যাশী।
তাই তো আল্লাহ তাআলা মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য, প্রিয় মানুষকে আরও প্রিয় করে নেয়ার জন্য বিভিন্ন প্রকার আপদ-বিপদ তথা বালা-মুসিবতের মাধ্যমে পরীক্ষা করে থাকেন।
উপরন্তু আল্লাহ তাআলা ও তাঁর প্রিয় হাবীব রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে তার কাছে আপদ-বিপদ, বালা-মুসিবত থেকে পরিত্রাণ পেতে তথা মনের নেক মাকসুদ হাসিলে আল্লাহর দরবারে কিভাবে ধরনা দিতে হবে তা কুরআন ও হাদীসে উল্লেখ করেছেন-
কুরআন ও হাদীসের আমলগুলি এই-
১. আল্লাহ বলেন-
উচ্চারণ : ‘রাব্বানা ওয়া লা- তাহ্মিল আ’লাইনা- ইসরান কামা- হামালতাহু আ’লাল্লাজিনা মিন ক্বাবলিনা- রাব্বানা ওয়া লা- তাহ্মিলনা- মা- লা- ত্বা-ক্বাতা লানা- বিহি- ওয়াআ’ফু আন্না- ওয়াগফিরলানা- ওয়ারহামনা- আন্তা মাওলা-না- ফানছুরনা- আ’লাল কাওমিল কা-ফিরি-না’। (সূরা বাকারা আয়াত-২৮৬)।
অর্থ : হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের ওপর ভারী ও কঠিন কাজের বোঝা অর্পণ করো না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর অর্পণ করেছিলে। হে আমাদের প্রভু! আমাদের উপর এমন কঠিন দায়িত্ব দিও না, যা সম্পাদন করার শক্তি আমাদের নেই। আমাদের পাপ মোচন করো, আমাদের ক্ষমা করো এবং আমাদের প্রতি দয়া করো। তুমি আমাদের প্রভু! সুতরাং অবিশ্বাসী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদের সাহায্য করো।
উৎস : হযরত ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি রাতের বেলায় সূরা বাক্বারার শেষ দুই আয়াত পাঠ করবে তা তার জন্য যথেষ্ট। (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)।
২. আল্লাহ তাআলা অন্যত্র বলেছেন-
উচ্চারণ : ‘রাব্বানা- আতিনা মিল্লাদুনকা রাহমাতাও ওয়া হাইয়্যিই লানা- মিন আমরিনা রাশাদা। (সূরা কাহ্ফ : আয়াত ১০)।
অর্থ : হে আমদের রব! আমাদেরকে আপনার নিকট থেকে রহমাত দান করুন এবং আমাদের জন্য আমাদের কাজ সঠিকভাবে সম্পাদন করার তাওফিক দান করুন।
উৎস : তাফসিরে ইবনে কাছীরে এই আয়াতের ব্যাখ্যা এসেছে-
আছহাবে কাহাফের গুহাবাসীগণ যখন বাদশার অত্যাচার নির্যাতনে ঘর-বাড়ি, সমাজ ছেড়ে গুহায় আশ্রয় নিচ্ছিলেন তখন যেন তারা আল্লাহর হুকুম সঠিকভাবে পালন করতে পারেন সে কারণে উক্ত দোয়া করেছিলেন।
৩. তাছাড়া বিপদে মুসিবতে পড়লে আমরা এই আমলটিও সব সময় করতে পারি। আল্লাহ বলেন-
ইন্না-লিল্লা-হি ওয়া ইন্না- ইলাইহি রা-জিউন। (সূরা বাক্বারা : আয়াত ১৫৬)।
অর্থ : আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমাদের সবাইকে তাঁর সান্নিধ্যে ফিরে যেতে হবে।
এ দোয়াটি পাঠ করলে একদিকে যেমন অসীম সওয়াব পাওয়া যায় আবার অর্থের দিকে খেয়াল করলে বিপদের সময় আন্তরিক প্রশান্তি লাভ করা যায় এবং তা থেকে উত্তরণ সহজ হয়।
সুতরাং মানুষ তার মনের একান্ত সৎ কামনা বাসনা, চাওয়া-পাওয়া তথা কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য আল্লাহর শিখানো ভাষায় ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র জবান মুবারকের হাদীসের বর্ণনায় আমল করলে আল্লাহ তাআলা মানুষের সকল প্রকার নেক মাকসেদ পূরণ করতে পারেন।