বৃহস্পতিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৫:০৩:২৪

মিথ্যাবাদীর জন্য অপেক্ষা করছে ভয়ঙ্কর শাস্তি

মিথ্যাবাদীর জন্য অপেক্ষা করছে ভয়ঙ্কর শাস্তি

ইসলাম ডেস্ক: মুনাফিকরা মানুষের সামনে এক ধরনের এবং পেছনে আরেক ধরনের আচরণ করে থাকে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, ‘চারটি স্বভাব এমন যার সবগুলো কারো মধ্যে থাকলে সে পুরোদস্তুর মুনাফিক, আর যার মধ্যে তার কোনো একটি থাকবে, সে যতক্ষণ তা পরিত্যাগ না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফিকির একটি স্বভাবই থাকবে। স্বভাব চারটি হচ্ছে- যখন তার কাছে আমানত রাখা হয় সে তাতে খিয়ানত করে, যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, যখন কোনো ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করে এবং যখন কারো সাথে ঝগড়া করে গালাগালি করে’ (বুখারি ও মুসলিম)। অনেকে শুধু নগদ টাকাপয়সা গচ্ছিত রাখাকেই আমানত ভাবেন। কিন্তু আমানতের গণ্ডি এত সীমিত নয়, বরং এর পরিধি ব্যাপক ও বিস্তৃত। মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রের সাথে আমানত অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তাই সমাজের প্রত্যেকেই একেকজন আমানতদার। রাষ্ট্র পরিচালনা, ভোট প্রদান, সাংবাদিকতা, অফিসিয়াল কাজকর্ম, শিক্ষকতা, ব্যবসা-বাণিজ্য, শ্রম-মজুরি সবই আমানত। এগুলো যথাযথভাবে পালন না করা খিয়ানতের অন্তর্ভুক্ত। তা ছাড়া ইসলামি জীবনপদ্ধতির সব করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়ের সাথে আমানতদারির সম্পর্ক রয়েছে। এমনকি প্রত্যেক মানুষের শরীর ও প্রাণ আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের কাছে আমানত। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে আমানত রক্ষার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের আদেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা আমানত তার মালিককে ফেরত দেবে’ (সূরা নিসা, আয়াত-৫৮)। আমানতদারির পুরস্কার ঘোষণা করে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যারা আমানত রক্ষা করে তারা ফেরদাউস নামক জান্নাতের অধিকারী হবে, সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে’ (সূরা মুমিনুন, আয়াত-১১)। মিথ্যা বলা মারাত্মক অপরাধ : মিথ্যা বলার চেয়ে মারাত্মক অপরাধ আর নেই। রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা এবং বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ সা: মিথ্যাবাদীকে প্রচণ্ড ঘৃণা করেন। কুরআন ও হাদিসে মিথ্যাবাদীর ভয়ানক পরিণতির কথা বলা হয়েছে। একটি মিথ্যাকে সত্য বলে প্রমাণ করার জন্য হাজারও ছলচাতুরি এবং আরো অনেক মিথ্যা বলার প্রয়োজন হয়। এরপরও মিথ্যা কখনো সত্য হয় না। মিথ্যা মিথ্যাই থেকে যায়। যারা মিথ্যাচার করে বেড়ায় তারা সংসারে, সমাজে এবং দেশে মহাদুর্যোগ সৃষ্টি করতে পারে। মিথ্যাবাদীর পাল্লায় পড়ে অনেক নিরীহ মানুষ প্রতারিত এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মিথ্যাবাদীর ওপর আল্লাহ তায়ালার অভিশাপ বর্ষিত হয়। মিথ্যা বলা সব পাপাচারের মূল। যে মিথ্যাকে বর্জন করে সে কোনোরূপ পাপই করতে পারে না। মিথ্যাই সব ধরনের অপরাধে উৎসাহ-প্রশ্রয় দিয়ে থাকে। মিথ্যা বলা মুনাফিকের লক্ষণ। মিথ্যা বলে বেচা-কেনাকারীর সাথে বিচার দিবসে আল্লাহ কথা বলবেন না। হাসি-রসিকতা কিংবা স্বাভাবিক অবস্থাÑ মিথ্যা সর্বাবস্থায়ই হারাম ও অবৈধ। শিশুদের সাথে খেলাধুলাতেও মিথ্যা থেকে বিরত থাকা জরুরি। কারণ এটা শিশুদের অন্তরে গেঁথে যায়। রাসূলুল্লাহ সা: মিথ্যা বলা কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘মিথ্যা তো তারাই বানায় যারা আল্লাহর নিদর্শনসমূহের ওপর ঈমান রাখে না। বস্তুত তারাই মিথ্যাবাদী’ (সূরা নাহল, আয়াত-১০৫)। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তির মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শোনে তাই বলে বেড়ায়’ (মুসলিম)। মিথ্যা বলার পরিণাম খুবই ধ্বংসাত্মক। এর জন্য দুনিয়াতে রয়েছে ধ্বংস আর আখিরাতে রয়েছে অপমান ও লাঞ্ছনা। মিথ্যার কারণে অন্তরে কপটতার সৃষ্টি হয়। মিথ্যা পাপাচার ও জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। মিথ্যাবাদীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয় না। মিথ্যার কারণে দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জগতেই চেহারা বিবর্ণ ও মলিন হয়ে যায়। বিচার দিবসে মিথ্যাবাদীর চোয়াল চিরে গর্দান পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হবে। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘ধ্বংস তার জন্য যে লোক হাসানোর জন্য কথা বলে এবং এতে সে মিথ্যার আশ্রয় নেয়। ধ্বংস তার জন্য, ধ্বংস তার জন্য’ (তিরমিজি ও আবু দাউদ)। ১০ই ডিসেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/জুবায়ের/রাসেল

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে