শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৪:৩৯:৩০

আল্লাহর কাছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট যিনি

আল্লাহর কাছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট যিনি

ইসলাম ডেস্ক: ধর্মীয় জীবনযাপনে মানুষকে মানুষ হিসেবে চলার আল্লাহর নির্দেশিত যে সোজা-সরল পথ, মনুষ্যত্ব বিকাশের যে সুন্দর পন্থা, তা চেনা একমাত্র জ্ঞানের সাহায্যেই সম্ভব। অজ্ঞানতা মানুষকে অন্ধ পশুজীবন-যাপনে বাধ্য করে। মানুষ জ্ঞানের অভাবে পশুত্বের নিম্নস্তরে নেমে যায়। মানুষ যে আল্লাহ তায়ালার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, তাও ভুলে যায়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি মানুষকে পয়দা করেছি সর্বোত্তম কাঠামোয়। তারপর তাকে উল্টো ফিরিয়ে নিচতমদেরও নিচে পৌঁছিয়ে দিয়েছি’ (সূরা আততীন : ৪-৫)। জ্ঞানের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যে ব্যক্তি জ্ঞান রাখে আর যে জ্ঞান রাখে না, এ দুই ব্যক্তি কি সমান হতে পারে? (কখনো না)’ (সূরা জুমার : ৯)। কুরআন-হাদিসের প্রকৃত জ্ঞানের বলেই মানুষ চরিত্রের শ্রেষ্ঠ গুণাবলির অধিকারী হতে পারে। আল্লাহ তায়ালা কুরআন শরিফের যে আয়াতটি প্রথম নাজিল করেন সেটি হলো : ‘পড়ো তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্তপিণ্ড থেকে।’ অবোধ মানুষকে অন্যান্য জীব থেকে পৃথক করার জন্য আল্লাহ তায়ালা পড়ার মাধ্যমে জ্ঞানের অনুশীলনীর আদেশ দিলেন। সূরা আলাকে এর পরই আল্লাহ বলেন : ‘পাঠ করো তোমার প্রতিপালক সম্মানিত, যিনি কলম দিয়ে (লিখতে) শিক্ষা দিয়েছেন।’ এতেই বোঝা যাবে আল্লাহ মানুষকে মানুষ করার জন্য তার সুন্দর জীবন ইহকাল ও পরকালে সুন্দরতর করার জন্য লেখাপড়ার মাধ্যমে জ্ঞানের অনুশীলনীর প্রতি কত জোর দিয়েছেন। হজরত রাসূলে করিম সা: বলেন : ‘নরনারীর ওপর জ্ঞান অর্জন করা ফরজ বা অবশ্যই কর্তব্য।’ হজরত রাসূলে করিম সা: বলেছেন : ‘সুদূর চীন দেশে গিয়ে হলেও জ্ঞান আহরণ বা জ্ঞান অর্জন করো।’ অর্থাৎ নিজ এলাকাতে জ্ঞান অর্জন করার কোনো সুযোগ-সুবিধা না থাকলে দূরে গিয়ে হলেও জ্ঞান অর্জন করতে হবে। রাসূলুল্লাহ সা: জ্ঞানের অনুশীলনীর জন্য তাঁর প্রিয় উম্মতকে তাকিদ দিয়েছেন এবং উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেছেন : ‘দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত জ্ঞান অন্বেষণ করো।’ তিনি আরো বলেন : ‘জ্ঞান সাধনার জন্য যে ঘরের বাহির হয়, সে আল্লাহর পথে চলে।’ আল্লাহ তায়ালাও এদের ব্যাপারে বলেন : ‘যারা আমার অবতীর্ণ উজ্জ্বল শিক্ষাবলি ও বিধানগুলো গোপন করে, অথচ সমগ্র মানবতাকে পথের সন্ধান দেয়ার জন্য আমি সেগুলো আমার কিতাবে বর্ণনা করে দিয়েছি; নিশ্চিতভাবে জেনে রাখো, আল্লাহ তাদের ওপর অভিশাপ বর্ষণ করেন এবং সব অভিশাপ বর্ষণকারীরাও তাদের ওপর অভিশাপ বর্ষণ করে।’ (সূরা বাকারা : ১৫৯)। কুরআন-হাদিসের জ্ঞান অর্জন করার জন্য যেহেতু কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়নি, আমরা যারা শিক্ষার শুরুতে বা যুবক বয়সে জ্ঞান অর্জন করতে বা কুরআন পড়তে পারিনি, বৃদ্ধ বয়সে হলেও আমাদের কুরআন শিক্ষার চেষ্টা করা উচিত। আল্লাহ পাকের দেয়া সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত আমাদের জ্ঞান ও আকল আল্লাহ তায়ালার ওহি জ্ঞানের মাধ্যমে পরিচালিত করার জন্যই মানুষকে এ দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। এই শ্রেষ্ঠ নিয়ামত জ্ঞান ও আকল জিন ও ইনসান ছাড়া অন্য কোনো প্রাণী বা সৃষ্টিকে দেয়া হয়নি। তাই আল্লাহ পাক কিয়ামতের কঠিন দিনে এই জ্ঞান ও আকলের হিসাব অবশ্যই নেবেন। আরো জিজ্ঞাসা করবেন, এই জ্ঞান ও আকল আল্লাহর দেয়া বিধান মতো পরিচালিত হয়েছে কি না? সেই কঠিন দিনে আমরা যদি সঠিক জবাব না দিতে পারি, তাহলে জাহান্নাম ছাড়া আমাদের ভাগ্যে আর কিছুই জুটবে কি না মহান আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন। সম্মানিত পাঠক ভাই-বোনদের উদ্দেশে সূরা আনফালের ২২ নম্বর আয়াতটি তুলে ধরছি। আল্লাহ বলেন : ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে নিকৃষ্টতম জন্তু হচ্ছে সেইসব বধির ও বোবা লোক, যারা নিজেদের জ্ঞানবুদ্ধিকে কাজে লাগায় না।’ আল্লাহ পাক আরো বলেন : ‘আর এটি একটি অকাট্য সত্য যে, বহু জিন ও মানুষ এমন আছে যাদেরকে আমি জাহান্নামের জন্যই সৃষ্টি করেছি। তাদের হৃদয় আছে, কিন্তু তা দিয়ে তারা উপলব্ধি করে না। তাদের চোখ আছে, কিন্তু তা দিয়ে তারা দেখে না। তাদের কান আছে, কিন্তু তা দিয়ে তারা শোনে না। তারা পশুর মতো, বরং তাদের চেয়েও অধম। তারা চরম গাফিলতির মধ্যে হারিয়ে গেছে।’ (সূরা -আল আরাফ : ১৭৯)। কুরআন-হাদিসের জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে তাকওয়ার গুণ অর্জন করতে হবে। আল্লাহ পাক বলেন : ‘তোমাদের মধ্যে তাকওয়ার অধিকারী ব্যক্তিই আল্লাহর কাছে বেশি মর্যাদাসম্পন্ন।’ (আল হুজুরাত : ১৩)। ১২ই ডিসেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/জুবায়ের/রাসেল

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে